“অবিলম্বে তেহরান খালি করুন”-ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি

ইজরায়েল ও ইরানের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত পঞ্চম দিনে পা রাখল। যত দিন গড়াচ্ছে, ততই তীব্র হচ্ছে রণহুঙ্কার আর মিসাইলের আনাগোনা। সোমবার দিনভর দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মিসাইল হামলায় মধ্যপ্রাচ্যের আকাশ আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তেহরান খালি করার হুঁশিয়ারি সংঘাতকে এক নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

সংঘর্ষের বিভীষিকাময় চিত্র ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। ইরানের হামলায় ইজরায়েলের তেল আভিভ, হাইফা ও পেটাহ তিকভায় বহু মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, আহত হয়েছেন আরও অনেকে। সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ইজরায়েলে ২২ জনের প্রাণহানি হয়েছে। অন্যদিকে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, সে দেশে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২৪-এ, যা সংঘাতের তীব্রতা স্পষ্ট করে তোলে।

জি-৭ সম্মেলন থেকে এক দিন আগেই দেশে ফিরবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার আগেই তিনি এক বিস্ফোরক বার্তা দিয়েছেন: “আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করা উচিত ইরানের। অবিলম্বে তেহরানকে খালি করা হোক।” ট্রাম্পের এই হুঁশিয়ারি এমন এক সময় এল, যখন ইরানের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘেই সোমবার বলেছেন, তারা এমন একটি আইন নিয়ে কাজ করছে যা ইরানকে পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেবে।

যদিও বাঘেই আরও বলেন যে ইরান এখনও পরমাণু অস্ত্র তৈরির বিরুদ্ধে এবং তাদের এমন কোনও ইচ্ছা নেই। কিন্তু ট্রাম্পের ‘তেহরান খালি করো’ বার্তা এবং ইরানের এনপিটি থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনার ইঙ্গিত আন্তর্জাতিক মহলে পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। উল্লেখ্য, এনপিটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি, যার মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বে পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধ করা এবং পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারকে উৎসাহিত করা। ১৯৬৮ সালে তৈরি এই চুক্তি ১৯৭০ সালে কার্যকর হয়। এমন এক চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা স্বভাবতই সংঘাতের আগুনে ঘি ঢালছে।

ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন যে, ইরান আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার ছক কষছে। এমনকি তাঁর বেডরুমের জানলায় মিসাইল আঘাত করা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। এই গুরুতর অভিযোগ ইরান সরাসরি অস্বীকার করেছে।

অন্যদিকে, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশিকান সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, সম্ভবত দেশের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চাপ সামলাতে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেই দাবি করেছেন, ইজরায়েল নাগরিকদের টার্গেট করছে। এর পাল্টা হিসেবে ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সংঘর্ষের ঘটনায় তেহরানকে চরম মূল্য চোকাতে হবে। উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

মধ্যপ্রাচ্যের এই ভয়াবহ সংঘাতের আবহে জি৭ সম্মেলনে যোগ দিতে কানাডা পৌঁছেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে তার আলোচনায় ইজরায়েল-ইরান সংঘাতের বিষয়টি যে প্রাধান্য পাবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভারত বরাবরই শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে সওয়াল করে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।

পঞ্চম দিনেও দুই দেশের মধ্যে চলতে থাকা এই রক্তক্ষয়ী সংঘাতের শেষ কোথায়, তা বলা মুশকিল। তবে ট্রাম্পের কড়া হুঁশিয়ারি এবং এনপিটি নিয়ে ইরানের অবস্থান, এই সংঘাতকে এক নতুন এবং সম্ভবত বিপজ্জনক দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy