
বিশ্বের মানচিত্রে এমন কিছু দেশ আছে, যা তাদের অনন্য বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। তেমনই একটি দেশ হলো টুভালু, প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে অবস্থিত এক ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র, যা হাওয়াই এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যবর্তী ওশেনিয়ার পলিনেশিয়া উপ-অঞ্চলে অবস্থিত। তিনটি রিফ দ্বীপ এবং ছয়টি অ্যাটল নিয়ে গঠিত এই দেশটি তার আয়তন, জনসংখ্যা এবং জীবনযাত্রার কারণে বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয়।
জনসংখ্যা ও আয়তনে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দেশগুলির একটি:
২০২২ সালের আদমশুমারি অনুসারে, টুভালুর জনসংখ্যা ছিল মাত্র ১০,৬৪৩ জন। এই সংখ্যা এটিকে ভ্যাটিকান সিটি এবং নাউরুর (Nauru) পর বিশ্বের তৃতীয় সবচেয়ে কম জনবহুল দেশ হিসেবে চিহ্নিত করে। উল্লেখ্য, ভ্যাটিকান সিটি এবং নাউরু সবচেয়ে কম জনবহুল দেশ।
আয়তনের দিক থেকেও টুভালু বিশ্বের অন্যতম ক্ষুদ্রতম দেশ। এর মোট আয়তন মাত্র ২৬ বর্গ কিলোমিটার, যা এটিকে বিশ্বের চতুর্থ ক্ষুদ্রতম দেশ করে তোলে। শুধুমাত্র ভ্যাটিকান সিটি, মোনাকো এবং নাউরুই আয়তনের দিক থেকে এর চেয়ে ছোট।
পলিনেশিয়ানদের আদি বসতি ও জীবনযাত্রা:
ইতিহাসবিদদের মতে, টুভালুর প্রথম বাসিন্দারা ছিলেন পলিনেশিয়ানরা। প্রায় ৩০০০ বছর আগে প্রশান্ত মহাসাগর পেরিয়ে পলিনেশিয়ানদের অভিবাসনের অংশ হিসেবে তারা এখানে এসেছিলেন। পলিনেশিয়ান ভ্রমণকারীরা প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে চলাচলের জন্য ক্যানো ব্যবহার করতেন। গবেষণায় দেখা গেছে যে, টুভালুতে পলিনেশিয়ান বসতি সামোয়া এবং টোঙ্গা থেকে অভিবাসনের ফলে উদ্ভূত হয়েছিল।
দ্বীপপুঞ্জের সীমিত আবাদযোগ্য জমির কারণে টুভালুর বাসিন্দারা মূলত আমদানি করা খাদ্য এবং মাছ ধরার উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। দেশটির উচ্চতা কম হওয়ায় এটি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকিতে রয়েছে, যা তাদের অস্তিত্বের জন্য একটি বড় হুমকি।
অদ্ভুত নিয়ম: গাড়ি নিষিদ্ধ, শুধু সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্তরা চালতে পারেন:
টুভালুর অন্যতম উল্লেখযোগ্য এবং অদ্ভুত একটি নিয়ম হলো, এখানকার স্থানীয় মানুষদের ব্যক্তিগত গাড়ি রাখার অনুমতি নেই। প্রতিবেদন অনুসারে, শুধুমাত্র সরকারি কর্মীরাই চার চাকার গাড়ি রাখার অনুমতি পান। এই নিয়মটি টুভালুকে বিশ্বের কয়েকটি বিরল দেশের মধ্যে অন্যতম করে তুলেছে, যেখানে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার সীমিত।
টুভালু তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং অনন্য জীবনযাত্রার জন্য পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে, তবে এর ভঙ্গুর পরিবেশগত পরিস্থিতি এবং ছোট আকারের কারণে এটি একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বাস্তুতন্ত্রের অংশ।