‘আপনি কী করেন, সব জানি’ ফের উত্তপ্ত রাজ্য বিধানসভা! মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতার সময় শোরগোল, দুই BJP বিধায়ক সাসপেন্ড

সপ্তাহের শুরুতেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভা ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল। সোমবারের অধিবেশনে দফায় দফায় শোরগোল ও তীব্র বাদানুবাদ চলে, যার জেরে পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয় যে দুই বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ড করা হয় এবং বিজেপি পরিষদীয় দল ওয়াকআউট করে।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য চলাকালীন উত্তেজনার সূত্রপাত
সোমবার সকালে বিধানসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তোলেন। তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্র বাংলা থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করে নিলেও, রাজ্যের প্রতি অনবরত বঞ্চনা করে যাচ্ছে। ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রাখা হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যতবার তথ্য চেয়েছে সব দেওয়া হয়েছে, তারপরেও টাকা আটকে রেখেছে। অনেক রাজ্যে এই সমস্যা আছে, তারা টাকা পাচ্ছে, আমরা পাচ্ছি না।”

ঠিক এই সময়ই বিজেপি বিধায়করা আপত্তি জানাতে শুরু করেন। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য চলাকালীন ডাবগ্রাম ফুলবাড়ির বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায় কোনো একটি মন্তব্য করেন বা প্রশ্ন তোলেন। এতে উত্তেজিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাকে বলেন, “আপনি কী করেন, সব জানি।” এই মন্তব্য নিয়ে শোরগোল শুরু হয়। শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের বিরোধিতা করলে, মুখ্যমন্ত্রী তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “কাউন্সিলের ভোটে আপনি হারেন। আগে জিতে আসুন।” এর পরপরই বিজেপি বিধায়করা সম্মিলিতভাবে বিক্ষোভ শুরু করেন।

২৬ হাজার চাকরিহারা: মুলতুবি প্রস্তাব নাকচ, উত্তাল বিধানসভা
সূত্রের খবর, এদিন বিজেপির শিক্ষক সেলের বিধায়করা প্রায় ২৬ হাজার চাকরিহারাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার দাবিতে মুলতুবি প্রস্তাব জমা দেন। কিন্তু অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন হওয়ায় বিধানসভায় আলোচনা করা সম্ভব নয়। এই সিদ্ধান্তে বিজেপি বিধায়করা আরও ক্ষুব্ধ হন। তাদের অভিযোগ, এমন বহু ইস্যু নিয়ে আগেও আলোচনা হয়েছে, কিন্তু এক্ষেত্রে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে কেন? এরপর বিজেপি বিধায়করা আবারও বিরোধিতা করে স্লোগান দিতে শুরু করেন।

সাসপেনশন ও ওয়াকআউট
বিক্ষোভের জেরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে কুমারগ্রামের বিজেপি বিধায়ক মনোজ ওরাওঁ এবং শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষকে সাসপেন্ড করা হয়। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিজেপি পরিষদীয় দল বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করে। বিধানসভার বাইরে এসে তারা তুলসি গাছ নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিজেপি বিধায়কদের অভিযোগ, ন্যায্য কিছু বলতে গেলেই তাদের সাসপেন্ড করা হচ্ছে।

এই ঘটনা আবারও রাজ্য বিধানসভার অভ্যন্তরে শাসক ও বিরোধী দলের মধ্যে তীব্র সংঘাতের ছবি তুলে ধরল, যা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy