ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে-এ প্রবাদ সত্যি প্রমাণ করে ছাড়লেন ইউক্রেনীয় অধ্যাপক ফেদির শ্যান্ডর। পূর্ব ইউক্রেনের কোনো এক যুদ্ধক্ষেত্র থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন তিনি।
রুশ সেনাদের ক্রমাগত গোলাবর্ষণের ভেতর দিয়েই বালির বস্তা দিয়ে ঘেরা পরিখার পেছনে বসে তার এ ক্লাস নেওয়ার ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। মাথায় হেলমেট। একে -১০৩ রাইফেলটি কাঁধ থেকে নামানো। এক হাতে খাতা-কলম। আর অন্য হাতে মোবাইল ফোন।
যা দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এই অধ্যাপক।
নিউইয়র্ক পোস্ট জানিয়েছে, যুদ্ধ চলাকালীন ছবিটি তুলেছেন অধ্যাপক শ্যান্ডরের সহযোদ্ধা ভিক্টর শ্যাচ্যাড। ইউক্রেনের উজহোরড ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেন ফেদির শ্যান্ডর। সেখানে পর্যটন এবং আতিথেয়তার বিষয়ে পড়ান।
দেশ বাঁচাতে শিক্ষকতা বাদ দিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে চলে যান শ্যান্ডর। ওই দিনই সেনায় নাম লিখিয়েছিলেন শ্যান্ডর। তার পর থেকে তিনি যুদ্ধক্ষেত্রেই রয়েছেন।
রণক্ষেত্রের এই অধ্যাপককে নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উজহোরড ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিভ
তারা জানিয়েছে, এই যুদ্ধের মধ্যেও শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস নেয়ার সময় ঠিক করে নিয়েছেন শ্যান্ডর। প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও মঙ্গলবার সকাল ৮টা। গত ৭০ দিনে এক বারের জন্যেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
ইউক্রেনের কোন প্রান্তে যুদ্ধে গিয়েছেন শ্যান্ডর, তা অবশ্য প্রকাশ্যে আনেনি উজহোরড ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। শুধু জানানো হয়েছে, পূর্ব ইউক্রেনের কোনো এক প্রান্তে তিনি দেশের জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
সে হিসেবে পূর্ব শিল্প অঞ্চল দোনবাসে রাশিয়ার সেনাদের প্রতিহত করছেন শ্যান্ডর। চলতি মার্চ মাসে কিয়েভের উপকণ্ঠ থেকে রাশিয়ার সেনাদের পশ্চাদপসরণ করার পর থেকে বেশিরভাগ লড়াই এই ডনবাসেই চলছে।
যুদ্ধে যোগদান ও অনলাইনে পাঠদানের বিষয়ে শ্যান্ডর বলেন, ‘গত ৭০ দিন ধরে যুদ্ধ করছি আমি। তবে একদিনও ক্লাস নেওয়া বাদ দিইনি। ছেলেমেয়েদের পড়ানোর মতো পবিত্র কাজ আর হয় না। ওটা বাদ দিতে পারব না। কারণ আমরা একটি শিক্ষিত জাতির জন্য যুদ্ধ করছি। আমি যদি ক্লাস না নিতাম, তাহলে এটা একটা পাপ হতো। ‘
শুক্রবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ৭২তম দিনে নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমনই এক ছবি শিক্ষকের মর্যাদাকে আরেক ধাপ ওপরে তুলল।