মাছ-মাংস ছাড়া খেতে পারেন না? আদৌ কি এই অভ্যেস তা ভালো, দেখুন তো

যদি সুস্থভাবে বাঁচতে হয়, তাহলে রোজের ডায়েটে প্রোটিন সমৃদ্ধি খাবার থাকা মাস্ট! কিন্তু তাই বলে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। কারণ দেহে এই উপাদানটির পরিমাণ মাত্রা ছাড়ালে একাধিক শারীরিক সমস্যার পথ প্রশস্ত হয়। তাই তো শরীরের উপকারে লাগে এমন জিনিসও নিয়ন্ত্রণে গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

আসলে আমাদের শরীরে প্রয়োজন অতিরিক্ত প্রোটিনের প্রবেশ ঘটলে দেহের অন্দরের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। ফলে একাধিক অঙ্গের কর্মক্ষমতা কমতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, ডায়াটারি রেফারেন্স ইনটেক অথবা ডি আর আই-এর নির্দেশিকা আনুসারে প্রতি কিলো ওজন পিছু ০.৮ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন পরে। এই হিসেবে পুরুষদের আনুমানিক ৫৬ গ্রাম/ দিন এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৪৬ গ্রাম/ দিন মাপে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। এর থেকে বেশি হলেই কিন্তু বিপদ! এক্ষেত্রে শরীরের যে যে ক্ষতিগুলি হয়ে থাকে সেগুলি হল…

১. কিডনির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে:

প্রোটিন সমৃদ্ধি খাবার খেলেই আমাদের রক্তে নাইট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা কিডনি প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়। এখন যদি কেউ বেশি মাত্রায় প্রোটিন সমৃদ্ধি খাবার খেতে শুরু করে তাহলে নাইট্রোজেনের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। ফলে কিডনিকেও বেশি বেশি করে কাজ করতে হয়। আর এমনটা হতে থাকলে ধীরে ধীরে কিডনির কর্মক্ষমতা কমতে শুরু করে এবং সবথেকে ভয়ের বিষয় হল পুরো ঘটনাই ঘটে আমাদের অজান্তে। ফলে যতদিনে রোগ ধরা পরবে ততদিনে যে অনেক দেরি হয়ে যাবে না, সে নিশ্চয়তা কে দিতে পারেন বলুন!

২. পেটের রোগ মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে:

শরীরে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা কমে গিয়ে প্রোটিনের পরিমাণ যদি বেড়ে যায়, তাহলে কনস্টিপেশনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে বদহজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো রোগও দেখা দিতে পারে। তাই প্রোটিন সমৃদ্ধি খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবার রয়েছে এমন খাবার খাওয়ার দিকেও নজর দিতে হবে।

৩. ওজন বৃদ্ধি পাবে:

অনেকেই মনে করেন প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি করে খেলে ওজন হ্রাস পায়। এই ধরণার মধ্যে কোনও ভুল নেই। কিন্তু বেশি মাত্রায় প্রোটিন খেয়ে ফেললে কিন্তু উল্টো ঘটনা ঘটে। সেক্ষেত্রে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের অন্দরে আরও কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে, যা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ৭০০০ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকে প্রতিদিন প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিছু দিন পর দেখা যায় বেশিরভাগেরই ওজন অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এমনটা হয়েছে মূলত প্রোটিনের কারণেই। তাই এবার থেকে কিলো কিলো মাছ মাংস খাওয়ার আগে একবার ভেবে দেখনে, এমনটা করা আদৌ উচিত কিনা।

৪. মুখ থেকে দুর্গন্ধ বরতে শুরু করবে:

একেবারেই ঠিক শুনেছেন! শরীরে পোটিনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা কমতে শুরু করে তাহলে দেহে সঞ্চিত ফ্যাট ভাঙতে থাকে। ফলে একদিকে যেমন ওজন কমে যায়। তেমনি শরীরে কিছু বিশেষ ধরনের কেমিকেলের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। এই রাসায়নিকগুলির কারণে মুখ থেকে দুর্গন্ধ বেরতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, আমাদের শরীরে এনার্জির যোগান দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে কার্বোহাইড্রেটের উপরে। তাই ভুলেও এই উপাদানটির ঘাটতি যেন দেখা না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখা আমাদের একান্ত প্রয়োজন।

৫. মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে:

আমরা কী ধরনের খাবার খাচ্ছি তার উপর আমাদের খুশি থাকাটা অনেকাংশেই নির্ভর করে। কারণ ঠিক ঠিক খাবার না খেলে “হ্যাপি হরমোন” এর ক্ষরণ কমে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মন মেজাজ খিটখিটে হতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধি খাবার খেলে মস্তিষ্কে সেরাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এই হরমানটাই যেহেতু আমাদের মনের ভাল-মন্দের হিসেব রাখে তাই স্বাভাবিকভাবেই মন চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

৬. শরীরে জলের মাত্রা কমে যায়:

বেশি মাত্রায় প্রোটিন সমৃদ্ধি খাবার খেলে শরীরে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে স্বাভাবিকবাবেই প্রস্রাবের মাত্রাও বেড়ে যায়। কারণ ইউরিনের মাধ্যমেই কিডনি অতিরিক্ত নাইট্রজেনকে শরীর থেকে বের করে দেয়। আর প্রস্রাব বেশি মাত্রায় হলে শরীরে জলের অভাব দেখা দেয়। ফলে ডিহাইড্রেশনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy