
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযানে ভারতের অন্যতম প্রধান মুখ হয়ে উঠেছিলেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। সাংবাদিক বৈঠকগুলিতে বিদেশ সচিবের পাশেই নিয়মিত দেখা গেছে ভারতীয় সেনার এই সংখ্যালঘু নারী আধিকারিককে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধেই অবমাননাকর মন্তব্য করে বিতর্কের ঝড় তুলেছেন বিজেপি নেতা ও মন্ত্রী বিজয় শাহ।
মন্ত্রীর আপত্তিকর মন্তব্য ও তার প্রেক্ষাপট
ঘটনার সূত্রপাত মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে রামকুণ্ড গ্রামে আয়োজিত একটি সভায়। সেখানেই কর্নেল কুরেশিকে উদ্দেশ্য করে অত্যন্ত কদর্য ভাষায় আক্রমণ করেন বিজয় শাহ। তিনি বলেন, “ওরা (সন্ত্রাসবাদী) আমাদের বোনেদের সিঁদুর মুছেছিল। আমরা ওদেরই বোনকে পাঠিয়ে বদলা নিয়েছি। ওদের অবস্থা খারাপ করেছি। ওদের বোনকে পাঠিয়েই ওদের ধ্বংস করে দিয়েছি।”
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গিদের হাতে কয়েকজন পর্যটক নিহত হওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, জঙ্গিরা ধর্মীয় পরিচয় জানতে চেয়ে হামলা চালিয়েছিল। এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই সামরিক অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। আর এই অভিযানের এক দক্ষ আধিকারিক কর্নেল কুরেশিকে ‘সন্ত্রাসবাদীদের বোন’ হিসেবে চিহ্নিত করে বিজয় শাহ তাঁর ধর্মীয় পরিচয়ের সূত্রেই এমন ঘৃণ্য ভাষা ব্যবহার করেন।
তুমুল সমালোচনা, ক্ষমা প্রার্থনা এবং এফআইআর
বিজয় শাহের এই মন্তব্য জনসমক্ষে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দলই নয়, তাঁর নিজের দল বিজেপির অন্দরেও সমালোচিত হন এই মন্ত্রী। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ কুরেশি সম্পর্কে মন্তব্যের জন্য তাঁর তীব্র নিন্দা করেন।
চারিদিক থেকে প্রবল চাপের মুখে পড়ে তড়িঘড়ি নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেন মন্ত্রী। নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন তিনি। সুর পাল্টে বলেন, “আমাদের বোন সোফিয়া জাতি ও ধর্মের উপরে উঠে ভারতের গৌরব বাড়িয়েছেন। তিনি আমাদের নিজের বোনের চেয়েও বেশি সম্মানিত। জাতির প্রতি তার সেবার জন্য আমি তাকে স্যালুট জানাই।” তিনি আরও বলেন যে, তাঁর মন্তব্য যদি সমাজ ও ধর্ম বিশ্বাসকে আঘাত করে থাকে, তবে তিনি দশবার ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত।
কিন্তু এই ক্ষমাপ্রার্থনা যথেষ্ট ছিল না। মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট। হাইকোর্ট তাঁর মন্তব্যকে ‘ভয়ানক এবং ক্যানসারের মতো’ বলে পর্যবেক্ষণ করে। তাঁর কুৎসিত ভাষাটিকে ‘নর্দমার ভাষা’ তকমা দেয় আদালত। অবিলম্বে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের এই নির্দেশের পরেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব জানান যে, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতেই বুধবার রাতে মানপুর থানায় এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়।
গ্রেপ্তারি এড়াতে সুপ্রিম কোর্টে, মেলেনি স্বস্তি
গ্রেপ্তারি থেকে বাঁচতে এরপর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন বিজয় শাহ। কিন্তু সেখানেও তিনি স্বস্তি পাননি। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই মন্ত্রীর মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, “আপনি কী ধরনের মন্তব্য করেছেন? ন্যূনতম দায়িত্বজ্ঞানের পরিচয়ও দিতে পারেননি। হাইকোর্টে গিয়ে ক্ষমা চান।”
শীর্ষ আদালতের মতে, বিজয়ের মন্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রধান বিচারপতি মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীকে গ্রেপ্তারির হাত থেকে বাঁচানোর কোনো রক্ষাকবচ না দিয়ে আবেদন খারিজ করেন। শুক্রবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা।
সর্বস্তরে তীব্র নিন্দা
