
বিশ্বের প্রায় সব দেশের রাজধানীতে জনসংখ্যা যেখানে ক্রমাগত বাড়ছে, সেখানে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের জনসংখ্যা কমছে। কয়েক বছর ধরেই মানুষ সিউল ছেড়ে অন্য শহরগুলোর দিকে ঝুঁকছে। কিন্তু কেন? দক্ষিণ কোরীয় রাজধানীতে এমন কী নেই যা আশপাশের অন্য কোনো শহরে পাওয়া যায়?
ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে জানা যায়, ১৯৯২ সালে সিউলের জনসংখ্যা ছিল ১ কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার। ২০২২ সালের মে মাসে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯০ লাখ ৪৯ হাজারে। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানীতে জনসংখ্যা যে কমছে তা প্রথম নজরে পড়েছিল ২০১৬ সালে। সেবারই প্রথম সিউলের জনসংখ্যা এক কোটির নিচে নেমে যায়।
দেশটির স্বরাষ্ট্র ও নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় মনে করছে, এই ধারা চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে শহরটির জনসংখ্যা ৭২ লাখে নেমে যাবে।
কিম হিউন-জুং সিউল ছেড়ে গাংওন প্রদেশের বাসিন্দা হয়েছেন ২০১৫ সালে। সুন্দর ছিমছাম এক শহরে সপরিবারে চলে যাওয়ার কারণে তিনি আনন্দিত। কিন্তু সিউল ছাড়লেন কেন?
কিম হিউন-জুং বলেন, বেশিরভাগ মানুষই সিউল ছেড়ে যায় মূলত বাড়ির অতিরিক্ত দামের কারণে। সেখানে বাড়ির দাম ও ভাড়া খুব বেশি। এ কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক স্বামীর সঙ্গে কথা বলে সপরিবারে গাংওনে স্থায়ী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন খণ্ডকালীন স্কুলশিক্ষক কিম।
গাংওনে অবশ্য যা চেয়েছিলেন, তার সবই পেয়েছেন। বাড়ি পেয়েছেন অনেক কম দামে। বাচ্চাদের জন্য ভালো স্কুল রয়েছে, পড়াতে হলে কোনো বাড়তি টাকা বা অনুদান দিতে হয় না। গানবাজনা বা নাচ, ছবি আঁকা শেখাতেও প্রচুর টাকা লাগে না। এগুলো কিম আর তার স্বামীর তৃপ্তির জায়গা। তবে সন্তানদের কাছেও গাংওন খুব প্রিয়। কারণ এখানে সিউলের মতো ঘরে বসে দিন পার করতে হয় না। বাইরে খোলা মাঠ, সুন্দর পার্ক রয়েছে। পড়ালেখার বাইরের সময়টা আনন্দেই কাটে তাদের।
জানা যায়, সিউলে বাড়ির দাম বাড়ছে দ্রুতগতিতে। ২০১৭ সালে সেখানে একেকটি বাড়ির গড় দাম ছিল ৩৪ কোটি ১০ লাখ কোরিয়ান ওন (২ লাখ ৫২ হাজার ডলার), ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৬২ কোটি ৬০ লাখ কোরিয়ান ওন। বাড়িভাড়াও খুব বেশি। তাছাড়া গত কয়েক বছরে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে দক্ষিণ কোরীয় সরকার।
ট্রয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অনুষদের অধ্যাপক ড্যান পিঙ্কস্টন মনে করেন, গত কয়েক বছরে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ার কারণেও অনেকে সিউল ছাড়ছেন। তিনি বলেন, সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। এর ফলে সাবওয়ে লাইন বেড়েছে, হাইস্পিড ট্রেনের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। মানুষ খুব সহজেই দূর-দূরান্ত থেকে রাজধানীতে যাওয়া-আসা করতে পারছে।
পিঙ্কস্টন বলেন, এখন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে যেসব শহর গড়ে তোলা হয়েছে, অনেকে সেসব জায়গায় থাকতে পছন্দ করছেন। ওই শহরগুলোতে আধুনিক স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদি থাকায় জীবনযাপনের মানও বেশ উন্নত। তাই অনেকেই এখন সেসব জায়গা থেকে সিউলে গিয়ে কাজ করছেন।