দমদমের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় অনিদ্রা সমস্যায় ভুগছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় মিন্টো পার্কের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সোমবার সারারাত তাঁর ঘুম না আসায় ভোরবেলায় ঘুমের ওষুধ দিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা তাঁর শারীরিক অবস্থা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।
গত শনিবার তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব নিয়ে সৌগত রায়কে চিকিৎসক মনোজ সাহার তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির সময় থেকেই তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। তাঁর রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে, এছাড়াও ইকো, ইইজি এবং স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বৈভব শেঠের পরামর্শে এমআরআই করা হয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে তাঁর হিপ জয়েন্টের এক্স-রে-ও সম্পন্ন হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সৌগত রায়ের তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব এখন কেটেছে। তাঁকে নরম জাতীয় খাবার দেওয়া হচ্ছে এবং ১২ ঘণ্টা ধরে স্যালাইনের মাধ্যমে ইনজেকশন ও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর রক্তে শর্করার পরিমাণ, পালস রেট এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রয়েছে। ইউরিনও স্বাভাবিকভাবে হচ্ছে।
জানা গেছে, হাসপাতালে ভর্তির আগে শনিবার থেকেই সৌগত রায় পেট খারাপের সমস্যায় ভুগছিলেন। এই সময় তিনি বাড়িতে পড়ে গিয়ে সাময়িকভাবে জ্ঞানও হারিয়ে ফেলেছিলেন। চিকিৎসকরা জানান, তাঁর টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং সর্দি-কাশির সমস্যা রয়েছে। কয়েক মাস আগেই তাঁর পেসমেকার প্রতিস্থাপন করা হয়। রবিবার হাসপাতালে ভর্তির পর তাঁর ব্রেনের সিটি স্ক্যান করা হলেও, তাতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ধরা পড়েনি।
এই নিয়ে চলতি বছরে তৃতীয়বার হাসপাতালে ভর্তি হলেন প্রবীণ এই সাংসদ। গত মার্চ মাসে লোকসভা অধিবেশন চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি, তখন হুইলচেয়ারে করে তাঁকে সংসদ ভবন থেকে বের করে এনে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর মে মাসে নিজের লোকসভা কেন্দ্রে একটি মন্দির উদ্বোধনে গিয়ে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় এবং হৃদযন্ত্রে সমস্যা থাকায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পেসমেকার বসানো হয়েছিল।
প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়ের বারংবার অসুস্থতা তাঁর অনুগামী ও রাজনৈতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। চিকিৎসকরা তাঁর সুস্থতার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিশ্লেষণমূলক সংবাদ প্রতিবেদন
সৌগত রায়ের লাগাতার অসুস্থতা: বয়সের ভার নাকি লাগামহীন রাজনৈতিক চাপ? প্রবীণ সাংসদের স্বাস্থ্য ঘিরে উদ্বেগ
দমদমের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় আবারও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যা তাঁর অনুগামী এবং রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। অনিদ্রা এবং তন্দ্রাচ্ছন্নতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও, এই বছরে এটি তাঁর তৃতীয়বার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া। তাঁর ধারাবাহিক অসুস্থতা কি কেবলই বয়সের ভারের ফল, নাকি লাগামহীন রাজনৈতিক চাপ এবং কর্মব্যস্ততা তাঁর স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
সোমবার সারারাত ঘুম না আসা এবং ভোরে ঘুমের ওষুধ দেওয়ার ঘটনা সৌগত রায়ের অনিদ্রা সমস্যার তীব্রতাকেই তুলে ধরে। ভর্তির সময় তাঁর তন্দ্রাচ্ছন্নভাব, পেট খারাপ এবং বাড়িতে পড়ে গিয়ে সাময়িকভাবে জ্ঞান হারানোর মতো ঘটনাগুলো উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। তাঁর পুরনো শারীরিক সমস্যা যেমন টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং সম্প্রতি পেসমেকার প্রতিস্থাপন – এগুলি সবই প্রবীণ নেতার ভঙ্গুর স্বাস্থ্যের ইঙ্গিত বহন করে। যদিও ব্রেন সিটি স্ক্যানে গুরুতর কিছু ধরা না পড়া কিছুটা স্বস্তির, তবুও বারংবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া তার শারীরিক অবস্থার স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
আশি পেরোনো সৌগত রায় রাজ্যের অন্যতম সক্রিয় সাংসদ। লোকসভা অধিবেশনে তাঁর সরব উপস্থিতি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রায়শই চোখে পড়ে। মার্চ মাসে লোকসভা চলাকালীন অসুস্থ হওয়া এবং মে মাসে নিজ কেন্দ্রে মন্দির উদ্বোধনে গিয়ে অসুস্থ হওয়া – এই ঘটনাগুলি তাঁর রাজনৈতিক ব্যস্ততা এবং তার ফলে স্বাস্থ্যের উপর চাপকে নির্দেশ করে। এই বয়সে এমন লাগাতার কাজের চাপ কতটা বাঞ্ছনীয়, তা নিয়েও রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। একজন প্রবীণ জননেতা হিসেবে তাঁর দায়বদ্ধতা এবং শারীরিক সক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা কতটা জরুরি, সেই প্রশ্নটি এখন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
চিকিৎসক মনোজ সাহা এবং স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ বৈভব শেঠের তত্ত্বাবধানে সৌগত রায়ের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। রক্ত পরীক্ষা, ইকো, ইইজি, এমআরআই এবং এক্স-রে-এর মতো পরীক্ষাগুলো তাঁর সামগ্রিক শারীরিক অবস্থা বোঝার জন্য জরুরি। তন্দ্রাচ্ছন্নতা এবং অনিদ্রার মতো সমস্যাগুলি স্নায়বিক কারণ, ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অন্য কোনো অন্তর্নিহিত সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। ১২ ঘণ্টা ধরে স্যালাইনের মাধ্যমে ইনজেকশন ও ওষুধ দেওয়া এবং সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার বিষয়টি তাঁর স্বাস্থ্যের প্রতি চিকিৎসকদের নিবিড় যত্নের প্রমাণ।
দমদমের সাংসদ সৌগত রায়ের ধারাবাহিক অসুস্থতা তাঁর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য তো বটেই, রাজ্যের রাজনৈতিক পরিসরেও এক গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। একজন জননেতা হিসেবে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য, কিন্তু তাঁর সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক চাপ এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের মধ্যে একটি ভারসাম্য আনা অত্যন্ত জরুরি। তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনার পাশাপাশি, এই ঘটনাটি প্রবীণ জননেতাদের কাজের চাপ এবং তাদের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নের প্রয়োজনীয়তাকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।
