
বর্ষার আগমনী সুর বাজতেই রাজ্যে নেমে এল বিষাদের ছায়া। ডেঙ্গির মরণছোবলে প্রাণ হারাল সারণী বন্দ্যোপাধ্যায় নামে মাত্র ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরী। দক্ষিণ দমদম পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, সপ্তম শ্রেণির এই মেধাবী ছাত্রীর অকাল প্রয়াণে এলাকায় গভীর শোকের পাশাপাশি নতুন করে ডেঙ্গি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
হাসপাতাল থেকে মর্মান্তিক খবর:
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিল সারণী। প্রথমে দক্ষিণ দমদমের একটি স্থানীয় হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হওয়ায় ১৯শে জুন তাকে তপসিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সারণীর প্লেটলেট সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গিয়েছিল এবং ফুসফুসে জল জমার কারণে তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। সমস্ত রকম চেষ্টা সত্ত্বেও শনিবার ভোররাতে মৃত্যুর কাছে হার মানে সারণী। হাসপাতালের মৃত্যু শংসাপত্রে ডেঙ্গিকেই তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বৈদ্যনাথ গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী সারণীর চলে যাওয়া যেন স্কুলের সহপাঠী ও শিক্ষকদের মধ্যেও শোকের ছায়া ফেলেছে।
এলাকায় উদ্বেগ ও স্থানীয়দের আর্তি:
সারণীর মৃত্যুতে এলাকার বাসিন্দারা বিশেষভাবে চিন্তিত। একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “সাধারণ জ্বর ভেবেই চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু এত দ্রুত ওর অবস্থা খারাপ হয়ে গেল যে আমরা বুঝে উঠতে পারিনি।” এই ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছে গত ডিসেম্বরে চন্দননগর হাসপাতালের চিকিৎসক স্বাতী দে-র ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনা।
চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের বার্তা: সতর্কতা আবশ্যক:
প্রতি বছর বৃষ্টির মরশুম শুরু হলেই ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ে। বিগত কিছুদিন ধরে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় চলছে বৃষ্টিপাত। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা বারবার জনসাধারণকে সতর্ক করছেন। তাদের পরামর্শ, বাড়ির আশেপাশে বা কোথাও জল জমতে না দেওয়া, মশার লার্ভা যাতে বংশবৃদ্ধি করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা এবং দিনের বেলাতেও ফুলহাতা পোশাক পরা।
এছাড়াও, সামান্য জ্বর হলেও দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা হচ্ছে। তিন দিনের মধ্যে জ্বর না কমলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডেঙ্গি পরীক্ষা করানো জরুরি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডেঙ্গি প্রতিরোধে কেবল প্রশাসনের উদ্যোগই যথেষ্ট নয়, সাধারণ মানুষের সচেতনতা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারণীর এই অকাল মৃত্যু ডেঙ্গি মোকাবিলায় আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।