
বিয়ের মণ্ডপে তখন উৎসবের আমেজ। বর-কনেকে ঘিরে চলছিল আনন্দ আর উচ্ছ্বাস। কিন্তু মালাবদলের পরই ঘটল ছন্দপতন! বর নিরক্ষর এবং টাকাও গুনতে পারেন না—এই তথ্য জানতে পেরেই বিয়ে ভেঙে দিলেন কনে। বিহারের মতিহারি জেলার এক গ্রামে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো হয়ে ওঠে যে, বরযাত্রীদের রাতভর আটকে রাখতে বাধ্য হন গ্রামবাসী, পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
ঘটনাটি ঘটে পাটাহি থানা এলাকার একটি গ্রামে। ঘোড়াসাহান থানা এলাকার কদমওয়া গ্রাম থেকে বর এসেছিলেন বিয়ে করতে। প্রাথমিক সব আচার-অনুষ্ঠান ঠিকঠাকই চলছিল। খাওয়া-দাওয়া, নাচানাচি—সবকিছুই স্বাভাবিক গতিতে এগোচ্ছিল। কিন্তু মালাবদল পর্ব শেষ হতেই পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে যায়।
আসলে, রীতি অনুযায়ী কনের পরিবার বরকে কিছু টাকা গুনতে দেন। কিন্তু বর সঠিকভাবে টাকা গুনতে পারেননি। বরের এই নিরক্ষরতা এবং টাকা গুনতে না পারার বিষয়টি দেখেই কনে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁর সাফ কথা, “যে ব্যক্তি ঠিকমতো টাকাও গুনতে পারেন না, তিনি কীভাবে সারা জীবন আমার সঙ্গে থাকবেন?” এই প্রশ্ন তুলেই তিনি বিয়ে করতে অস্বীকার করেন এবং বরযাত্রীদের ফিরে যেতে বলেন।
কনের বিয়েতে নারাজ হতেই বিয়েবাড়িতে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কনের পরিবার এবং গ্রামবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাঁরা বর, তাঁর বাবা, ভাই এবং বরের সঙ্গে আসা অন্যান্যদের ফিরে যেতে বলেন। রাতভর দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ তর্ক-বিতর্ক চললেও কোনও সমাধান সূত্র বের করা সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে, গ্রামবাসী ক্ষোভে বর ও বরযাত্রীদের আটকে রাখেন।
পরের দিন, বৃহস্পতিবার দুপুরে পাটাহি থানার ইনচার্জ বিনীত কুমার খবর পেয়ে বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। তিনি উভয় পক্ষকে বসিয়ে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। শেষমেশ, পুলিশ বর ও তাঁর পরিবারকে নিরাপদে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করে।
পাটাহি থানার ইনচার্জ বিনীত কুমার জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেয়নি। উভয় পক্ষ থেকে কোনও লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, আজকের আধুনিক যুগে নিরক্ষরতা একটি অভিশাপ এবং শিক্ষা ছাড়া সবকিছুই অসম্পূর্ণ।
এই ঘটনা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে, সমাজে শিক্ষার গুরুত্ব কতখানি। একটি বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পেছনে আর্থিক কারণ নয়, বরং শিক্ষাগত অযোগ্যতাই মুখ্য হয়ে উঠল, যা সত্যিই বিরল।