শীতকালের টমেটো ফলবে গ্রীষ্মকালেও, শিখে নিয়ে চাষ করুন বাড়ির ফাঁকা জায়গায়

টমেটো একটি শীতকালীন সবজি। তবে পুষ্টিগুণ ও নানাবিধ ব্যবহারের জন্য সারাবছরই এর কদর রয়েছে ৷ শীতকালে টমেটোর বেশি ফলন হলেও গ্রীষ্মকালে তেমনটা ফলে না। এজন্য গ্রীষ্মকালে টমেটোর মূল্য থাকে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে ।

গ্রীষ্মকালেও উচ্চফলনশীল টমেটো ফলাতে গবেষণা করছেন গবেষকদের মতে, ফলন কম হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ টমেটোর ঢলে পড়া রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে প্রায় শতভাগ গাছ মারা যায়।

তবে গবেষকরা দাবি করেছেন উচ্চফলনশীল জাত নয়, শুধুমাত্র মাটির জৈব শোধনের মাধ্যমে এ রোগ শতভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তারা মাটির জৈব শোধন করতে সরিষার খৈল ব্যবহার করেছেন। এতে শতভাগ সাফল্য পেয়েছেন।

এ পদ্ধতিতে চাষ করলে কৃষক লাভবান হবে এবং উচ্চফলনশীল টমেটো উৎপাদন সম্ভব হবে যা গ্রীষ্মকালের টমেটোর চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে। চাহিদা অনুযায়ী ফলন পেলে মূল্যও সাধারণের নাগালের মধ্যে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।

গবেষকরা জানান, উষ্ণ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও উদ্ভিদ কৃমির জন্য আদর্শ পরিবেশ। গ্রীষ্মকালে মাটি অতি উষ্ণ ও আর্দ্র থাকে। ফলে টমেটো গাছ খুব সহজেই ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, প্ল্যান্ট নেমাটোডা বা উদ্ভিদ কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়।

বেশিরভাগ গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ বেশি হয় দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে। কোনো গাছ যদি ঢলে পড়া রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে শতভাগ মৃত্যু ঘটে। তাই গ্রীষ্মকালে টমেটোর ভালো দাম থাকলেও চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ফলে গ্রীষ্মকালে পাওয়া টমেটোর বেশিরভাগই শীতকালীন টমেটো সংরক্ষণ করা। এর দামও অনেক বেশি।

ঢলে পড়া রোগের লক্ষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, গাছ বৃদ্ধির যেকোনো সময় এ রোগ হতে পারে এবং ব্যাপক ক্ষতি করে। আক্রান্ত গাছের বয়স্ক পাতাগুলো নিচের দিকে বেঁকে যায় ও ঢলে পড়ে। ধীরে ধীরে পুরো গাছই নেতিয়ে পড়ে ও মরে যায়। গাছের কাণ্ডে ও শিকড়ে বাদামি দাগ পড়ে। গাছে প্রথমে কাণ্ডের এক পাশের শাখার পাতাগুলো হলদে হয়ে আসে এবং পরে অন্যান্য অংশ হলুদ হয়ে যায়। রোগ বৃদ্ধি পেলে সব পাতাই হলুদ হয়ে যায় এবং অবশেষে সম্পূর্ণ শাখাটি মরে যায়। এভাবে পুরো গাছটাই ধীরে ধীরে মরে যায়।

প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে এই গবেষক বলেন, এ রোগ সাধারণত গ্রীষ্মেকালে হয় কারণ মাটির তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা উভয়ই বেশি থাকে। তাই যদি আমরা মাটির তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা কমাতে পারি, তাহলে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও উদ্ভিদ কৃমি অনুকূল পরিবেশ পাবে না।

এজন্য টমেটোর চারা লাগানোর সাত দিন আগে মাটির সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণে সরিষার খৈল মিশিয়ে মাটি জৈব শোধন করতে হবে। শোধনকৃত মাটিতে টমেটোর চারা লাগালে আর ঢলে পড়া রোগ হবে না। মাটি জৈব শোধন করতে ১০ কেজি মাটির সঙ্গে ৫০০ গ্রাম সরিষার খৈল ব্যবহার করা হয়। সরিষার খৈল মিশ্রিত মাটিকে ৭ থেকে ১০ দিন শুকাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যদি আমরা কৃষকদের মধ্যে এই সহজে মাটি শোধন ব্যবস্থাপনাটি ছড়িয়ে দিতে পারি তাহলে কৃষকও লাভবান হবেন। একই সঙ্গে বাজারে টমেটোর ভালো দাম পাবে কৃষক। পাশাপাশি টাটকা টমেটোও পাওয়া যাবে।

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy