রাজধানী কলম্বোতে বন্ধ স্কুল, জ্বালানি বাঁচাতে বাড়ি থেকে কাজের নির্দেশ

দীর্ঘ সাত দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পড়া শ্রীলংকায় চলছে ব্যাপক জ্বালানিসংকট। পেট্রলের জন্য পাম্পের সামনে দীর্ঘ লাইন দিয়ে যারা অপেক্ষা করছেন, তাদের টোকেন দিচ্ছেন সেনাসদস্যরা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় কর্তৃপক্ষ গত এক সপ্তাহ ধরে রাজধানী কলম্বো ও এর আশপাশের অঞ্চলের স্কুল বন্ধ রেখেছে; সরকারি কর্মীদেরকেও পর্যন্ত ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ বা বাড়ি থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে ঠেকার রেকর্ড হওয়ায় দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকায় খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানিসহ নিত্যপণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতেই জ্বালানির সমবণ্টন নিশ্চিত করতে টোকেন দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীকে। স্কুল বন্ধ ও ঘরে বসে কাজ করে জ্বালানি সাশ্রয়ের চেষ্টা করছে সরকার।

এর আগে গত ১৭ জুন দেশটি সরকারি কর্মীদেরকে দুই সপ্তাহ ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করতে বলেছিল, কিন্তু জ্বালানি সংকট না মেটায় এখন ‘পরবর্তী নির্দেশ’ না দেওয়া পর্যন্ত ঘরে থেকে কাজের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ঘাটতিতে থাকা সোয়া দু্ই কোটি জনসংখ্যার দেশটি খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে।

অটোরিকশা চালান ডব্লিউ ডি শেলটন। তার বয়স ৬৭ বছর। সেনাবাহিনীর কাছ থেকে পেট্রলপাম্পের লাইনে দাঁড়ানোর একটি টোকেন পেয়েছেন তিনি। পেট্রল এলে অন্যদের মতো তিনিও পেট্রল পাবেন। শেলটন বললেন, ‘আমি চার দিন ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এই চার দিন আমি পর্যাপ্ত ঘুম, এমনকি পর্যাপ্ত খেতেও পারিনি।’

শেলটন রাজধানী কলম্বোয় যে পেট্রলপাম্পের লাইনে দাঁড়িয়েছেন, সেই লাইনটিতে তার অবস্থান ২৪তম। পেট্রল এলে আগে ২৩ জন পাবেন। তারপরে তিনি পাবেন।

পেট্রলপাম্প থেকে বাড়ির দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার হলেও, যেতে না পারা শেলটন বলেন, ‘উপার্জন না থাকায় পরিবারের জন্য খাবারও কিনতে পারছি না।’

রোববার শ্রীলংকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রী কাঞ্চনা ভিজেসেকারা জানিয়েছেন, তাদের মজুদে এখন ৯ হাজার টন ডিজেল ও ৬ হাজার টন পেট্রল আছে।

ওই মজুদে শিগগিরই আরো জ্বালানি যুক্ত করতে পারবে কিনা তারা, তাৎক্ষণিকভাবে তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি।

দেশটিতে গত সপ্তাহ থেকে জ্বালানির স্টেশনগুলোতে অপেক্ষারত মানুষের সারি দীর্ঘ হতে দেখা যাচ্ছে।

“এটা খুবই দুঃখজনক, কবে শেষ হবে তা জানিওনা আমরা,” বলেছেন শেলটন।

শ্রীলংকা সরকার জ্বালানি দেওয়ার ক্ষেত্রে গণপরিবহন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসা সেবাজনিত কর্মকাণ্ডকে প্রাধান্য দিচ্ছে। কিছু পরিমাণ জ্বালানি বিভিন্ন বন্দর ও বিমানবন্দরেও দেওয়া হচ্ছে।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় লঙ্কার সরকার বিদেশি সাহায্যের দিকে তাকিয়ে আছে। ৩০০ কোটি ডলারের একটি বেইলআউট প্যাকেজ নিয়ে কথা বলতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের একটি দল এখন শ্রীলংকা সফরও করছেন।

বৃহস্পতিবার ওই সফর শেষ হওয়ার আগে কর্মকর্তা পর্যায়ে এক ধরনের সমঝোতা হবে বলে দ্বীপদেশটি আশা করলেও তাৎক্ষণিকভাবে ওই অর্থের কিয়দংশ পাওয়ার সম্ভাবনাও খুব কম।

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy