অ্যান্টলিয়া তারাগুচ্ছের এক বিস্ময়কর দৃশ্য দেখেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা, যেটি ১৩ কোটি আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে। তারা বলছেন, মহাজাগতিক রত্নের মতো জ্বলজ্বল করা ছায়াপথের একটি দল এটি।
চিলির ‘ভিক্টর এম ব্লাঙ্কো’ নামের শক্তিশালী টেলিস্কোপের ‘ডার্ক এনার্জি ক্যামেরা বা ডিক্যাম’-এর মাধ্যমে তোলা এ ছবিতে শত শত ছায়াপথের বিশাল গুচ্ছ দেখা গেছে।
ছায়াপথে থাকা তারাগুচ্ছ হচ্ছে এ মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় কাঠামোগুলোর অন্যতম বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
মহাবিশ্বের প্রায় ২৫ শতাংশই ডার্ক ম্যাটার। এই ডার্ক ম্যাটার যখন মহাকর্ষীয় আকর্ষণের মাধ্যমে বিভিন্ন ছায়াপথকে কাছাকাছি টেনে আনে, তখনই তৈরি হয় এসব গুচ্ছ। এর গঠন পর্যায়ের শুরুতে এসব ছায়াপথ কেবল কয়েক ডজন থাকে। এরপর শত শত এবং অবশেষে আরও অনেক ছায়াপথ এসে যুক্ত হয় এতে।
এরকম একটি গুচ্ছ হচ্ছে অ্যান্টলিয়া। এটি অ্যান্টলিয়া নক্ষত্রপুঞ্জ বরাবর অবস্থিত, এর আরেক নাম ‘এয়ার পাম্প’।
‘ব্লাঙ্কো’ ও ‘জেমিনাই সাউথের’ মতো ভূমিতে থাকা বিভিন্ন টেলিস্কোপ ও মহাকাশভিত্তিক বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ ব্যবহার করে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এসব গুচ্ছ পর্যবেক্ষণ করছেন বিজ্ঞানীরা।
অ্যান্টলিয়া ছায়াপথগুচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রভাব রয়েছে দুটি বিশাল ছায়াপথের। এ দুটি হচ্ছে ‘এনজিসি ৩২৬৮’ ও ‘এনজিসি ৩২৫৮’। উপবৃত্তাকার এই দুই ছায়াপথ ঘিরে আছে ছোট ছোট বামনাকার ছায়াপথ।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, একসঙ্গে মিলে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে এই দুই বিশাল ছায়াপথ। এদের মধ্যে থাকা ছায়াপথগুচ্ছের একটি ‘দড়ি বা রশি’ দেখা গেছে টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণে, এতে দুটি ছোট আকারের ছায়াপথগুচ্ছ সম্ভবত একটিতে পরিণত হচ্ছে।
এসব ছায়াপথগুচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ছায়াপথ রয়েছে। যেমন–
● লেন্টিকুলার ছায়াপথ: ডিস্ক-আকৃতির ছায়াপথ এটি। এতে রয়েছে অল্প পরিমাণে আন্তঃনাক্ষত্রিক উপাদান ও তারার ন্যূনতম গঠন।
● অনিয়মিত ছায়াপথ: অস্বাভাবিক আকারের এ ছায়াপথটি প্রচলিত ছায়াপথের শ্রেণিবিন্যাসের মতো নয়।
● বামন ছায়াপথ: এটি উপবৃত্তাকার ও বামনের মতো বিরল ধরনের ছোট আকারের ক্ষীণ ছায়াপথ।
এসব ছায়াপথের কয়েকটির উপস্থিতি এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। তবে এ নিয়ে গবেষণা চলছে। অত্যন্ত সংবেদনশীল ক্যামেরার মতো প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে এসব ক্ষীণ বিভিন্ন ছায়াপথ শনাক্ত করতে পেরেছেন গবেষকরা, যা কয়েক দশক আগেও তাদের কাছে ছিল অদৃশ্য।
অ্যান্টলিয়া’র মতো বিভিন্ন ছায়াপথগুচ্ছে থাকা নানা ছায়াপথ অধ্যয়ন করার মাধ্যমে ছায়াপথগুলো কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে তা বুঝতে পারবেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।