বিজ্ঞানীদের মতে, চণ্ডাল রাগ সরাসরি জখম করে হার্ট ও ধমণীকে? কথায় কথায় রেগে ফাটাফাটি করেন বা গুম হয়ে বসে থাকেন এমন দেড় হাজার জনের ওপর ৩৬ বছর ধরে গবেষণা হয়েছে? দেখা গেছে, এদের অনেকেরই অল্প বয়সে প্রেশার বাড়ে, ইস্কিমিয়া হয়, হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যায়? আবার ধরুন হাইপ্রেশার নেই বলে ভাবলেন আপনি ঝামেলামুক্ত, এমনও নয়?
রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এমন ১২ হাজার ৯৮৬ জন নারী-পুরুষকে স্টাডি করে ২০০০ সালে সার্কুলেশন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যাদের রাগ খুব বেশি তাদের মধ্যে ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজের আশঙ্কা স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ও হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা তিন গুণ?
স্বাভাবিক মানুষ বলতে একেবারে মাটির মানুষ হতে হবে এমন নয়? মাঝেমধ্যে অল্প-স্বল্প রাগ করলেন, মানুষকে দু’চার কথা শোনালেন, কি চুপ করে বসে থাকলেন, তাতে তেমন ক্ষতি নেই? বিপদ, রাগ মাত্রা ছাড়ালে? বিপদ, ক্রনিকালি রেগে থাকলে?
বিজ্ঞানীদের মতে, চণ্ডাল রাগ সরাসরি জখম করে হার্ট ও ধমণীকে৷ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ আদুল ইসলাম বলেন, ‘‘প্রবল রাগ ওঠামাত্র শরীরে শুরু হয় ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স৷ তার হাত ধরে প্রচুর স্ট্রেস হরমোন তথা নিউরোকেমিক্যাল বেরোতে শুরু করে৷ তাদের প্রভাবে হার্টরেট ও প্রেশার বাড়ে৷ করোনারি আর্টারি সঙ্কুচিত হয়৷ আবার করোনারি আর্টারিতে যদি কোনও চর্বির প্লাক জমে থাকে তা ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ এই সব এফেক্ট থাকে প্রায় দু’ঘণ্টা পর্যন্ত৷ ফলে এই সময় হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যায়৷’’ আদুলের অভিমত, প্রচণ্ড রাগের মুহূর্তে যাঁরা ব্যায়াম করে রাগ কমাতে যান, তাঁদের আশঙ্কা আরও বাড়ে৷ আবার প্রচণ্ড স্ট্রেসের ফলে হার্টের ইলেকট্রিকাল ইমপাল্স ডিসরাপ্টেড হয়ে সূত্রপাত হয় বিপজ্জনক হার্ট রিদম ডিস্টারব্যান্সের৷ সেখান থেকেও প্রাণ যেতে পারে৷
আর একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, শরীরে স্ট্রেস হরমোনের বাড়াবাড়ি হলে রক্তে সি–রিয়্যাকটিভ প্রোটিন বা সিআরপি বাড়তে শুরু করে৷ ২০০৪ সালে সাইকোসোমাটিক মেডিসিন–এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধে ডিউক ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা ১২৭ জন সুস্থ নারী–পুরুষের উপর সমীক্ষা করে জানিয়েছেন, যাঁদের রাগ ও হোস্টিলিটি খুব বেশি বা যাঁরা কথায় কথায় টেন্সড বা ডিপ্রেস্ড হয়ে পড়েন, সাধারণ মানুষের তুলনায় তাঁদের রক্তে সিআরপি বেশি থাকার চান্স প্রায় দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ, যা কিনা হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম মার্কার৷