১০০ বছর বাঁচতে চাইলে মানতে হবে যে ৭ উপায়!

মানুষ আর কতদিন বাঁচে? ৬০, ৭০ কিংবা ৮০ বছর। খুব বেশি হলে ৯০ বছর। কিন্তু পৃথিবীতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না তার বাঁচার আকুতি নেই। যে দীর্ঘ জীবন কামনা করে না। মূলত, প্রতিটি মানুষই শতায়ু লাভের প্রার্থনা করে। সুন্দর এই পৃথিবীর মায়া কেউ ছেড়ে যেতে চায় না। কিন্তু না চাইলেই কি, সময়ের ডাকে সবাইকেই সাড়া দিয়ে চলে যেতে হয় একদিন।

তবে সম্প্রতি ড. ডন হারপার নামে জনপ্রিয় এক ব্রিটিশ চিকিৎসক ‘১০১ বছর সুস্থ হয়ে বাঁচুন’ শিরোনামে একটি বই লিখেছেন। স্বাস্থ্যবিষয়ক এই বইটিতে হারপার দেখিয়েছেন কীভাবে একজন মানুষ সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে অন্তত ১০০ বছর বাঁচতে পারে।

তার লিখা সেই বই থেকে শতবর্ষী হওয়ার জন্য ৭টি উপায় খুঁজে বের করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। পাঠকের জন্য সেই ৭ উপায় তুলে ধরা হলো:

ঘুম: দীর্ঘজীবী হওয়ার জন্য ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি প্রতিদিন কতটুকু সময় ঘুমান কিংবা আপনার ঘুম কেমন হয় সেটার উপর নির্ভর করবে আপনার সুস্থতা। তবে খুব বেশি ঘুম যেমন খারাপ আবার কম ঘুমালেও স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা থাকে।

এ ব্যাপারে ড. হারপার বলেন, ‘অনেকেই দিনের বেলায় কমবেশি ঘুমাই। এই ঘুমকে বলা হয় ‘ক্যাটন্যাপ’। তবে এই ক্যাটন্যাপ বেশি হলে তার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। মূলত রাতের ঘুমটাই আসল। রাতেই ঘুমের দেশে তলিয়ে যেতে হবে।’

হাঁটাচলা: আজকাল শহুরে জীবনে অভ্যস্ত মানুষের শারীরিক পরিশ্রম করার কোনও দরকারই হয় না। ঘরে কিংবা ঘরের বাইরে সর্বদা ফ্যান, এসি আরও কত আয়েশি ব্যবস্থা। কিন্তু প্রতিদিন কায়িক পরিশ্রম শরীরকে সবল ও সুস্থ রাখতে বড় ভূমিকা পালন করেন। আর সেজন্য নিয়মিত হাঁটাচলা জরুরি।

১০০ বছর বেঁচেছেন এমন মানুষদের সম্পর্কে ড. হারপার তার বইতে লিখেছেন, ‘এদের সবার মধ্যেই একটি জিনিসের মিল আছে। সেটা হলো তারা কোন অ্যারোবিকসের (এক ধরনের কঠিন ব্যায়াম) ক্লাসে যায়নি, কিম্বা স্কোয়াশ খেলতেও যায়নি। কিংবা ম্যারাথনেও অংশ নেয়নি। কিন্তু তারা জীবনে প্রচুর হেঁটেছেন।’

লিভারের বিশ্রাম: লিভার কিংবা যকৃত মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন কিংবা সাময়িক আনন্দ পাওয়ার জন্য আপনার এই যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অনেকেই পানাহারে অভ্যস্ত। কিন্তু তা লিভারের জন্য যম।

জিন: বিশেষ কোনও অসুখে পড়ার প্রবণতা হয়ত আপনার মধ্যে বেশি থাকতে পারে। আপনার পরিবারের বা বংশের অন্যান্য সদস্যদের অসুখ-বিসুখের ইতিহাস জানা থাকলে সেটা সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপনে সাহায্য করতে পারে।

এ ব্যাপারে ড. হারপার বলেন, ‘জিন শরীরে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোন কোন জিনের কারণে আমরা কি ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারি, সেটা জানলে আমাদের সুবিধা হবে। আমি তো আর আমার জীবন নিয়ে যন্ত্রণায় ভুগতে চাই না। তাই জিন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা ভালো।’

কার্বোহাইড্রেট সচেতনতা: আজকাল ভাত ও রুটির মতো কার্ব পরিহার করা এক ধরনের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ব্যালেন্সড ডায়েটের জন্য অবশ্যই এ জাতীয় খাবার খেতে হবে। তবে সাবধানতার সঙ্গে।

হারপারের ভাষ্য, ‘আমি সব সময় রিফাইন বা মসৃণ কার্ব না খেয়ে বরং একটু জটিল ধরনের (মোটা আটার) কার্ব খাওয়ার কথা বলবো। এটা হতে পারে বাদামি চাল কিংবা আস্ত শস্যদানা সমেত মোটা আটার রুটি।’

হাসিখুশি থাকা: অনেকেরই অনেক কিছু আছে। কোনও বৈষয়িক অভাব নেই। কিন্তু মনের সুখের ছোঁয়া সে পায় না। মন খুলে একটু হাসতেও সে জানে না। কিন্তু মনে রাখতে হবে দীর্ঘ জীবন লাভ করার জন্য হাসিখুশি থাকাটা টনিকের মতো কাজ করে। বিপরীতে মনের মধ্যে কষ্ট পুষে রাখা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। হারপার এজন্য সবাইকে পজেটিভ মানসিকতা গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন।

চাপমুক্ত থাকা: জীবনের বাস্তবতায় চাইলেই হয়তো অনেক সময় চাপ কিংবা চিন্তামুক্ত থাকা যায় না। প্রতিদিনের জীবন সংগ্রামে আমাদের চাপের মধ্যে থাকতেই হয়। তবে যদি ১০০ বছর বাঁচতে চান তবে প্রথমেই সব চাপ, দুঃশ্চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। এজন্য প্রত্যেককেই নিজ নিজ সমস্যাগুলো ভেবে তা থেকে নিজেকে মুক্ত থাকার কথা বলেছেন ড. হারপার।
Ts

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy