মাত্র ১২ দিনে কলকাতায় তিন অভিনেত্রীর ‘আত্মহত্যা’, একে অন্যকে চিনতেন তিনজনই

জীবনের সমস্ত ঝামেলা আর দুশ্চিন্তা থেকে নিস্তার পাওয়ার সহজ সমাধান কি আত্মহত্যা? অনেকের মাথায় এমন ভূতই চেপে বসে। দিয়ে দেন জীবন। সহজ সমাধান ভেবে সে পথে হেঁটেই মাত্র ১২ দিনের মধ্যে আত্মঘাতী হলেন কলকাতার টেলিভিশন জগতের তিন তিনজন অভিনেত্রী। যারা একে অন্যকে চিনতেন জানতেন। কাজ করতেন একই ইন্ডাস্ট্রিতে।

এর মধ্যে গত ১৫ মে সকালে নিজ ফ্ল্যাট থেকে প্রথম উদ্ধার হয় অভিনেত্রী পল্লবী দে’র ঝুলন্ত মরদেহ। ছোটপর্দার জনপ্রিয় মুখ ছিলেন তিনি। যে ফ্ল্যাটে তার মরদেহ পাওয়া যায়, সেটি ছিল ভাড়া নেওয়া। সেখানে প্রেমিকের সঙ্গে থাকতেন পল্লবী। মৃত্যুর ঘণ্টাখানেক আগেও তিনি নেটমাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন।

ঘটনার দিনে কলকাতার গড়ফার কে পি রায় লেনের ফ্ল্যাট থেকে পল্লবীকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন তার প্রেমিকই। এরপর তিনি পুলিশে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর একটি মামলা হয় গড়ফা থানায়। কী কারণে তার মৃত্যু? এ বিষয়ে এখনো ধোঁয়াশায় পুলিশ। কারণ, ঘটনাস্থল থেকে কোনো সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি।

যদিও পল্লবীর পরিবারের অভিযোগ, আত্মহত্যা নয়, তাকে খুন করেছে তার প্রেমিক। এই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ আটক করেছে পল্লবীর প্রেমিককে। তিনি এখনো পুলিশি হেফাজতেই রয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

পল্লবীর মৃত্যুর ১০ দিনের মাথায় বুধবার রাতে নাগেরবাজারের রামগড় কলোনির বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় বিদিশা নামে আরেক অভিনেত্রীর মরদেহ। তার মরদেহ গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ফাঁস দেওয়া ছিল। ঘরের দরজা ছিল ভেতর থেকে বন্ধ। তার দেহের পাশ থেকে উদ্ধার হয় একটি সুইসাইড নোট। তাই পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, বিদিশা আত্মহত্যা করেছেন।

অথচ, পল্লবীর মৃত্যুর পর এই বিদিশাই ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘মানে কী এ সব’। ফেসবুকে পল্লবীর ছবিও পোস্ট করেছিলেন বিদিশা। সেখানে লিখেছিলেন, ‘মেনে নিতে পারলাম না। ১০ দিনের মাথায় সেই বিদিশাই আত্মঘাতী হন। এ ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করে পুলিশ।

বিদিশার মৃত্যুর দুদিন না যেতেই শুক্রবার সকালে মঞ্জুষা নিয়োগী নামে আরও এক অভিনেত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ মিলল তার পাটুলির বাড়ি থেকে। পরিবার সূত্রে খবর, বুধবার মারা যাওয়া বিদিশার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন মঞ্জুষা। তার মায়ের দাবি, বিদিশার মৃত্যুর পরই হতাশায় ভুগতে শুরু করেছিলেন মঞ্জুষা। তার জেরেই আত্মহত্যা।

যদিও পুলিশ এই ঘটনায় কোনো সুইসাইড নোট পায়নি। যেমনটা বিদিশার ক্ষেত্রে পাওয়া গিয়েছিল। তাই মঞ্জুষার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত শুরু হয়েছে।

মঞ্জুষা টলিউডে কাজ করছেন বহু দিন ধরেই। একটি টিভি চ্যানেলের ধারাবাহিকে অভিনয় করতেন। পাশাপাশি থিয়েটারেও অভিনয় করতেন তিনি। বিদিশার মৃত্যুর ঠিক দুই দিনের মাথায় তার বন্ধু মঞ্জুষার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

তিন অভিনেত্রীর মধ্যে মঞ্জুষা আবার বিবাহিত। পরিবার সূত্রে খবর, তিন-চার দিন আগে পাটুলিতে বাপেরবাড়িতে এসেছিলেন মঞ্জুষা। বৃহস্পতিবারও ফটোশ্যুট করেছেন তিনি। সে দিন তার স্বামী তাকে নিতে এসেছিলেন। কিন্তু মঞ্জুষার মা তার জামাইকে বলেন, কিছু দিন মেয়েকে বাপেরবাড়িতে রেখে যেতে।

এরই মধ্যে বুধবার বিদিশার মৃত্যুর খবর পান বন্ধু মঞ্জুষা। তারপর থেকেই অবসাদে ভুগছিলেন। মঞ্জুষার মায়ের দাবি, অভিনেত্রী পল্লবীর সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল মঞ্জুষার। কী কারণে এই মৃত্যু, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ইতোমধ্যে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। অভিনেত্রীরা কেন এভাবে একে একে জীবন দিচ্ছেন, তারও তদন্ত করছে পুলিশ।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy