
ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে সাম্প্রদায়িক বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে শোকজ করা হয়েছে। রাজ্য বিধানসভার শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি তাঁকে শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছে। জানা গিয়েছে, এই নির্দেশ এসেছে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। হুমায়ুনের মন্তব্যে রাজ্য রাজনীতি এখন তপ্ত হয়ে উঠেছে।
শুভেন্দুর মন্তব্যে শুরু বিতর্ক
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর একটি মন্তব্যের পর থেকেই এই বিতর্কের সূত্রপাত। বিধানসভার বাইরে শুভেন্দু বলেছিলেন, “তৃণমূল বাংলার হিন্দু জনগণকে উপড়ে ফেলতে চাইছে। ওদের দলের যে সব মুসলিম বিধায়ক জিতে আসবে তাদের চ্যাংদোলা করে ১০ মাস পরে এই রাস্তায় ছুড়ে ফেলব।” এই ‘চ্যাংদোলা’ মন্তব্যে বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়।
এর পাল্টা জবাবে হুমায়ুন কবীর কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “৭২ ঘণ্টার মধ্যে ওই কথা প্রত্যাহার না করলে ৪২ জন বিধায়ক আপনার ঘরের বাইরে আপনাকে বুঝে নেবে। আপনি পারলে ৬৬ জনকে নিয়ে আমার সঙ্গে মোকাবিলা করুন। আমার জাতিকে অপমান করা হলে, আমি ছেড়ে দেব না। মুর্শিদাবাদে যান, দেখে নেব আপনাকে। শুভেন্দু অধিকারী শুধু মেদিনীপুর বা কলকাতার নন, গোটা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তিনি। তিনি কত বড় মাতব্বর হয়েছেন দেখে নেব। মুর্শিদাবাদে তাঁকে ঢুকতে দেব না।”
মমতার ক্ষোভ, বিধানসভায় ওয়াকআউট
হুমায়ুনের এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার বিধানসভায় এই ঘটনার জেরে বিজেপি ওয়াকআউট করে। মমতা হুমায়ুনের এই ধরনের উস্কানিমূলক মন্তব্যে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং তাঁকে শোকজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। হুমায়ুনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। তবে হুমায়ুন দাবি করেছেন, তিনি এখনও কোনও নোটিশ পাননি। তাঁর বক্তব্য, “আগে জাতি, তারপর দল।”
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এ প্রসঙ্গে বলেন, “তৃণমূল এভাবেই নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। বিজেপিকে কখনও এমন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।”
বিজেপির প্রতিক্রিয়া
রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে শুভেন্দুর মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি আগে শুভেন্দুদার সঙ্গে কথা বলি। ঠিক কী বলেছেন ও কী প্রসঙ্গে উনি বলেছেন, সবটা জেনে, তারপর এই বিষয়ে বলতে পারব। আমি এখনও পুরোটা জানি না।”
রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা
এই ঘটনায় রাজ্যের রাজনৈতিক মহল উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। একদিকে শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য, অন্যদিকে হুমায়ুন কবীরের পাল্টা হুঁশিয়ারি—দুই পক্ষের বাকযুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে। তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার পদক্ষেপ এবং বিজেপির প্রতিক্রিয়া এই বিতর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। আগামী দিনে এই ঘটনার রাজনৈতিক প্রভাব কী হবে, তা নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।