একজন মানুষ কত বছর বয়সে সফল হন কিংবা নিজের পায়ে দাঁড়ান? ২৫, ২৮ বা ৩০? ঠিকই তো, ৩০ বছর তো লাগতেই পারে। আগেগ্র্যাজুয়েশন শেষ করো, তারপর না হয় চাকরি-বাকরি, সব মিলিয়ে ৩০ তো লেগেই যায়। তবে যদি বলি অষ্টম শ্রেণি ফেল একটি ছেলে ২২ বছর বয়সেই কোটিপতি হয়ে বসে আছেন। তাও আবার যেন-তেন ব্যবসা নয়, রীতিমতো রাজত্ব করছেন আইটি সেক্টরে। অল্প বয়সী এই মিলিয়নিয়ার নাম তৃষিত অরোরা। ক্লাস এইট পাস করতে পারেননি তিনি। তারপরেও থেমে থাকেনি তার জয়যাত্রা। প্রচণ্ড ইচ্ছেশক্তি, নিরলস পরিশ্রম আর অভাবনীয় মেধার সমন্বয়ে তিনি মাত্র ২২ বছর বয়সেই গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন তার মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের ব্যবসা।
তৃষিত অরোরার জন্ম ভারতের লুধিয়ানায় নিতান্তই এক মধ্যবিত্ত পরিবারের। ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটারের প্রতি তার দুর্নিবার আকর্ষণ। যা এক পর্যায়ে গিয়ে পরিণত হয় আসক্তিতে। তার আগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল কম্পিউটার সিকিউরিটি আর হ্যাকিং। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে তৃষিত কে কম্পিউটারের কাছ থেকে সরানো যেত না। ফলে বাবা-মা যে আশঙ্কা করতেন, সেটিই একদিন সত্যি হয়ে গেলো। এসটিডি অষ্টম ক্লাসে দুই বিষয়ে ফেল করে বসেন তিনি। অবশ্য পাশ করবেন কীভাবে, পড়ালেখাই তো করেননি কিছু।এই গল্প যদি সাধারণ দশজন ছেলের হত, তাদের জীবন হয়তো এখানেই থমকে যেত। তবে গল্পটা যে তৃষিত আরোরা।।
খারাপ ফলাফল করে বাবা-মায়ের মুখ ডুবিয়ে এবং আশেপাশের সকলের হাসির পাত্র হয়ে ও তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি। ইতি টানেননি নিজের দেখা স্বপ্নের। বরং তিনি সিদ্ধান্ত নেন প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়াকেই চিরতরে বিদায় বলে দিয়ে, কম্পিউটার সিকিউরিটি বিষয়ক জ্ঞানার্জনে পূর্ণ মনোনিবেশ করার। তার এমন কার্যকলাপে বিস্মিত হয় সবাই।অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করে দেয়, এই ছেলে একদম বখে গেছে। তবে তৃষিত তাদেরকে ভুল প্রমাণিত করতে খুব বেশি সময় নেননি।
মাত্র ২২ বছর বয়সেই তিনি টিএসসি সিকিউরিটি নামে গড়ে তোলেন নিজের প্রতিষ্ঠান। আর এব্যাপারে তার অগাধ জ্ঞান থাকায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে ক্লায়েন্ট হিসেবে জুটিয়ে ফেলেন রিলায়েন্স, সিবিআই, পাঞ্জাব পুলিশ, গুজরাট পুলিশ, আমুল, আভন সাইকেলসের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানএবং কোম্পানিকে। এরই মধ্যে তিনি লিখে ফেলেছেন তিন-তিনটি বইও। এটা সত্যিই আশ্চর্যের একটা বিষয়, একটি ছেলে যার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই ছিল না। তিনি আজ ফরচুন ৫০০ কোম্পানির তালিকায় থাকা ৫০টি কোম্পানির সঙ্গেই কাজ করছেন। অফিস খুলেছেন দুবাই ও যুক্তরাজ্যে।
এমন একটি বয়সে, যখন অধিকাংশ ছেলে-মেয়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মেয়াদই শেষ হয় না। আর হলেও একটা নিশ্চিত ক্যারিয়ার গঠনকে নিতান্তই আকাশ কুসুম কল্পনা বলে মনে হয়। সেই বয়সেই তৃষিত বনে গেছেন নিজ অঙ্গনের অন্যতম সফল একটি নাম। এসবই সম্ভব হয়েছে, কারণ তৃষিত মাঝ পথে কখনো হাল ছেড়ে দেননি। হাজারো কু-কথা শোনার পরও তিনি তার লক্ষ্যে অবিচল। আর তৃষিত ের মতো, নিজের স্বপ্নে এমন অবিচল মানুষেরাই তো একদিন সফল হন। নাটক বা সিনেমা নয়, একদিন সত্যিকারের নায়ক রূপে আবির্ভূত হন।