
নতুন জীবনের আগমনী বার্তা নিয়ে যখন বৈভব প্যাটেল (২৯) এবং জিনাল গোস্বামী (২৭) স্বপ্ন বুনছিলেন, তখনই এক মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় থমকে গেল তাঁদের সব আশা। গত ১২ জুন আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন অন্তঃসত্ত্বা জিনাল ও তাঁর স্বামী বৈভব। জিনাল সাত মাসের গর্ভবতী ছিলেন, এবং তাঁদের প্রথম সন্তানের জন্ম ঘিরে পরিবারে ছিল সীমাহীন উত্তেজনা।
২ জুন, ধুমধাম করে পালন করা হয়েছিল জিনালের সাধভক্ষণ অনুষ্ঠান। সেদিন দুই পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের উপস্থিতিতে আনন্দ-উল্লাস ছিল বাঁধনহারা। কিন্তু কে জানত, সেই আনন্দই কয়েক দিনের মধ্যে পরিণত হবে গভীর শোকে? এই দম্পতির শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে গত সোমবার।
গুজরাটের ধোলকা তহসিলের কেলিয়া ভাসনা গ্রামের বাসিন্দা হলেও বৈভব ও জিনাল লন্ডনে থাকতেন এবং সম্প্রতি হ্যাম্পশায়ারের সাদাম্পটনে চলে এসেছিলেন। সাধভক্ষণের জন্যই তাঁরা আহমেদাবাদে এসেছিলেন এবং এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI 171-এ লন্ডন ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই অভিশপ্ত বিমানটি উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিধ্বংসী দুর্ঘটনায় পড়ে।
দম্পতির ঘনিষ্ঠ বন্ধু নীরব প্যাটেল সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁদের প্রথম সন্তানের আগমনে বৈভব ও জিনাল খুবই উচ্ছ্বসিত ছিলেন। নীরবের কথায়, “বৈভবের বাবা ছিলেন না, তাই পরিবারের দেখাশোনা করার দায়িত্ব তাঁর কাঁধেই ছিল। ফ্লাইটের দু’দিন আগে সে আমাকে ফোন করে জানিয়েছিল যে সে বাড়ি ফিরছে। আমরা খুব ভালো বন্ধু ছিলাম, একসঙ্গে গোয়া বা রাজস্থানের মতো ভারতের অনেক জায়গায় ঘুরেছি। এটা একটা বিশাল ক্ষতি।”
আহমেদাবাদ থেকে লন্ডন গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কয়েক সেকেন্ড পরই এয়ার ইন্ডিয়ার ওই বোয়িং বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। বিমানটিতে ২৪২ জন যাত্রী, দুইজন পাইলট এবং ১০ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় একমাত্র ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক বিশ্বাস রমেশ কুমার অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন। নিহতদের মধ্যে গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানিও ছিলেন। এছাড়াও, ভূমিতে থাকা বেশ কয়েকজনও এই বেনজির বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান।
বৈভব ও জিনালের অকালমৃত্যু তাঁদের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে গভীর শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। এক নতুন জীবনের স্বপ্ন যেভাবে অকালে ঝরে গেল, তা সমগ্র সমাজকেই শোকস্তব্ধ করেছে।