
প্রাণির সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য খাবার অপরিহার্য। চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী না হলে অল্প অসুস্থতাতেও মানুষ খুব সহজে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোগের আক্রমণও জোরালো হয়। এক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মানুষ সচরাচর যে ধরনের খাবার খায়, সেগুলো হচ্ছে- শর্করা, প্রোটিন এবং ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার। এ ধরনের খাবার শরীরের জন্য অবশ্যই প্রয়োজন। মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নির্ভর করে ভিটামিন এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের উপর। তবে খাবার না খেয়ে মানুষ কতদিন বাঁচতে পারবেন। খুব বেশি হলে ৩ থেকে ৭ দিন। কারণ নিউট্রিশন এবং হাইড্রেশনের অভাবে তিনি মারা যাবেন।
তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, ৫৮ বছর ধরে হাওয়া খেয়ে বেঁচে আছেন এক নারী। তিনি জল এমনকি খাবারও খাননি এই ৫৮ বছরে। বর্তমানে গিরি বালার বয়স ৭২ বছর। বারো বছর চার মাস বয়স থেকে তিনি খাবার খাওয়া বাদ দেন।
আর পাঁচটা মেয়ের মতই গিরি বালার জীবন ছিল। বর্ধমানে তার জন্ম। তিনি ছোট থেকেই খেতে খুব পছন্দ করতেন। তবে দারিদ্রতার কষাঘাতে প্রায় সময়ই উপোস থাকতে হতো তাকে। মাত্র ৯ বছর বয়সে বিয়ে হয় তার।
অভাব পিছু ছাড়েনি গিরি বালার। স্বামীর বাড়িতেও চরম অভাবের মধ্যে দিন কাটতে থাকে তার। নিজে না খেয়ে স্বামী ও শ্বাশুড়ির মুখে অন্ন ঠেলে দিতেন তিনি। আবার যাই খেতেন ন কেন তার সঙ্গে শাশুড়ির গালমন্দও খেতেন খানিকটা। তার শাশুড়ি সবসময় তাকে খাওয়ার খোটা দিতেন। এজন্য প্রায় সময়ই তিনি না খেয়ে থাকতেন। এভাবেই একদিন দু’দিন না খেয়ে থাকার অভ্যাস তৈরি হয়।
গিরি বালা একদিন এক সন্ন্যাসীর দেখা পান এবং তার দেয়া পরামর্শে আলো ও বাতাসের সাহায্যে বেঁচে থাকার দীক্ষা নেন। এরপর থেকে ক্রিয়া যোগাসন ও শ্বাসচর্চার মাধ্যমে খাবার থেকে দূরে সরে যান তিনি। এরপর থেকে তিনি কখনো অসুস্থ হননি এমনকি খাবার খাওয়ার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেননি। এভাবেই জল ও খাবার ছাড়া দিব্যি আছেন এই নারী।
সে সময়কার বর্ধমানের রাজা গিরি বালার এমন না খেয়ে থাকার কথা জানতে পারেন। তিনি গিরি বালার না খাওয়ার অবস্থা কঠোরভাবে তদন্ত করেছিলেন। রাজা যাদেরকে পাহারায় রেখেছিলেন তারা জানায় যে, গিরি বালাকে কখনোই খেতে দেখেননি তারা। এমনকি জল পর্যন্ত খেতেন না তিনি।
কয়েক বছর আগে গিরি বালাকে পরীক্ষা করা হয় আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে। এজন্য টানা দু’মাস নজরে রাখা হয় তাকে। তবুও তার জল পিপাসা কিংবা খাবার খাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। এছাড়াও শরীরের কোনো সমস্যাও ধরা পড়েনি।
শুধু গিরি বালাই নন, খাবার এবং জল ছাড়া অনেকেই বেঁচে ছিলেন অনেক বছর। যারা জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই না খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছিলেন। ১৯৪০ সাল থেকে খাবার কিংবা জল ছাড়া বেঁচে আছেন ভারতের এই সন্ন্যাসী। ২০০৩ এবং ২০১০ সালে প্রহ্লাদ জানি আদতেও সত্যি বলছেন কি না সেটা যাচাই করার জন্য পরীক্ষা করা হয়। ভারতের আহমেদাবাদে অবস্থিত স্টারলিং হাসপাতালের চিকিৎসক সুধীর শাহ নিজে এই পরীক্ষা শেষ করে জানান যে, প্রহ্লাদ জানি খাবার এবং জল ছাড়া বেশ ভালোভাবেই বেঁচে আছেন। যদিও অনেকেই ব্যাপারটির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
আবার জাপানের বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা এমন এক পদ্ধতি জানতেন, যাতে জীবিত অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে পরিণত হওয়া যায় মমিতে। একসময় তাদের শরীর নিষ্প্রাণ হয়ে যেত। বৌদ্ধ ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী, এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে আলোকপ্রাপ্ত হওয়া যায়। যাকে তারা ‘সোকুশিনবুৎসু’ বলেন।
তাদের মমি হওয়ার পদ্ধতি অনেক রোমাঞ্চকর। এজন্য তাদের কঠোর ডায়েট চার্ট মেনে চলতে হতো। প্রথমে সব খাবার ছেড়ে শুধু জল, ফল, বাদাম এসব খেতেন তারা। ফলে শরীরের মেদ ঝরে যেত দ্রুত। পরের ধাপে সেসবও খাওয়া বন্ধ করে দিতেন। এরপর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন বছরের পর বছর। এভাবেই তারা মৃত্যুবরণ করতেন। ধীরে ধীরে প্রাকৃতিকভাবেই মমিতে পরিণত হতেন এসব সন্ন্যাসীরা।
সূত্র: প্রিন্টারেস্ট, ক্রিস্টালক্ল্যারিটি