বেফাঁস কথা বলে সর্বস্তরের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিজয় শাহ। জাতীয় নারী কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহাতকর মন্তব্য করেন, “একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির তরফে নারীদের প্রতি এমন অবমাননাকর মন্তব্য মেনে নেওয়া যায় না। এটি নারীদের মর্যাদাকে আঘাত করার পাশাপাশি দেশের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বীরাঙ্গনাদের কাছেও অত্যন্ত অপমানজনক। কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে নিয়ে গোটা দেশ গর্বিত। তিনি সাহস ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশের সেবা করেছেন।”
মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, “বিজয় শাহকে মন্ত্রিপদ থেকে বরখাস্ত এবং তার বিরুদ্ধে এফআইআর – দুটোই দ্রুত হওয়া দরকার। কারণ তিনি দেশবাসীকে লজ্জিত করেছেন।”
কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী প্রশ্ন তোলেন, “পহেলগামের ঘটনার পর প্রথম শহিদ হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের ঝন্টু আলী শেখ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ভারতের সকলের সহযোগিতায় আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এত বড় অভিযান করতে পেরেছি। তা যদি সত্যি হয়, তাহলে মধ্যপ্রদেশের বিজেপির একজন মন্ত্রী বিজয় শাহ কী করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পদস্থ অফিসার সোফিয়া কুরেশির বিরুদ্ধে অপমানজনক কথা বলতে পারেন? তার বিরুদ্ধে কেনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না কেন, এটা আমাদের প্রশ্ন।”
ভারতীয় সেনার সাবেক কর্নেল পৃথ্বীরঞ্জন দাস এই মন্তব্যকে ‘কুৎসিত’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি মন্ত্রীর ব্যক্তিগত রুচির প্রতিফলন। তিনি বলেন, “এটা যারা সমর্থন করছে তাদেরও রুচি প্রকাশিত হয়েছে। এতে একজন নাগরিক হিসেবে শুধু নয়, ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন সাবেক সদস্য হিসেবে আমি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ। আমি খুশি যে হাইকোর্ট তৎপর হয়ে অ্যাকশন নিয়েছে।”
নারী আন্দোলনের কর্মী অধ্যাপক শাশ্বতী ঘোষ এই মন্তব্যের নেপথ্যে গভীর কারণ দেখতে পান। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, “কোনো একজন মেয়ে মুখপাত্র হয়েছেন, এটাই বহু মানুষের গাত্রদাহের কারণ। যুদ্ধের মতো একটা তথাকথিত পৌরুষের লড়াই বা পুরুষালি ব্যাপারে একটি মেয়েকে দিয়ে বলানো হচ্ছে, এটা অনেকে মেনে নিতে পারছেন না। পাশাপাশি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা পুরোটাই একটা ইসলামি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে, সেখানে একজন সংখ্যালঘু বা মুসলিম মেয়েকে কেন বেছে নেওয়া হল এজন্য, অনেকেরই প্রশ্নের বড় উৎস। বিজেপি বিধায়ক হয়তো সরাসরি বলে ফেলেছেন, কিন্তু এই ভাবনাটা অনেকের মধ্যেই আছে বলে আমার বিশ্বাস।”
মন্তব্যের নেপথ্যে বিদ্বেষের বাতাবরণ
কাশ্মীরে ধর্মীয় পরিচয় দেখে পর্যটক হত্যার মতো ঘটনা এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে বিদ্বেষের বাতাবরণ তৈরি করেছে। মন্ত্রীর বক্তব্য তারই একটি প্রতিফলন। বিদ্বেষ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে জঙ্গি হামলায় নিহত হওয়া নৌসেনা আধিকারিক লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়ালের স্ত্রী হিমাংশী নারওয়াল যখন শান্তির বার্তা দেন এবং মুসলিম বা কাশ্মীরিদের প্রতি ঘৃণা না ছড়ানোর আহ্বান জানান, তখন তাঁকেও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণার পর বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি এবং তাঁর মেয়েকেও কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছিল।
এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে পহেলগাম ও তার পরবর্তী ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্য করে রোষের মুখে পড়েছেন এক সংখ্যালঘু অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদও। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ফেসবুকে মুসলমান সেনা আধিকারিকের সাংবাদিক সম্মেলন নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট করেছেন তিনি। অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদাবাদ লিখেছিলেন, “আমি খুব খুশি যে এত ডানপন্থি কর্নেল সোফিয়া কুরেশির প্রশংসা করছেন। তবে তারা দাবি করতে পারেন যে, গণপিটুনি, নির্বিচারে বুলডোজার চালানো এবং বিজেপির ঘৃণা ছড়ানোর শিকার অন্যান্যদের ভারতীয় নাগরিকদেরও সুরক্ষা দেওয়া হোক।” এই মন্তব্যের পরেই হরিয়ানার মহিলা কমিশন ওই অধ্যাপককে সমন পাঠিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এই ঘটনাকে কেবল বিজেপির ইসলাম বিরোধিতা নয়, বরং মনুবাদী সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করেন। ডিডাব্লিউতে তিনি বলেন, “এটা বিজেপির ইসলাম বিরোধিতা শুধু নয়, মনুবাদী যে সংস্কৃতি, যার উপর হিন্দুত্ববাদ দাঁড়িয়ে আছে, তার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে যুক্ত। সোফিয়া কুরেশি আমাদের দেশের মেয়ে, যিনি নিজের যোগ্যতায় এতদূর উপরে উঠেছেন। যে যোগ্যতায় ওঠার ক্ষমতা বিজেপির ওই নেতা বা মন্ত্রীর নেই। তা সত্ত্বেও তিনি এ রকম কদর্য মন্তব্য করলেন, যা থেকে বোঝা যায় যে এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা সামগ্রিকভাবে বিজেপির সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত ইসলামের প্রতি ঘৃণা।” তিনি আরও বলেন যে, বিজেপি সেনাবাহিনীতে মহিলাদের পার্মানেন্ট কমিশন দেয়নি, যে সিদ্ধান্তের সমালোচনা সুপ্রিম কোর্টও করেছিল।
কলকাতায় বামেদের যুদ্ধবিরোধী ও সম্প্রীতির দাবিতে মিছিল
একইসঙ্গে সন্ত্রাসবাদ ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে মঙ্গলবার কলকাতায় মিছিল করে ১০টি বামপন্থী দল। তাদের বিরোধিতা ছিল বিজেপির বিরুদ্ধে। সিপিএমসহ বামপন্থী দলগুলির দাবি, তারা সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার পক্ষে। একইসঙ্গে তারা যুদ্ধের জিগির তুলে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বিরুদ্ধে। সে কারণেই তারা রাস্তায় নেমেছেন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার দাবি জানিয়েছেন।
সিপিএম, সিপিআই, আরএসপি, ফরোয়ার্ড ব্লক, এসইউসিআই, সিপিআই (এমএল) লিবারেশনসহ মোট দশটি বামপন্থী দলের নেতারা এই মিছিলে অংশ নেন। সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা বিমান বসু, রাজ্য সিপিএমের সম্পাদক মহম্মদ সেলিমসহ প্রমুখ বাম নেতারা মিছিলে উপস্থিত ছিলেন।
মিছিলে অনেকের হাতে ছিল চারটি ছবিসহ একটি পোস্টার। উপরের দুটি ছবিতে ছিলেন নিক্সন ও ইন্দিরা গান্ধী, লেখা ছিল ১৯৭১ সাল, তখন ভারত। ইন্দিরা গান্ধীর ছবিতে লেখা ছিল ‘লৌহমানবী’। তার নিচে লেখা ছিল ২০২৫ সাল, এখন ভারত। নিচে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদীর হাতজোড় করে নমস্কার করার ছবি ছিল। ট্রাম্পের ছবিতে লেখা ছিল ‘ব্যবসায়ী ট্রাম্প’ এবং মোদীর ছবিতে লেখা ছিল ‘অবনত মোদী’।
একজন লাল পাঞ্জাবি পরা লোকগান শিল্পী গলায় পোস্টার ঝুলিয়ে গান গাইছিলেন। সেই পোস্টারে লেখা ছিল, “সন্ত্রাসবাদী জঙ্গিদের প্রাণঘাতী হামলার বিরুদ্ধে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকলে এক হও”। যুদ্ধবিরোধী এই মিছিল ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত যায়। অনেক বাম কর্মী ও সমর্থক এই মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। মিছিলের সামনে কে থাকবে তা নিয়ে হালকা হুড়োহুড়ি হলেও বিমান বসুর হস্তক্ষেপে তা থেমে যায়।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, “কেউ কেউ বলছে, শান্তির কথা, ঐক্যের কথা বলা যাবে না। ভারতীয় সভ্যতা তো গোটা বিশ্বকে শান্তির কথা বলেছে। সেটাই আমাদের শক্তি। সন্ত্রাসবাদ শান্তিকে বিঘ্নিত করতে চাইছে। যারা বলছেন, শান্তির কথা বলবেন না, তারা সন্ত্রাসবাদের দোসর।”
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “আমরা সম্প্রীতির দাবিতে মিছিল করেছি। যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী, তার আগে ঘোষণা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিজেপি কি মোদী-ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে পারবে?”
সোমবারের যুদ্ধবিরোধী মিছিলে বিজেপি হামলা করে বলে অভিযোগ ওঠে, যদিও বিজেপি তা অস্বীকার করে। মঙ্গলবারও বিজেপির পতাকা নিয়ে কিছু বাইক দেখা যায়, পুলিশ মিছিলের গতি কমিয়ে দিলে বাইকগুলো চলে যায়।
Sources and related content