বিশেষ: সফল ব্যবসায়ী হওয়ার ১২টি মূলমন্ত্র, যা কোনও বিজনেস কোর্সে পাবেন না (১ম পর্ব)

সফল উদ্যোক্তা হওয়ার মূলমন্ত্র পেতে হলে আপনাকে সত্যিকার সফল উদ্যোক্তাদের কাছেই যেতে হবে। একাডেমিকরা হয়তো আপনাকে থিওরি বলতে পারবেন, হিসাব দেখাতে পারবেন। কিন্তু সত্যিকার জীবনে যাঁরা সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন – তাঁরাই শুধু সফল উদ্যোক্তা হওয়ার সত্যিকার মূলমন্ত্র খুঁজে পেয়েছেন। একাডেমিক বা ইন্সটিটিউশনাল জ্ঞান গুলোকে বাস্তব জীবনে সত্যিকার কাজে লাগানোর জন্য আপনাকে সত্যিকার সফল উদ্যোক্তাদের কাছেই যেতে হবে।

বিজনেস ইন্সটিটিউটের বইয়ের চেয়ে অনেক সময়ে সেলফ ডেভেলপমেন্ট বইগুলো বেশি কাজে লাগে, কারণ, ব্যবসা সম্পর্কিত বেশিরভাগ বেস্ট সেলিং সেলফ ডেভেলপমেন্ট বই লেখা হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রের সফল মানুষদের ওপর গবেষণা করে। তাঁদের জ্ঞান, অভ্যাস, কাজ করার ধরন – ইত্যাদি এ্যানালাইসিস করে লেখকরা সফল মানুষদের কমন গুণ ও কাজের ধরন গুলো খুঁজে বের করেন। যেগুলো সবারদ উপকারে আসতে পারে।

নেপোলিয়ন হিল তাঁর সেলফ ডেভেলপমেন্ট ক্লাসিক “থিংক এ্যান্ড গ্রো রিচ” লেখার আগে কয়েক বছর ধরে ৫০০ জন অসাধারণ সফল মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, এবং তাঁদের ওপর গবেষণা করেছেন। “স্মার্টার ফাস্টার বেটার” বইয়ের লেখক চার্লস ডুহিগ ও একই কাজ করেছেন। এই বইগুলোতে সাধারণ ভাবে, অতি সফল মানুষদের সাফল্যের পেছনের কারণগুলো এমন ভাবে তুলে ধরা হয়, যাতে সেগুলো কাজে লাগিয়ে পাঠকরাও তাঁদের জীবনে সফল হতে পারেন।

লেখক, সাংবাদিক, ও গবেষক কেভিন ক্রুজ এই কাজটিই করেছেন। তবে তিনি বই লেখেননি। বর্তমান সময়ে জীবিত ২০০ জন সফল মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। যাঁদের বেশিরভাগই সফল উদ্যোক্তা, এর মধ্যে রিচার্ড ব্র্যানসন, ওয়ারেন বাফেট সহ ৭জন বিলিওনেয়ার আছেন।

তিনি সবাইকেই খুব সাধারণ একটি প্রশ্ন করেছেন: ”আপনার অসাধারণ প্রোডাক্টিভিটি বা কর্মক্ষমতার পেছনের ১ নম্বর কারণটি কি?”

এর উত্তর এক একজন এক এক ভাবে দিয়েছেন, তবে এর মাঝে ১২টি বিষয় সবচেয়ে বেশিবার উঠে এসেছে, এবং ইন্টারভিউ দেয়া প্রায় সবাই এর কোনও না কোনওটি ফলো করেন।

তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক –
০১. সফল উদ্যোক্তারা ঘন্টার বদলে মিনিট হিসাব করে কাজ করেন
বেশিরভাগ মানুষ ঘন্টা হিসাব করে কাজ করেন। এমনকি উদ্যোক্তারাও দিনে কয় ঘন্টা কাজ করলেন – এটাই হিসাব করেন। কিন্তু ক্রুজ এর ভাষায় “আলট্রা সাকসেসফুল” বা অতি সফল উদ্যোক্তারা কাজ করেন মিনিটের হিসেবে।

ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “সেরা সফল উদ্যোক্তারা দিনে ২৪ ঘন্টার বদলে পুরো ১৪৪০ মিনিট নিয়েই সচেতন থাকেন। এবং তাঁরা বোঝেন জীবনে সময়ের মূল্য সবচেয়ে বেশি। টাকা গেলে টাকা পাওয়া যায়, কিন্তু সময় গেলে আর তা ফিরে পাওয়া যায় না।”

বিল গেটস কে নিয়ে একটা গল্প প্রচলিত আছে। তাঁর ডেস্ক থেকে একবার কয়েক হাজার ডলার পড়ে গিয়েছিল। তিনি সেটা আর তোলেননি। কারণ, সেটা তুলতে গিয়ে তাঁর যতটা সময় খরচ হত, সেই সময় কাজে লাগিয়ে তিনি আরও বেশি টাকা আয় করতে পারতেন।

এই গল্প সত্যি কি মিথ্যা – এটা নিয়ে সন্দেহ আছে। কিন্তু গল্পের পেছনের মেসেজটা দিনের আলোর মত সত্যি। সময়কে যে কোনও কিছুর চেয়ে বেশি মূল্য দিলে, সময় তা বহু গুণে ফিরিয়ে দেয়।

কাজেই, সফল উদ্যোক্তা হওয়ার অন্যতম মূল মন্ত্র হল, প্রতিটি মিনিট এর ব্যাপারে সচেতন থেকে কাজ করতে হবে। যদি ১ ঘন্টা কাজ করেন, তবে খেয়াল রাখুন ৬০টি মিনিটই যেন কাজে লাগে। দেখবেন, ১ ঘন্টার কাজ ১ ঘন্টার অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। বাকি সময়টা আপনি অন্য জরুরী কাজে লাগাতে পারবেন। এতে প্রোডাক্টিভিটি অনেক গুণ বেড়ে যাবে।

০২. এক সময়ে শুধু একটি কাজেই মনোযোগ দিন
ফোকাস হল অসাধারণ সফল হওয়ার আরেকটি অন্যতম মূলমন্ত্র। আপনি যখন যেটাই করছেন, সেটাতে পূর্ণ মনোযোগ দিন। তারচেয়েও বড় কথা, দিনের কাজের শুরুটা করুন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোযোগ দিয়ে। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার জানা থাকার কথা যে, কোন কাজটি করা আপনার ব্যবসার উন্নতির জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরী।

বেশিরভাগ ”আলট্রা সাকসেসফুল বিজনেস পিপল” – তাঁদের দিনের কাজ শুরু করার পর ২ ঘন্টা গভীর ভাবে একটি কাজই করেন – যে কাজটি তাঁদের ব্যবসার জন্য সবচেয়ে জরুরী। এই সময়ে তাঁরা কারও সাথে কথা বলেন না, বা অন্য কোনও দিকে মনোযোগ দেন না।

এই ‘ডিপ ওয়ার্ক’ আওয়ারে তাঁদের প্রোডাক্টিভিটি সেরা পর্যায়ে থাকে, এবং দিনের বাকি কাজগুলোও তাঁরা অনেক গুছিয়ে করতে পারেন। আপনিও দিনের কাজ শুরুর পর প্রথম ২ ঘন্টা কি করবেন – সেদিকে খুব বেশি গুরুত্ব দিন। আশা করা যায় আপনার কাজের মান অনেক বেড়ে যাবে।

০৩. ক্যালেন্ডার ধরে কাজ করুন
কিছু মানুষ তাঁদের দিনে একদম ছোট ছোট অপ্রয়োজনীয় কাজও শিডিউলের মধ্যে রাখেন। কেভিন ক্রুজ ২০০ জন অতি সফল মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে জানতে পেরেছেন, এতে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি। আপনি যদি অগুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোও শিডিউল করে রাখেন, তার কমবেশি ৪১% করতে পারবেন না। এইসব না করা কাজ অবচেতন মনে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।

GTD মেথডও এই কথাই বলে। ছোট ছোট কাজ শিডিউল করে, না করার ফলে সেগুলো অবচেতন মনে থেকে যায়, যার ফলে ”Zeigarnik effect“ নামক একটি সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই সমস্যার কারণে অহেতুক মানসিক চাপ, নিদ্রাহীনতা – ইত্যাদি হয়।

অতি সফল মানুষরা দিনের সব ছোটছোট বিষয় শিডিউলে না রেখে, ক্যালেন্ডার অনুযায়ী কাজ করেন। অর্থাৎ, তাঁরা কোন তারিখে কোন কাজটা শেষ করেবন – তা শিডিউল করে রাখেন। এবং সেই জরুরী কাজগুলোকে ছোট ছোট ভাগ করে দিনের শিডিউলে ঢোকান। এতে তাঁদের ফোকাস শুধু জরুরী কাজগুলোতেই থাকে, এবং অহেতুক মানসিক চাপ নিতে হয় না।

০৪. ঢিলেমি বন্ধ করার জন্য ঢিলেমির ফলাফল আগে ভাবুন

সফল উদ্যোক্তা হওয়া, বা অন্য যে কোনও বিষয়ে সফল হওয়ার জন্য ঢিলেমি বাদ দেয়াটা একটি জরুরী মূলমন্ত্র। ঢিলেমির কুফল খুবই ভয়াবহ। বহু প্রতিভাবান ও দক্ষ মানুষ শুধুমাত্র এই ঢিলেমি বা কাজ ফেলে রাখার কারণে জীবনে ব্যর্থ হয়েছেন।

সাধারণ মানুষদের মত, সফল মানুষদেরও ইচ্ছা হয় কাজ ফেলে বিশ্রাম নিতে, মুড না থাকলে একটু জিরিয়ে নিতে, প্রিয় সিনেমা বা টিভি সিরিজটা রিলিজের দিনই দেখে ফেলতে – ইত্যাদি। কিন্তু তাঁরা এইসব ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখেন, কারণ তাঁরা জানেন, কাজ ফেলে রাখলে বা ঢিলেমি করলে ভবিষ্যতে কি হবে।

এখন প্রশ্ন করতে পারেন, তাঁরা কি জাদু জানেন, অথবা টাইম ট্রাভেল করতে পারেন, নাকি ভবিষ্যৎ দেখতে পারেন?

এর কোনওটাই নয়। তাঁরা এমন একটি ক্ষমতা কাজে লাগান, যা প্রতিটি মানুষেরই আছে। তা হল, যুক্তি দিয়ে বিচার করতে পারা, এবং কল্পনা করতে পারা।

যখনই তাঁদের ঢিলেমি করার ইচ্ছা হয়, তাঁরা কল্পনা করেন যে, ঢিলেমি করে কাজ ফেলে রাখলে ভবিষ্যতে তাঁদের কি কি ক্ষতি হতে পারে। হয়তো সময়মত কাজ শেষ না করতে পারলে অনেক দিনের কাজ করা প্রজেক্ট হয়তো সময়মত জমা দিতে পারবেন না। হয়তো ক্লায়েন্টের সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যেতে পারে, অথবা সময়মত প্রোডাক্ট ডেলিভারি দিতে না পারায় বিরাট লস হতে পারে – ইত্যাদি।

একটু যুক্তি দিয়ে চিন্তা করলেই, কাজ ফেলে রাখার কুফল গুলো ভাবতে পারা যায়। আর এগুলো কল্পনা করলে এমনিতেই আপনার এড্রিনলিন হরমোন কাজ করা শুরু করবে। যার ফলে নিজের প্রাকৃতিক বেঁচে থাকার প্রবণতা বা “সারভাইভাল ইন্সটিংকস” থেকেই আপনি আবার কাজ করা শুরু করবেন। – এড্রিনলিন হরমোন সাধারণত বিপদের মুখে, বা চ্যালেঞ্জের মুখে মানুষকে এ্যাকটিভ করে।

আমাদের ব্রেন যেহেতু কল্পনা ও বাস্তবে একই রিএ্যাকশন দেখায়, সেহেতু কাজ না করার বিপদ কল্পনা করলে, এমনিতেই ভেতরে কাজ করার তাগিদ তৈরী হবে। সফল মানুষরা সচেতন ভাবে বা অবচেতন ভাবে এটাকে নিয়মিত কাজে লাগান। আপনিও চেষ্টা করুন।

বি:দ্রঃ পরবর্তী টিপস জানতে আজই ফল করুন আমাদের। নিচে অথবা উপরে “ফলো’ বাটনে ক্লিক করুন।

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy