শুরুর আগেই মুখ থুবড়ে পড়ল ত্রিপুরা-ঢাকা-কলকাতা বাস সার্ভিস

বাস ভর্তি যাত্রী ছিল, উদ্বোধনের জন্য ত্রিপুরা সরকারের প্রতিনিধি মেয়র, পরিবহন দপ্তরের আমলা থেকে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন। বাসও সাজানো হয়েছিল ফুলের মালায়। কিন্তু ঘুরলো না বাসের চাকা ! শেষ মুহূর্তে বন্ধ করে দিতে হলো ত্রিপুরা-ঢাকা-কলকাতা বাস যাত্রার আনুষ্ঠানিক সূচনা।

ভারতের কেন্দ্র-রাজ্য এবং বাংলাদেশ তিন পক্ষের সমন্বয়ের অভাবে আন্তর্জাতিক এই বাস সার্ভিস পুনরায় শুরু করতে বৃহস্পতিবার বিপাকে পড়ে ত্রিপুরা রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (টিআরটিসি)। পরে বিকল্প উপায়ে যাত্রীদের গন্তব্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

২০০৩ সালে প্রথম আগরতলা-ঢাকা যাত্রীবাহী বাস চলাচল শুরু হয়। বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় ২০১৫ সালে আগরতলা ঢাকা হয়ে কলকাতা পর্যন্ত বাস চলাচল শুরু হয়। করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ বন্ধ করে দেওয়া হয় এই রুটের যাত্রীবাহী বাস যাত্রা। বৃহস্পতিবার ফের আনুষ্ঠানিক যাত্রীবাহী বাস চলাচল শুরুর ঘোষণা দিয়েছিল টিআরটিসি। সেই মোতাবেক প্রায় ১৬ জন যাত্রী টিকিট কেটে এদিন সকাল সকাল উঠে পড়েন বাসে। দুই দেশের আন্তর্জাতিক এই বাস চলাচল পুনরায় শুরু উপলক্ষ্যে আগরতলা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালেই ছোটখাটো এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে টিআরটিসি। বাস সাজানো হয় ফুলের মালায়।

আনুষ্ঠানিক বাস যাত্রার উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরাস্থ উপ-দূতাবাসের সহকারী হাইকমিশনার মোহাম্মদ আরিফ , আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, টিআরটিসির ম্যানেজিং ডিরেক্টরের রাজেশ কুমার দাস। এ ছাড়াও ত্রিপুরার পরিবহন দপ্তরের সচিবসহ একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে দেখা যায়, ভারত সরকারের তরফ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রীবাহী বাস পুনরায় চালু সংক্রান্ত কোনো চিঠি পাঠানোই হয়নি। ফলে বাংলাদেশ সরকারের তরফেও কোনোরকম চিঠি ত্রিপুরা সরকারের কাছে পাঠানো হয়নি। ফলে শুরুর আগেই মুখ থুবড়ে পড়ে এই বাস সার্ভিস। শেষে ওই ১৬ যাত্রীকে বাস যাত্রার মূল্য ফেরত দিয়ে বিকল্প উপায়ে তাদের গন্তব্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

চূড়ান্ত অপেশাদারীত্বের মনোভাব দেখিয়়ে ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের সরকারি পরিবহন সংস্থা টিআরটিসির ম্যানেজিং ডিরেক্টরের রাজেশ কুমার দাস এদিন দাবি করেন, ১২ এপ্রিল আন্তর্জাতিক বাস সার্ভিস পুনরায় শুরুর বিষয়ে রাজ্য সরকারের অনুমোদন মিলেছিল। সেই অনুমোদনের ভিত্তিতেই তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যান। এমনকি টিআরটিসির তরফে ভারতীয় হাই কমিশনে লিখিত আবেদনের ভিত্তিতে টিআরটিসির অনুমোদন প্রাপ্ত রয়েল কোচ বাস সার্ভিসের সহযোগী সদস্যদের ভিসার ব্যবস্থাও করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে আন্তর্জাতিক সার্ভিসের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের অনুমোদনের এখতিয়ার এবং ভূমিকা নিয়েই।

টিআরটিসির ম্যানেজিং ডিরেক্টরের শিশুসুলভ দাবিকে কার্যত সমর্থন জানিয়ে আগরতলা পৌর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার বলেন, রাজ্য সরকারের অনুমতি পাওয়া গিয়েছিল। সেই অনুমতিক্রমেই বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ।

যদিও তিনি স্বীকার করে নেন যে বিষয়টি আন্তর্জাতিক পক্রিয়া। এক্ষেত্রে ভারত সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়টি সঠিকভাবে হয়নি। তবে তিনি আশাবাদী আগামী দু-একদিনের মধ্যেই ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অনুমোদন মিলবে।

এদিন বাস সার্ভিসের উদ্বোধনে এসে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন ত্রিপুরাস্থ উপ-দূতাবাসের সহকারী হাইকমিশনার মোহাম্মদ আরিফ। তিনি বলেন, আপনারা আমাদের উদ্দেশ্যটা দেখুন, আমাদের উদ্দেশ্যে কোনরকম ঘাটতি ছিল না। মানুষের সুবিধার জন্যই আমরা চেষ্টা করছিলাম। একটা সাময়িক সমস্যা হয়েছে, খুব দ্রুত সমাধান হবে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy