“অন্য রিলেশনের কথা বাড়িতে আগেই জানিয়েছিল সোনম?”-বিস্ফোরক দাবি রাজার দাদার

মেঘালয়ে ইন্দোরের বাসিন্দা রাজা রঘুবংশীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রতিদিনই চাঞ্চল্যকর নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে। রাজার ভাই বিপিন রঘুবংশী আজ জানিয়েছেন, বিয়ের আগেই সোনম তার পরিবারের কাছে অন্য এক সম্পর্কের কথা জানিয়েছিল এবং সতর্ক করেছিল যে, এই বিয়ে হলে ‘সাংঘাতিক কিছু ঘটতে পারে’। এই দাবি প্রমাণ করে দিচ্ছে, এই হত্যাকাণ্ড শুধু একটি আকস্মিক ঘটনা ছিল না, বরং এক সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ফল।

বিপিন রঘুবংশী জানান, সোনম গোপনে তার মাকে রাজ কুশওয়াহার সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা জানিয়েছিল। কিন্তু সোনমের পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নিতে অস্বীকার করে, কারণ তারা একই সম্প্রদায়ের ছিল না। রাজার ভাই দাবি করেন, “সোনমের পরিবারের একজন ঘনিষ্ঠজন আমাকে বলেছেন যে সোনম তার মাকে গোপনে জানিয়েছিল অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে আছে। কিন্তু তার পরিবার তাকে বলেছিল যাকে ইচ্ছা ভালোবাসতে পারো, কিন্তু বিয়ে হবে একই সম্প্রদায়ের মধ্যে। এর উত্তরে সোনম বলেছিল, ঠিক আছে, আমি যেখানেই বিয়ে করি না কেন, পরে যা-ই ঘটুক না কেন, তার জন্য আমি দায়ী থাকব না।”

সোনমের মা এর আগেও রাজার মা উমা রঘুবংশীকে বলেছিলেন যে তার স্বামী মেয়েকে খুব শাসনে রাখেন এবং সোনমকে বাড়ি থেকে বের হতে দেন না। উমা রঘুবংশী বলেন, “রাজা বলতেন সোনম তার সঙ্গে কথা বলত না, এড়িয়ে যেত। নিজেই আমাদের এই কথা বলেছিল রাজা। তার বাবা বলতেন, ‘আমাদের মেয়ে ভালো মেয়ে, সে ঘর থেকে বেরও হয় না’।” তিনি আরও যোগ করেন, “মধুচন্দ্রিমার জন্য সোনম নিজেই টিকিট বুক করেছিল। রাজা খুশি ছিল, তাই আমরাও খুশি ছিলাম। আমাদের ধারণা ছিল না যে সোনম এমন কিছু করবে।”

খুনের ছক: বিয়ের তিন দিনের মাথায় পরিকল্পনা
পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে যে, ১০ মে ইন্দোরে বিয়ের মাত্র তিন দিন পরেই সোনম রাজার হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা শুরু করে। ২১ মে, এই দম্পতি তাদের মধুচন্দ্রিমার জন্য মেঘালয়ে পৌঁছায়। শিলং পুলিশের সিনিয়র আধিকারিক বিবেক সিয়েমের দেওয়া সময়সীমা অনুযায়ী, তার ঠিক একদিন পরেই, অর্থাৎ ২২ মে, তিনজন ভাড়াটে খুনি শিলংয়ে পৌঁছায়।

২ জুন পূর্ব খাসি পাহাড় জেলার একটি খাদ থেকে রাজা রঘুবংশীর দেহ উদ্ধার হয়। প্রাথমিকভাবে নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও, খুনের পর সোনম নিজেই নিখোঁজ হয়ে যায়। এরপর ৭ জুনের মধ্যে মেঘালয় পুলিশ তাকে খুঁজে বের করার জন্য ‘অপারেশন হানিমুন’ শুরু করে।

সিসিটিভি ফুটেজ, খুনের অস্ত্র ও পলাতক সোনম:
পুলিশ একটি চাঞ্চল্যকর সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে রাজা যেখানে নিহত হন সেখান থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে সোনম অভিযুক্ত খুনিদের সঙ্গে কথা বলছে। জানা গেছে, খুনের অস্ত্রটি গুয়াহাটি রেলওয়ে স্টেশনের কাছ থেকে কেনা হয়েছিল।

খুনের পর, ২৫ মে সোনম শিলিগুড়ি হয়ে ইন্দোরে পালিয়ে যায়। সেখানে সে তার প্রেমিক রাজ কুশওয়াহার সঙ্গে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতে শুরু করে। এরপর বারাণসী হয়ে উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরে যায়। বেশ কয়েকদিন পলাতক থাকার পর, ১০ জুন সোনমকে গাজিপুরের রাস্তার ধারের একটি ধাবা থেকে আটক করা হয়।

গুরুত্বপূর্ণ ফরেনসিক প্রমাণ ও অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ:
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফরেনসিক প্রমাণ উদ্ধার করেছে, যার মধ্যে রয়েছে সোনমের রক্তমাখা রেইনকোট, অন্য একজন অভিযুক্তের একটি মোবাইল স্ক্রিন এবং একটি জ্যাকেট।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চার অভিযুক্ত – রাজ কুশওয়াহা, আকাশ রাজপুত, বিকাশ ওরফে ভিকি এবং আনন্দ – কে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে বিশালই প্রথম রাজার উপর আক্রমণ করে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্রেফতারের সময় আনন্দ এখনও অপরাধের সময় যে পোশাক পরেছিল সেই পোশাকই পরেছিল।

পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, সোনম এবং রাজকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে যে, বিয়ের আগে থেকেই সোনম রাজার থেকে মানসিকভাবে দূরে সরে গিয়েছিল। সোনম রাজকে বলেছিল যে রাজার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে তার অস্বস্তি বোধ হচ্ছে এবং সে তাকে শেষ করে দিতে চায়। এই তথ্যগুলি এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে এক ঠান্ডা মাথার ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এই মামলার তদন্ত দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে এবং প্রতিটি নতুন তথ্য এই জঘন্য অপরাধের পেছনে থাকা অন্ধকার দিকগুলো আরও স্পষ্ট করে তুলছে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy