অযোগ্যদের ‘দ্বিতীয় সুযোগ’? SSC নিয়োগ বিতর্কে হাইকোর্টে টানাপোড়েন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন

পশ্চিমবঙ্গের স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নতুন মোড়। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে চলছে চরম টানাপোড়েন। একদিকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে এবং নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে, এবার সেই ‘চিহ্নিত অযোগ্য’ প্রার্থীরাই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বসার অধিকার চেয়ে আদালতে সওয়াল করছেন। এই মামলায় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি স্কুল সার্ভিস কমিশনের হয়ে সওয়াল করছেন, আজ প্রশ্ন তুলেছেন, “একটা ভুলের জন্য কতবার শাস্তি? আইনে একবার। প্যানেল বাতিলের পর তাহলে আবার কেন শাস্তি?”

রাজ্যের যুক্তি: ‘অনুভব’ ও ‘ক্ষতিপূরণ’
রাজ্যের পক্ষে অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) আদালতে যুক্তি দেন যে, যদি পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া খারাপভাবে হয়েও থাকে, তাহলে যারা পাশ করে বেরিয়ে গেলেন, তারা কীভাবে সেটা করলেন? রাজ্যের সওয়াল, চাকরি বাতিল বিভিন্ন ভাবে হতে পারে। বাতিল হলেও ভবিষ্যতে তাদের নিয়োগে বাধা নাও থাকতে পারে। যদি তা-ই না হত, তবে শীর্ষ আদালত নিজের রায়ে সেকথা উল্লেখ করত। এজি আরও বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে কেউ যদি চাকরি করে থাকেন, কোনো কারণ দেখিয়ে তা কেড়ে নিলেও তাঁর অভিজ্ঞতাকে স্বীকার করতে হবে।

তবে ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন তুলেছে, যখন একটি বড় অনিয়মের বিষয় উঠে আসে এবং তা বাতিল হয়, তখন সার্ভিস কত বছরের, তা গ্রহণীয় নাও হতে পারে।

অযোগ্যদের সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা: ১৮৮ না ১,৮০১?
আদালতের প্রশ্ন ছিল, মোট ২ লক্ষ ৬০ হাজার আবেদন জমা পড়েছে, এর মধ্যে মাত্র ১৮৮ জন চিহ্নিত অযোগ্য আবেদন করেছেন? উত্তরে স্কুল সার্ভিস কমিশন জানায়, “মোট চিহ্নিত অযোগ্য হল ১,৮০১ জন।” এই সংখ্যা নিয়েও আদালতে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

বিচারপতি সৌমেন সেন আজ কমিশনকে সরাসরি প্রশ্ন করেন, “বেআইনি হোক বা অনিয়ম করে হোক এই চিহ্নিত অযোগ্যরা চাকরি পেয়েছেন, করেছেন। ফলে এদের অভিজ্ঞতা কীভাবে কেড়ে নেওয়া যায়? এটাই আপনাদের বক্তব্য?” জবাবে কমিশন সায় দিয়ে বলে, “হ্যাঁ, একদমই তাই। চিহ্নিত অযোগ্যদের নিয়োগে অংশ নিতে না দেওয়া হলে তাঁদের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।” কোর্টে সওয়াল করছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

মামলার প্রেক্ষাপট: সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ
প্রসঙ্গত, নিয়োগে দুর্নীতির কারণে সুপ্রিম কোর্ট প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে দেয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালত নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেয়, তবে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয় যে চিহ্নিত অযোগ্যরা যাতে এই নতুন পরীক্ষায় বসতে না পারে।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে এসএসসি নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে এবং বিজ্ঞপ্তিও জারি করে। কিন্তু অভিযোগ ওঠে যে, অযোগ্যদেরও পরীক্ষায় বসার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছিল। এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হতেই তাকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একসঙ্গে ৯টি মামলা দায়ের করা হয়।

সেই মামলায় গতকালই হাইকোর্টের একক বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, অযোগ্যদের পরীক্ষা থেকে বাদ দিয়েই নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাতে হবে এবং সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া সময়সীমার মধ্যেই তা সম্পন্ন করতে হবে।

এরপর আজ রাজ্যের পক্ষ থেকে বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে পর্ষদ ও রাজ্য বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়েরের আবেদন জানায়। ডিভিশন বেঞ্চ এই অনুমতি দেয় এবং আজই সেই মামলার শুনানি হয়। আগামীকাল, বৃহস্পতিবার, এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।

এই ঘটনা এখন রাজ্য রাজনীতি ও শিক্ষামহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবং অযোগ্যদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এই আইনি লড়াইয়ের পরিণতি কী হয়, সেদিকেই তাকিয়ে আছে রাজ্যের চাকরিপ্রার্থীরা।

Related Posts

© 2025 News - WordPress Theme by WPEnjoy