
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অর্থ আটকে রাখার অভিযোগ নিয়ে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রের মধ্যে যখন টানাপোড়েন চলছে, ঠিক তখনই বাংলার রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যের ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের পাল্টা হিসেবে তিনি বিজেপিকে ক্ষমতায় আনলে ‘৩ লাখের ঘর’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। রবিবার (৮ জুন) সন্দেশখালির কানমারী ভারত সেবাশ্রমের মাঠে বিজেপির সভায় এই মন্তব্য করে শুভেন্দু কার্যত ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে একটি মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
রাজ্য সরকার অভিযোগ করে আসছে, কেন্দ্র প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা আটকে রাখায় বাংলার দরিদ্র মানুষদের স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্প চালু করেছেন। এই প্রকল্পে উপভোক্তাদের ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে বাড়ি তৈরির জন্য দেওয়া হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে শুভেন্দু অধিকারী সরাসরি এই অঙ্কের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “একলাখ কুড়ির ঘরের জন্য তৃণমূলের পিছনে ছুটছেন, এক লাখ কুড়ি হাজারে ঘর হয়? তাহলে শুনুন বিজেপিকে ক্ষমতায় আনুন, অ্যাকাউন্টে ঘর তৈরির জন্য তিন লাখ টাকা করে দেওয়া হবে।” এই বিপুল অঙ্কের প্রতিশ্রুতি স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূলের উপর চাপ বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।
রবিবার হিন্দু অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে আত্মবলিদানকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সন্দেশখালির মাটি থেকেই তিনি তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানান। তিনি বলেন, “মায়েরা পহেলগাঁও দেখেছেন তো? ধর্ম দেখে শেষ করা হয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রতিশোধ হিসাবে মাসুদ আজহারের বংশকে শেষ করে দিয়েছেন।”
তিনি রাজ্য থেকে তৃণমূল কংগ্রেসকে হঠানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, “জোট বাঁধুন, তৈরি হোন। ভাগ হবেন না। সব মত আঁকড়ে রাখুন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত গীতাটাকে হাতে রাখতে হবে।” শুভেন্দু উত্তরপ্রদেশ ও অসমের উদাহরণ টেনে বলেন, “আমাদের ক্ষমতায় আনুন, আরও ভালো কিছু দেখতে পাবেন।”
শুভেন্দু অধিকারী শুধু বাড়ি তৈরির প্রতিশ্রুতিতেই থেমে থাকেননি। তিনি রাজ্যের নারীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, “৫০০ টাকার জন্য শাঁখা, সিঁদুর বিসর্জন দেবেন না। আমাদের সরকার যেদিন ক্ষমতায় আসবে প্রতি মাসের এক তারিখে ৩০০০ টাকা করে অ্যাকাউন্টে পড়ে যাবে।” উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি থেকেই তিনি এই মন্তব্য করেন।
এছাড়াও, তিনি স্মার্ট মিটার লাগানোর বিরোধিতা করে বলেন, “স্মার্ট মিটার লাগাতে দেবেন না। এটা অপশনাল। ভিখারি সরকার টাকা তুলতে চাইছে সাধারণ মানুষের কাছে।” তিনি মানুষকে একজোট থাকার আহ্বান জানান।
সন্দেশখালির প্রেক্ষাপটে শাহজাহান শেখ প্রসঙ্গও উঠে আসে শুভেন্দুর বক্তব্যে। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “নিশ্চিন্তে থাকুন শাহজাহানের দাদাগিরি অতীত করেছি, অতীতই থাকবে। কাদের মোল্লা যে গর্তে তুমি থাক না কেন তোমাকে টেনে বের করে আইনের সাজা দেব। সন্দেশখালির ঘটনায় জাজমেন্ট হয়ে গেছে। শুধু সাজা ঘোষণা বাকি আছে। আমি যা বলি ভেবে বলি। আমার ছাল-চামড়া তুলবে বলেছিল শাহজাহান। ওর বাড়ির সামনে মিষ্টি খেয়ে এসেছি।”
শুভেন্দু অধিকারীর এই আক্রমণাত্মক ও প্রতিশ্রুতিমূলক বক্তব্য আগামী দিনে বাংলার রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ‘৩ লাখের ঘর’ এবং অন্যান্য প্রতিশ্রুতিগুলি বিজেপির জন্য কতটা সহায়ক হয়, তা সময়ই বলবে।