যেসব কারণে ভেড়া পালন খুব লাভজনক এক ব্যবসা, শিখেনিন আপনিও

আমাদের দেশে ভেড়া পালন বেশ লাভজনক। ভেড়া ঘাস খেতে খুব পছন্দ করে এবং দলগতভাবে ঘুরে বেড়ায়। তাই এটি পালন করা খুব সহজ। এদের প্রজনন ক্ষমতাও বেশি। এটি ১৫ মাসে ২ বার বাচ্চা দেয়। তাই ভেড়া পালন শুরু করলে কয়েক বছরের মধ্যে খামারের আকার বড় হয়ে উঠে। অন্যদিকে এটি পালন করে লাভবান হওয়া যায়।

ভেড়া শুধু ঘাস খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। তবে কিছু দানাদার খাদ্য সরবরাহ করলে ভালো উৎপাদন পাওয়া যায়। ভেড়া পশম ও মাংসের জন্য পালন করা হয়। আমাদের দেশে ভেড়ার তেমন কোনো ভালো জাত নেই।

ভেড়া খাবারের জন্য সারাদিন মাঠে ঘুরে বেড়ায়। এদের বাসস্থান প্রয়োজন হয়। বাসস্থানের প্রয়োজন বিশেষ করে রাতে ভেড়ার বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। তাছাড়া বন্য প্রাণীর হাত থেকে রক্ষা করার জন্যও বাস স্থানের দরকার। ঝড় ও বৃষ্টি থেকে রক্ষা করার জন্য ও বেশি উৎপাদনক্ষম ভেড়ার দুগ্ধ দোহন করার জন্য বাসস্থানের প্রয়োজন। অন্যদিকে গর্ভবতী, প্রসূতি ও বাচ্চা ভেড়ার পরিচর্যার জন্যও বাসস্থান জরুরি।

ভেড়া পালনের জন্য তিন ধরনের ঘর ব্যবহার করা হয়। যেমন,- উন্মুক্ত, আধা উন্মুক্ত ও আবদ্ধ ঘর। আবহাওয়া ও জলবায়ুর কথা চিন্তা করে রাতে আশ্রয়ের জন্য ভেড়ার ঘর তৈরি করা হয়। ভেড়ার ঘরের মেঝে ভূমি সমতলে বা মাচার তৈরি হয়ে থাকে।

যেসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হয় সেখানে এ ধরনের ঘর উপযোগী। একটি নির্দিষ্ট জায়গার চারিদিকে বেড়া দিয়ে উন্মুক্ত ঘর তৈরি করা হয়। এধরনের ঘরে কোনো ছাদ থাকে না। সারাদিন বাইরে খাওয়ার পর রাতে ভেড়ার পাল এখানে আশ্রয় নেয়। এখানে মেঝেতে খড় ব্যবহার করা হয়।

উন্মুক্ত ঘরের নির্দিষ্ট স্থানের এক কোনে কিছু জায়গা যখন ছাদসহ তৈরি করা হয় তখন তাকে আধা উন্মুক্ত ঘর বলে। যেসব এলাকায় মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হয় সেখানে আধা,– উন্মুক্ত ঘর ব্যবহার করা যেতে পারে।

যেসব অঞ্চলে প্রচুর ঝড়-বৃষ্টি হয়, সেখানে এ ঘর বেশি উপযোগী। আবদ্ধ ঘরের পুরা অংশেই ছাদ থাকে। ঘরের পাশ দিয়ে প্রচুর আলো বাতাস প্রবাহের ব্যবস্থা থাকে। আবদ্ধ ঘরের মেঝে পাকা ও আধা পাকা হয়ে থাকে।

ভেড়াকে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম রাখার জন্য এবং এদের থেকে বেশি উৎপাদন পেতে হলে সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে হবে। নিয়মিত ব্রাশ দিয়ে ভেড়ার পশম পরিষ্কার করতে হবে। এতে পশমের ময়লা বেরিয়ে আসবে। ভেড়ার দেহে মাঝে মধ্যে পরজীবীনাশক প্রয়োগ করতে হবে। ভেড়ার পশম কাটার আগে গোসল করাতে হবে।

ভেড়া যে কোনো ধরনের খাদ্য খেতে খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। এটি গরু, মহিষ ও ছাগলের মতোই জাবরকাটা প্রাণী। ভেড়ার খাদ্যের শ্রেণিবিন্যাস গরু ছাগলের মতোই। এদের খাদ্য তালিকায় আঁশযুক্ত খাবারের পরিমাণ দানাদার খাদ্যের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। গর্ভবতী ভেড়ির তুলনায় প্রসূতির খাদ্য তালিকায় অধিক পরিমাণে দানাদার খাদ্য প্রদান করা হয়। বাচ্চা প্রসবের একমাস পূর্ব থেকে ভেড়ির খাদ্য তালিকায় দৈনিক ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম হারে দানাদার খাদ্য যোগ করতে হয়।

ভেড়াকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখতে হবে। সব বয়সের ভেড়াকে নিয়মিত কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে ও সময় মতো টিকা প্রদান করতে হবে। ভেড়া বাদলা, তড়কা, ম্যাস্টাইটিস, খুরা রোগ, চর্মরোগ, কৃমি ইত্যাদিতে বেশি আক্রান্ত হয়। রোগাক্রান্ত ভেড়াকে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা দিতে হবে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy