বিদ্যুতের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ভয়াবহ কয়লা সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় কয়লা। কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড (সিআইএল) ভারতের সরকারি খাতে কয়লা উত্তোলন ও পরিশোধনের সবচেয়ে বড় কোম্পানি। একই সঙ্গে এটি বিশ্বের বৃহত্তম কয়লা উৎপাদনকারী কোম্পানিও। বিদ্যুতের সংকট কাটাতে কয়লা আমদানি করতে যাচ্ছে কোম্পানিটি।
গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংকট এড়াতে ২০১৫ সালের পর প্রথমবারের মতো কয়লা আমদানি করতে যাচ্ছে সিআইএল। সম্প্রতি কয়লা আমদানি বাড়াতে ভারত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার উপর চাপ বাড়িয়েছে। রাজ্য সরকারগুলোর মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যদি আমদানির মাধ্যমে কয়লার মজুদ গড়ে না তোলে তাহলে স্থানীয়ভাবে উত্তোলিত কয়লা সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ারও হুমকিতে তারা। জানা গেছে, ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকারি-বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে জুন মাসের মধ্যে এক কোটি ৯০ লাখ টন কয়লা আমদানি করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে সরকার।
গত এপ্রিলের পর থেকে ভারতে কয়লার মজুদ ১৩ শতাংশ করে কমেছে। গত নয় বছরের মধ্যে এ সময়ে এটি সর্বনিম্ন মজুদ। ঊর্ধ্বমুখী বিদ্যুৎ চাহিদা মজুদ বাড়ানোর প্রচেষ্টাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। ফলে কয়লা আমদানি দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
যদিও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে এমনিতেই জ্বালানিটির সরবরাহ সীমিত। এ কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য বর্তমানে রেকর্ড সর্বোচ্চ দামে লেনদেন হচ্ছে। ফলে আমদানির মাধ্যমে চাহিদা মেটাতেও হিমশিম অবস্থার মধ্যে পড়তে পারে দেশ।
২৮ মে একটি চিঠি ইস্যু করে দেশের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কোল ইন্ডিয়া কোম্পানি সরকার-থেকে-সরকার-(জিটুজি) প্রকল্পের মাধ্যমে কয়লা আমদানি করবে এবং রাষ্ট্রীয় ও স্বাধীনভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে সরবরাহ করবে। এই চিঠি কয়লাবিষয়ক সেক্রেটারি, কোল ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যানসহ সমস্ত ইউটিলিটি, শীর্ষ কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী দেশের কয়লা দরকার ১৯ কোটি ৭৩ লাখ টন, কিন্তু অভ্যন্তরীণ কয়লা সরবরাহ ১৫ কোটি ৪৭ লাখ টনের বেশি হবে না। এই পরিসংখ্যান বলছে, কয়লার ঘাটতির পরিমাণ তাহলে ৪ কোটি ২৫ লাখ টন।
তীব্র দাবদাহের কারণে বছরের এপ্রিল মাসে দেশের রেকর্ড পরিমাণে বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়ে যায়। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে না পারায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুতহীন থাকতে বাধ্য হন দেশের মানুষ। বিভিন্ন রাজ্যে বিদ্যুৎ সংকট সামাল দিতে একপর্যায়ে কর্তৃপক্ষ নিয়মিত যাত্রীবাহী ট্রেন বাতিল করে কয়লা পরিবহনে নিয়োগ করতে বাধ্য হয়। ছয় বছরের বেশি সময়ে সবচেয়ে তীব্র এ বিদ্যুৎ সংকট সরকারকে কয়লা আমদানি কমানোর নীতি থেকে পিছু হটতে বাধ্য করছে।