“অস্পষ্ট ও সম্পূর্ণ অযৌক্তিক”- রাহুলের অভিযোগকে খণ্ডন করে দিলো নির্বাচন কমিশন

মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ‘ফিক্সিং’-এর অভিযোগকে জাতীয় নির্বাচন কমিশন (ECI) শুধু “অস্পষ্ট এবং সম্পূর্ণ অযৌক্তিক” বলেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং শব্দে শব্দে খণ্ডন করেছে তাঁর প্রতিটি দাবি। এক অভূতপূর্ব প্রতিক্রিয়ায়, কমিশন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে, “নির্বাচনী ফলাফল প্রতিকূলে গেলেই নির্বাচন কমিশনকে অপমান করার চেষ্টা করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।”

শুক্রবার ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাহুল গান্ধী বোমা ফাটানোর ভঙ্গিতে দাবি করেন যে মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচন নাকি ‘বিজেপির পক্ষে’ পরিচালিত হয়েছিল, এবং ‘ভোটার তালিকায় ভুয়ো ভোটার’ ঢোকানো হয়েছিল। এই বিস্ফোরক অভিযোগের জবাবে নির্বাচন প্যানেল দৃঢ়ভাবে জানিয়েছে, “পুরো ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হয়েছিল।” তারা আরও উল্লেখ করেছে, “সমস্ত রাজনৈতিক দলের পোলিং এজেন্টরা উপস্থিত ছিলেন” এবং “কংগ্রেসের অনুমোদিত এজেন্টরা কখনও অস্বাভাবিক ভোটগ্রহণ সম্পর্কে কোনও আপত্তি বা অভিযোগ তোলেননি সেই সময়।” কমিশনের এই বক্তব্য রাহুল গান্ধীর অভিযোগের মূলে সরাসরি আঘাত হেনেছে।

শুধু ভোটার জালিয়াতি নয়, রাহুল গান্ধী আরও এক ধাপ এগিয়ে অভিযোগ করেন যে “নির্বাচন কমিশনার এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের আইন সংশোধন করে কেন্দ্র সুবিধা নিয়েছে,” কারণ এই সংশোধনে “প্যানেল থেকে ভারতের প্রধান বিচারপতি (সিজেআই) কে সরিয়ে দেওয়া হয়।” এই অভিযোগকেও ‘অপ্রমাণিত’ বলে অভিহিত করেছে নির্বাচন কমিশন। তারা জানিয়েছে, গত বছর মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরপরই কংগ্রেসের উত্থাপিত একই অভিযোগের জবাব তারা দিয়েছিল। ইসিআই স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, “২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন আইএনসি-কে দেওয়া তার জবাবে এই সমস্ত তথ্য প্রকাশ করেছিল। যা ইসিআই-এর ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। মনে হচ্ছে বারবার এই ধরনের বিষয় উত্থাপন করার সময় এই সমস্ত তথ্য সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হচ্ছে।”

রাহুল গান্ধীর এই অভিযোগ খণ্ডন করেছে গেরুয়া শিবিরও। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস তীর্যক মন্তব্য করে বলেন, “রাহুল গান্ধী তো ভোটের আগেই হার মেনে বসে আছেন। উনি এমন মন্তব্য করতে থাকেন আর তাঁর দল হারতে থাকে। রাহুল গান্ধীকে এবার ঘুম থেকে জাগানো দরকার।” বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, “রাহুলের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা। কংগ্রেস যখন জেতে তখন ব্যবস্থা স্বচ্ছ। কিন্তু কংগ্রেস হারলেই ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে।”

পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, নির্বাচন কমিশন এবং শাসক দলের এই কড়া প্রতিক্রিয়া রাহুল গান্ধীর বারবার উত্থাপিত ‘নির্বাচনী ফিক্সিং’-এর অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থাকে সমুন্নত রাখতে নির্বাচন কমিশনের এই কঠোর অবস্থান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। রাহুল গান্ধীর এই ‘অযৌক্তিক’ অভিযোগের পুনরাবৃত্তি তাঁর দলের উপর কতটা প্রভাব ফেলে, তা সময়ই বলবে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy