আমেরিকায় বদলাচ্ছে অভিবাসনের গতিপথ

গত মাসে টেক্সাসে একটি ট্রেলারের ভেতর শ্বাসরোধ হয়ে মারা যান ৫৩ অভিবাসনপ্রত্যাশী। এটি আরও দৃঢ়ভাবে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, মানুষজন অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে কী পরিমাণ ঝুঁকি নিচ্ছে। ওই ঘটনায় মৃতদের মধ্যে ২৭ জনই ছিল মেক্সিকান নাগরিক, বাকিরা মধ্য আমেরিকার বিভিন্ন দেশের।

আমেরিকাজুড়ে এ ধরনের অভিবাসনপ্রত্যাশীরা পুরোনোর পাশাপাশি নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে। হাইতিয়ানরা মেক্সিকো থেকে সান্তিয়াগো পর্যন্ত নানা শহরে জমায়েত হচ্ছে। ভেনেজুয়েলানরা লিমা ও বোগোতায় বাইকে চড়ে খাবার সরবরাহ করছে। সম্প্রতি দেড় লাখের বেশি নিকারাগুয়ান নাগরিক কোস্টারিকায় আশ্রয় চেয়েছে। গত বছর একই সংখ্যক কিউবান তাদের দ্বীপ ছেড়েছে।

একসময় ডারিয়েন গ্যাপের ভয়ংকর জঙ্গল দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার মধ্যে একটি দুর্গম বাধা ছিল। কিন্তু পানামা সরকার বলছে, গত বছর ১ লাখ ৩০ হাজরের বেশি মানুষ এই জঙ্গল পার হয়েছে।

এমন পরিস্থিতির জন্য আংশিকভাবে করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাব এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রের সংখ্যা বাড়তে থাকাকে দায়ী করা যায়। নিম্নমুখী জন্মহার ও দ্রুততর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অর্থ, বিগত কয়েক বছর মেক্সিকানদের উত্তরমুখী হওয়ার তুলনায় ঘরে ফেরার হার বেশি ছিল। কিন্তু এখন দেশটিতে করোনাজনিত মন্দা আর সন্ত্রাসী সহিংসতার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান শ্রমবাজার আবারও অনেককে দেশত্যাগে প্ররোচিত করছে। অনেকটা একই কথা বলা যায় নর্দার্ন ট্রায়াঙ্গেলের গুয়েতেমালা, হন্ডুরাস ও এল সালভাদরের ক্ষেত্রেও।

মহামারির সময় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রক্রিয়াকরণ বা গ্রেফতারের পরিবর্তে উল্টো দিকে ঠেলে দেওয়ার যে ব্যবস্থা করেছিল, তা মেক্সিকানদের একাধিকবার সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করতে উদ্বুদ্ধ করে। এরপরও যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস ও সীমান্ত সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ গত এপ্রিল-মে মাসে যাদের মুখোমুখি হয়েছে, তাদের অর্ধেকই মেক্সিকো কিংবা নর্দার্ন ট্রায়াঙ্গেলের বাসিন্দা ছিলেন না।

অর্থনৈতিক দুর্দশা ও স্বৈরশাসনের হাত থেকে বাঁচতে ২০১৫ সাল থেকে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন প্রায় ৬০ লাখ ভেনেজুয়েলান, বেশিরভাগই গেছেন দক্ষিণ আমেরিকায়। ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি ধীরে ধীরে গতিশীল হওয়ায় স্বদেশে ফিরতে শুরু করেছেন কেউ কেউ। তবে এখন স্বৈরশাসনের হাত থেকে মুক্তি পেতে দেশ ছাড়ছে কিউবা ও নিকারাগুয়ার লোকজন। এছাড়া, এক দশক আগে যেসব হাইতিয়ান দক্ষিণ আমেরিকায় পালিয়েছিলেন, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে মহামারি।

এসব বিষয় আমেরিকান সরকারগুলোর জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য তারা নতুন চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। গত মাসে লস অ্যাঞ্জেলসের সম্মেলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা হয়েছে। বৈধ অভিবাসনের পরিসর বৃদ্ধি এবং আশ্রয় পদ্ধতি পুনর্গঠনে সম্মত হয়েছে এ অঞ্চলের ২১টি দেশ।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy