
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আজ এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটতে চলেছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার তার বিরুদ্ধে আনা ২০০টিরও বেশি মামলার শুনানি শুরু করতে যাচ্ছে। আজ, রবিবার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার শুনানি শুরু হবে এবং প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো মামলার শুনানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল বিটিভি-তে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
গত বছরের ৫ই আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র গণ আন্দোলনের মুখে পড়ে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন এবং ভারতে আশ্রয় নেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, খুন, এবং যুদ্ধাপরাধসহ বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি এখন বাংলাদেশের ক্ষমতায়, শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে এই মামলাগুলির শুনানি শুরু হবে, যেখানে ইউনূস সরকার হাসিনার মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আবেদন করতে পারে বলে জানা গেছে।
এই প্রথমবারের মতো কোনো বিচার প্রক্রিয়ার সরাসরি সম্প্রচার হতে চলেছে, যা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এতদিন বাংলাদেশের আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কোনো বিচার প্রক্রিয়ার সরাসরি সম্প্রচার করা যেত না। এই সিদ্ধান্ত বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য নেওয়া হয়েছে বলে প্রসিকিউশন পক্ষ জানিয়েছে।
জানা গেছে, বিচার প্রক্রিয়া সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হবে এবং বিটিভি-তে এর সম্পূর্ণ সম্প্রচার করা হবে। আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর গাজি মহম্মদ তামিম বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের সময় মানবতার উপরে যে অত্যাচার হয়েছিল, তা নিয়ে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে চার্জ দাখিল করা হবে। গোটা দেশ এর সাক্ষী থাকবে।” তিনি আরও দাবি করেন, এই সরাসরি সম্প্রচার বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালের তিন বিচারপতির বেঞ্চ গত ফেব্রুয়ারিতেই নির্দেশ দিয়েছিল যে এপ্রিল মাসের মধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যাবতীয় তদন্ত শেষ করতে হবে। আন্তর্জাতিক আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছিল। অন্যদিকে, ইউনূস সরকার ভারতের কাছে হাসিনাকে প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছে। উল্লেখ্য, কূটনৈতিক সুরক্ষাবলেই শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।
আজকের এই ঐতিহাসিক শুনানিতে কী রায় আসে, তার দিকে শুধু বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিক মহলও তাকিয়ে আছে। এটি বাংলাদেশের রাজনীতি এবং বিচার ব্যবস্থার জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।