বাগনান থানার হাল্যান গ্রামের একটি দোতলা বাড়িতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে একটি পরিবারের চার সদস্য গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন এবং বাড়ি-ঘর, সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশি চিন্তা আর আতঙ্কে ভুগছেন ১৬-১৭ বছরের কিশোরী ইশরানা পারভিন, যিনি মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।
ঘটনাটি ঘটেছিল বুধবার ভোরে, যখন পরিবারের সদস্যরা গভীর ঘুমে ছিলেন। হঠাৎ করে আগুনের শিখা দেখে তারা যখন বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন, তখন অগ্নিদগ্ধ হন ইশরানা, রেনুকা, আকতার আলি ও রিয়াজুল আলম। বিশেষ করে, রেনুকা পারভিন ছাড়া বাকিরা আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। বাড়ির গুরুত্বপূর্ণ নথি, যেমন মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড, আধার কার্ড, ব্যাঙ্ক পাসবই, সমস্ত কিছু পুড়ে গেছে।
তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল—কিশোরী ইশরানা পরীক্ষা দিতে পারবেন কি না? তার মনে ছিল একটাই ভাবনা: “এবার কী হবে আমার? কীভাবে পরীক্ষায় বসব? সব তো পুড়ে ছাই হয়ে গেল…”
বাড়ির অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে পরিবারের সদস্য শেখ আরিফুল জানান, বাড়ির মধ্যে গ্যাস সিলিন্ডার ও উনুন ছিল, যা বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ার কারণ হতে পারে। আগুন দ্রুত বাড়ির প্রায় পুরো অংশে ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে দমকল বাহিনীকে ঘটনাস্থলে আসতে বেশ কিছু সময় লেগেছিল। আগুনের তীব্রতার কারণে স্থানীয়দের সাহায্যও খুব বেশি ফলপ্রসূ হয়নি।
বাগনান থানার পুলিশ ও দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর প্রায় দু’ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে দমকলের কর্মকর্তারা আগুন লাগার সঠিক কারণ জানাতে পারেননি। তবে স্থানীয়দের দাবি, আকতার আলি ছোট একটি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করতেন, যা ফেটে আগুন ছড়িয়ে থাকতে পারে।
এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। উলুবেড়িয়ার মহকুমা শাসক মানসকুমার মণ্ডল নির্দেশ দেন, স্থানীয় বিডিও ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ঘটনাস্থলে গিয়ে দুর্গতদের জন্য প্রাথমিক সাহায্য প্রদান করুন। রান্না করা খাবার, প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড়, কম্বল, চাল, ডাল, আনাজ এবং বই প্রদান করা হয়। বিশেষ করে, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কিশোরী ইশরানার জন্য সমস্ত বই এবং পড়ার উপকরণ প্রদান করা হয়, যাতে তার পরীক্ষা দেয়ার পথে কোনো বাধা না আসে।
এই বিপর্যয়ের মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, ইশরানা যাতে পরীক্ষায় অংশ নিতে কোনো অসুবিধায় পড়েন না, সেদিকে নজর রাখা হবে।
এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে, তবে ইশরানার পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে নতুন করে দুশ্চিন্তা বেড়েছে।