আমেরিকার হামলার জবাবে পাল্টা হুংকার ইরানের, আকাশসীমা বন্ধ করল ইসরায়েল

মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি এখন চূড়ান্ত উত্তেজনাপূর্ণ। ইরানের তিনটি পরমাণু কেন্দ্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অতর্কিত হামলার পর তেহরান থেকে এসেছে কঠোর প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি। ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ঘোষণা করেছে, এখন থেকে এই অঞ্চলে অবস্থানরত প্রতিটি মার্কিন নাগরিক ও সেনাসদস্য ইরানের হামলার বৈধ লক্ষ্যবস্তু। এই চরম ঘোষণার পরপরই ইসরায়েল নিজেদের আকাশসীমা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে এবং সেনাবাহিনীতে জারি করেছে সর্বোচ্চ সতর্কতা।

বার্তাসংস্থা আনাদোলু এবং সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন হামলার পর ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন রবিবার এক ঘোষণায় এই কড়া বার্তা দিয়েছে। এই মন্তব্যের কয়েক দিন আগেই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে সামরিকভাবে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তারা এমন ক্ষতির মুখে পড়বে যা কখনোই পূরণ করা সম্ভব হবে না।”

খামেনির এই হুঁশিয়ারির কিছুক্ষণ পরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে একযোগে ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায়—ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান—সামরিক হামলা চালিয়েছে। ট্রাম্প তার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ অ্যাকাউন্টে লেখেন, “আমাদের এই সফল অভিযান সম্পন্ন হয়েছে। ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে আমরা সফল হামলা চালিয়েছি।”

ইরানের প্রতিশোধের ঘোষণার মুখে ইসরায়েল তাৎক্ষণিকভাবে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা জারি করেছে। ইসরায়েলি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী, “সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে ইসরায়েলের আকাশসীমা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আগমন ও বহির্গমন উভয়ের জন্যই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।”

আকাশসীমা বন্ধ হলেও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, মিশর ও জর্ডানের সঙ্গে স্থল সীমান্ত পারাপার চালু থাকবে। সামরিক প্রস্তুতি হিসেবে ইসরায়েল সেনাবাহিনী শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করেছে, জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এবং অপ্রয়োজনীয় সব ধরনের কাজ বন্ধ ঘোষণা করেছে। দেশটি এখন ইরানের সম্ভাব্য পাল্টা হামলার জন্য পূর্ণ প্রস্তুত।

মার্কিন হামলা, ইরানের প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি এবং ইসরায়েলের ব্যাপক প্রস্তুতির কারণে মধ্যপ্রাচ্যে একটি ভয়াবহ সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে। এই পরিস্থিতি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা তো বটেই, বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যও এক গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল এখন রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy