
বীরভূমে ফের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা সাংবাদিক কুণাল ঘোষের সোশ্যাল মিডিয়া উপস্থিতি নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, ঠিক তখনই রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতারের দাবিতে জেলায় ‘নারী সম্মান যাত্রা’ কর্মসূচিতে অংশ নিলেন। শুভেন্দু স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপি এই আন্দোলন চালিয়ে যাবে, যতক্ষণ না অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্টকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।
শুভেন্দুর তীব্র আক্রমণ: গরু-কয়লা পাচার থেকে কুরুচিকর মন্তব্য
এদিন সভামঞ্চ থেকে শুভেন্দু অধিকারী অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে একের পর এক আক্রমণ শানিয়েছেন। তিনি অনুব্রতকে গরু ও কয়লা পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগ ফের তুলেছেন। এছাড়া, নানা দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা তোলার অভিযোগ করে শুভেন্দু দাবি করেন যে, সেই টাকা মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে পাঠানো হয়।
সাম্প্রতিককালে ভাইরাল হওয়া একটি অডিও ক্লিপ নিয়েও শুভেন্দু সরব হন। ওই অডিও ক্লিপে বোলপুর থানার আইসি-কে আক্রমণ করে এবং তাঁর মাকে জড়িয়ে কুরুচিকর কথা বলতে শোনা যায়। শুভেন্দু অভিযোগ করেন যে, ওই কণ্ঠস্বর অনুব্রত মণ্ডলের। এই ঘটনায় অনুব্রতকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন। তিনি আরও দাবি করেন, “বোলপুর, লাভপুর, নানুর, কেতুগ্রাম, আউশগ্রাম, সবাই রাস্তায় নেমেছে। মিছিলের শুরু শেষ দেখাতে পারবেন না।” শুভেন্দু বলেন, “অনুব্রত মণ্ডল যা বলেছে, গোটা বীরভূমের মর্যাদায় আঘাত লেগেছে। অনুব্রতকে গ্রেফতার করতে হবে। আইসি-র মাকে টেনে কুকথা। নারীর সম্মান ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।”
যদিও এই বিতর্কের মধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অনুব্রত মণ্ডলকে বোলপুর থানার আইসি-কে কদর্য ভাষায় গালিগালাজ করার ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, অনুব্রত মণ্ডল সম্প্রতি ক্ষমা চাওয়ার একটি চিঠি দিয়েছেন, যেখানে তিনি লিখেছেন, “আমার ওই কথাগুলো বলা উচিত হয়নি। আমি দুঃখিত।” এরপর তিনি বোলপুরের এসডিপিও অফিসে হাজিরাও দিয়েছেন। তবে, এই ঘটনায় অনুব্রতর বিরুদ্ধে একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
ভাইরাল হওয়া ওই অডিও ক্লিপে অনুব্রত মণ্ডলকে ওই পুলিশ অফিসারকে বাংলো থেকে টেনে বের করে হেনস্থা করার হুমকি দিতে এবং তার স্ত্রী ও মাকে জড়িয়ে চরম কুরুচিকর মন্তব্য করতে শোনা যায় বলে অভিযোগ।
কেবল বিজেপি নয়, অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে অন্যান্য বিরোধী দলও। বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, “কান ধরে অনুব্রত মণ্ডলকে জেলে ঢোকাতে হবে।” কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীও অনুব্রতকে গ্রেফতারের দাবিতে সরব হয়েছেন।
উল্লেখ্য, এই প্রথম নয়, অতীতেও পুলিশকে হুমকি দিতে দেখা গেছে অনুব্রত মণ্ডলকে। গরু পাচার মামলায় গত বছর তিনি জেল থেকে ছাড়া পান। এরপর আবারও নতুন করে এই বিতর্কিত ঘটনায় জড়িয়ে পড়লেন অনুব্রত, যা রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে।