“৩৫ বছরে এই প্রথম গোটা কাশ্মীর বনধ্”-শাহ-ওমরকে ফোন করলেন রাহুল গান্ধী

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের লক্ষ্য করে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় গোটা দেশ গভীর শোকাহত ও স্তম্ভিত। মঙ্গলবার বৈসর এলাকায় এই নৃশংস হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটে, আহত হয়েছেন অন্তত ১৭ জন। এই ঘটনার পরপরই কেন্দ্র এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ:

পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জরুরি বৈঠক করেছেন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (IB), স্বরাষ্ট্রসচিব, মন্ত্রকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের ডিজিপির সঙ্গে। তিনি ইতিমধ্যে শ্রীনগরে পৌঁছেছেন এবং পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও সৌদি আরব সফর কাটছাঁট করে তড়িঘড়ি দেশে ফিরে এসেছেন।

বিরোধীদের সমর্থন ও ঐক্যের বার্তা:

এই জঘন্য ও কাপুরুষোচিত হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন বিরোধী দলের নেতারাও। তাঁরা কেন্দ্রকে প্রয়োজনীয় সবরকম সহযোগিতা ও সমর্থন দেওয়ার বার্তা দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে ফোনে কথা বলে পরিস্থিতির খোঁজখবর নিয়েছেন।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’-এ একটি পোস্টে জানান, তিনি অমিত শাহ, জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এবং কংগ্রেস নেতা তারিক কারার সঙ্গে এই জঙ্গি হামলা নিয়ে কথা বলেছেন। রাহুল গান্ধী বলেছেন, “আমি সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনেছি। নিহতদের পরিবার যেন ন্যায়বিচার পায়— এটাই আমাদের সকলের অঙ্গীকার। সন্ত্রাসবাদ দমনে আমাদের সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, এই দুঃসময়ে জাতীয় ঐক্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। সরকারের উচিত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। পাশাপাশি, কাশ্মীরের পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে যেকোনও রাজনৈতিক মতবিরোধ ভুলে গিয়ে সব পক্ষের উচিত একযোগে কাজ করা।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি লিখেছেন, “এই হামলার দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং সীমান্ত-পার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত জবাব দিতে হবে। সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি।”

কাশ্মীরে সর্বাত্মক বনধ পালন:

পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর ভয়াবহ হামলার প্রতিবাদে বুধবার কাশ্মীর উপত্যকায় সর্বাত্মক বন্ধ পালিত হয়েছে। এই ধরনের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে উপত্যকায় ৩৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সর্বস্তরে এমন ব্যাপক বন্ধ দেখা গেল। বিভিন্ন সংগঠন এই বন্ধের ডাক দেয় এবং তা সর্বস্তরে সমর্থন পায়। শ্রীনগরসহ উপত্যকার বিভিন্ন অঞ্চলে দোকান, জ্বালানি স্টেশন ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। শুধুমাত্র নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান খোলা ছিল। গণপরিবহন স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করেছে। বেসরকারি স্কুলগুলো বন্ধ ছিল, তবে সরকারি স্কুল খোলা রাখা হয়। হামলার পর থেকে উপত্যকার পর্যটন এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।

ইমরান মাসুদের কড়া বার্তা:

এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেস সাংসদ ইমরান মাসুদ বলেন, “সরকারের উচিত জঙ্গিদের বলপ্রয়োগে দমন করা। কোনও নমনীয়তা বা আপসের প্রশ্নই আসে না।” তিনি তাঁর সাম্প্রতিক কাশ্মীর সফরের উল্লেখ করে বলেন, তিন দিন আগে সেখানে মানুষ নিরাপদে ঘুরছিলেন, পর্যটনে প্রবল উৎসাহ ছিল, কিন্তু এই হামলায় সেই শান্ত পরিস্থিতি রাতারাতি ধ্বংস হয়ে গেল।

কাশ্মীরের পহেলগামে ঘটে যাওয়া এই জঘন্য হামলা শুধু মানবিক দিক থেকেই বেদনাদায়ক নয়, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাগত দিক থেকেও ভারতের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই সংকট মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি বিরোধী দলের নেতারাও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ার বার্তা দিয়েছেন। এখন দেখার, দ্রুততার সঙ্গে দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের শিকড় উপড়ে ফেলা এবং ভুক্তভোগী পরিবারদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা কতটা সম্ভব হয়।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy