সুস্থতার লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য খাদ্যতালিকা থেকে ফ্যাট বাদ দেওয়ার অভ্যেসটা শুরু হয়েছিল আজ থেকে বছর 10-15 আগে। তার পর তো রোগভোগের সংখ্যা কমার কথা, তাই না? কিন্তু উলটে ভিটামিন ডি-এর অভাব, অবসাদ, হাড়ের স্বাস্থ্যহানি, ত্বকের সমস্যার মতো একেবারে নতুন কিছু সমস্যা দেখা দিল। বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে, হার্টের অসুখও মোটেই কমেনি। তা হলে গন্ডগোলটা কোথায় হল?
সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, গলদটা হয়েছিল গোড়ায়। স্বাস্থ্যের দিক সামলাতে গিয়ে ফ্যাট যখন আমরা ছাঁটতে আরম্ভ করলাম, তখন দূরদৃষ্টিতেই অভাব হয়েছিল। সব ফ্যাট মোটেই আপনার হৃদরোগের পথ প্রশস্ত করে না, বরং তা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্ট। রোজের খাদ্যতালিকায় ভালো মানের ফ্যাট রাখতেই হবে। যেমন ধরুন, বাদাম বা অ্যাভোকাডো খুব ভালো ফ্যাট। যে কোনও এক্সট্রা ভার্জিন ভোজ্য তেল ভালো। উচ্চমানের দুধ থেকে প্রস্তুত ঘি বা মাখনও খাওয়া যায়। দূরে থাকতে হবে ট্রান্স ফ্যাট থেকে, কিন্তু মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট আর পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট সামগ্রিক সুস্থতার জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়। জানেন তো, ভিটামিন ডি বা কিছু মিনারেল ফ্যাট ছাড়া শরীর শোষণ করতেই পারবে না? ফলে অত্যন্ত লো ফ্যাট ডায়েট যাঁরা অনুসরণ করবেন, তাঁদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। তা ছাড়া হাড়, বিশেষ করে জয়েন্টের হাড় সুস্থ রাখার জন্যও ফ্যাটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
ফ্যাটের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করাটা খুব জরুরি। সাধারণত বাঙালি বাড়ির রোজের রান্নায় খুব একটা বেশি ফ্যাট থাকে না। তাই সুস্থ থাকতে চাইলে আপনাকে মোটেই স্রেফ স্যুপ-স্যালাডের উপর ভরসা রাখতে হবে না। মাঝে সাঝে পাঁঠার মাংস, ফুল ফ্যাট দুধ, বাড়িতে বানানো ভাজা খাবার খেলেও খুব অসুবিধে হয় না। দূরে থাকুন রাস্তার ভাজাভুজি, অতিরিক্ত ক্রিম দেওয়া কেক-পেস্ট্রি, ভাজা মিষ্টি ইত্যাদি থেকে। কোনও পরিস্থিতিতেই লো ফ্যাট খাবারের চক্করে পড়বেন না। মনে রাখবেন, ফ্যাট খাবারের স্বাদ বাড়ায়। লো-ফ্যাট খাবারকে সুস্বাদু করে তুলতে সাধারণত বেশি মিষ্টি মেশানো হয়। সেটা স্বাস্থ্যের পক্ষে আরও খারাপ! ভালো বলেই মুঠো মুঠো বাদাম বা একগাদা ঘি খাওয়াটাও কোনও কাজের কথা নয়, সেটাও আপনাকে বুঝতে হবে।