অনলাইন জালিয়াতি, যেভাবে প্রায় ১২ কোটি টাকা খোয়ালেন ভারতীয় সফ্টওয়ার ইঞ্জিনিয়ার

অভিনব এক অনলাইন জালিয়াতির শিকার হয়ে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১১ কোটি ৮০ লাখ রুপি খুইয়েছেন এক ভারতীয় সফটওয়্যার প্রকৌশলী। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর— ১৭ দিনে এই অর্থ খোয়ান তিনি।

এক প্রতিবেদনে ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, গত ১১ নভেম্বর রাত সাড়ে ১০ টার দিকে বিক্রম (ছদ্মনাম) নামের ওই ৩৯ বছর বয়সী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের কাছে একটি মোবাইল কল আসে। যে নাম্বার থেকে কলটি এসেছিল, সেটি ছিল ৮৭৯১১২০৯৩১।

বিক্রম ফোন রিসিভ করার পর অপরপ্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি প্রথমে নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি ভারতের টেলি যোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া’র (টিআরএআই-ট্রাই) একজন কর্মকর্তা। এরপর ওই ব্যক্তি বলেন যে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে যে বিক্রমের নাম এবং আধার কার্ডের (ভারতীয় নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র) বিভিন্ন তথ্য অবৈধ বিজ্ঞাপন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানিমূলক বার্তা প্রদানে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ওই ব্যক্তি বিক্রমকে আরও বলেন যে এ ঘটনায় ইতোমধ্যে মুম্বাইয়ের কোলাবা সাইবার পুলিশ স্টেশনে একটি মামলা করা হয়েছে এবং তদন্তের সুবিধার জন্য বিক্রমের সিমকার্ডটি ব্লক করা হয়েছে।

এর দু-তিনদিন পর ফের আর একটি কল আসে বিক্রমের মোবাইলে। ৭৪২০৯২৮২৭৫ নাম্বার থেকে কল করা এক ব্যক্তি নিজেকে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন, বিক্রমের আধার কার্ডের তথ্য ব্যবহার করে কোনো এক জালিয়াত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছে এবং সেই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দেশের বাইরে অর্থপাচার করা হচ্ছে।

পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয় দেওয়া সেই ব্যক্তি বিক্রমকে এ ব্যাপারে অন্য কারোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, যে জালিয়াত তার আধার কার্ডের তথ্য ব্যবহার করছে— সে বেশ প্রভাবশালী এবং এ ব্যাপারে লোক জানাজানি হলে বিক্রম ও তার পরিবারের সদস্যদের জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

পরে ৯৯৯৭৩৪২৮০১ নামের একটি নাম্বার থেকে বিক্রমের আছে ফের ফোন আসে। এবার তাকে স্কাইপ অ্যাপ ডাউললোড করতে বলা হয়। বিক্রম স্কাইপ ডাউনলোড করলে পুলিশের ইউনিফর্ম পরা এক ব্যক্তি তাকে ভিডিও কল করেন এবং বলেন, যে ব্যক্তি বিক্রমের আধার কার্ডের তথ্য ব্যবহার করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছিল, তার নাম জানতে পেরেছেন তারা। ওই ব্যক্তির নাম নরেশ গয়াল এবং তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। বিক্রমের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ব্যবহার করে কর্ণাটকের কানাড়া ব্যাংকে তিনি একটি অ্যাকাউন্ট খুলেছেন এবং সেই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৬ কোটি টাকা লেনদেন করেছেন তিনি।

পরে ২৫ নভেম্বর বিক্রমের সঙ্গে ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন আরও এক ভুয়া পুলিশ কর্মকর্তা। ভিডিও কলে ওই ভুয়া কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে নরেশ গয়াল বলেছেন যে অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে বিক্রম ও তার যোগসাজশ ছিল। তিনি আরও বলেন বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে এবং বিচারপ্রক্রিয়ায় তারা বিক্রমের সহযোগিতা চান। যদি বিক্রম সহযোগিতা না করেন, তাহলে তাকে এবং তার পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে হুমকিও দেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

পরে তারা বিক্রমকে বলেন, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া’র (আরবিআই) গাইডলাইন অনুযায়ী তারা বিক্রমের অ্যাকাউন্টের লেনদেন যাচাই করতে চান এবং কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর তাকে প্রদান করে সেসব অ্যাকাউন্টে অর্থ পাঠাতে বলেন।

ভুয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের কথা মেনে প্রথমে ৭৫ লাখ টাকা পাঠান বিক্রম, পরে আরও ৩ কোটি ৪১ লাখ পাঠান। এভাবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেসব অ্যাকাউন্ট নাম্বারে ১১ কোটি ৮০ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন বিক্রম।

কিন্তু প্রতারকরা আরও অর্থ পাঠাতে বললে বিক্রম বুঝতে পারেন যে তিনি সাইবার জালিয়ারিত শিকার হয়েছেন এবং পুলিশ স্টেশনে ছুটে যান।

শেষ খবর অনুযায়ী, ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি আইন এবং ভারতের দণ্ডবিধি ভারতীয় নয়া সংহিতার (বিএনএস) ৩১৮ ও ৩১৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী বেঙ্গালুরুর একটি থানায় মামলা করেছেন বিক্রম। তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিল টাইমস অব ইন্ডিয়া, তবে তিনি এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হননি।

সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy