উদ্যোক্তা হিসেবে স্বাভাবিক ভাবেই আপনি সব সময়েই আপনার ব্যবসার উপার্জন বাড়াতে চাইবেন। কিছু উদ্যোক্তা একদম শুরু থেকেই খুব ভালো আয় করেন, কেউবা একটু সময় নিয়ে সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারেন। কিছু উদ্যোক্তার আয়ের হার সময়ের সাথে বাড়তে থাকে, কারওবা একটা জায়গায় এসে থমকে যায় – বাড়েও না আবার কমেও না।
সময়ের সাথে সাথে যাঁদের আয় বাড়ে, তাঁরা আসলে কি করেন? কি এমন জাদু জানেন তাঁরা যে, অন্যরা যখন থেমে আছে বা পিছিয়ে যাচ্ছে – তাঁদের এ্যাকাউন্ট শুধুই ফুলে ফেঁপে উঠছে?
আলিবাবার জ্যাক মা অথবা আমাজন এর জেফ বেজোস এর মত বিশ্বসেরা সফল উদ্যোক্তাদের কথা কথা নাহয় বাদই দিলাম, আমাদের আশপাশে তাকালেও এমন উদ্যোক্তা দেখা যায়, যাঁরা দেখার মত কিছু না করেও ঠিকই ব্যবসায় ভালো লাভ করেন।
এটা আসলে খুব কঠিন বা আশ্চর্যজনক কিছু নয়। যেসব উদ্যোক্তা অন্যদের চেয়ে ব্যবসা থেকে বেশি আয় করেন, তাঁরা কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাস চর্চা করেন। কেউ হয়তো জেনে করেন, কেউ হয়তো এগুলোর উপকারিতা না জেনেই চর্চা করেন। কিন্তু দুই দলই সমান ভাবে লাভবান হন।
আজ আপনাকে এমনই ৭টি অভ্যাসের কথা বলব – যেগুলো চর্চা করলে আপনার আয়ও বৃদ্ধি পাবে।
০১. ইউনিক হোন
যেসব উদ্যোক্তা গতানুগতিক ব্যবসা করেন – তারা বেশিরভাগ সময়েই একটা জায়গায় এসে আটকে যান। তাঁদের আর্থিক অবস্থা এক রকম ভাবে চলতে থাকেন। তাঁরা হয়তো নিয়মিত আয় করেন – কিন্তু তাঁদের আয়ের হার বাড়ে না।
বিশ্বখ্যাত অনলাইন লেনদেন প্রতিষ্ঠান পে-পাল এর সহপ্রতিষ্ঠাতা পিটার থেইল তাঁর বেস্ট সেলিং বই জিরো টু ওয়ান – এ লিখেছেন, কোনও ব্যবসাকে যদি সর্বোচ্চ পর্যায়ে সফল হতে হয়, তবে অবশ্যই তার মধ্যে এমন কিছু থাকতে হবে – যা এর আগে কেউ করেনি।
আপনি যখন পুরোপুরি ইউনিক কোনও আইডিয়া নিয়ে কাজ করবেন, অথবা প্রচলিত কোনও ব্যবসায় ইউনিক কিছু নিয়ে আসবেন – তখন আপনার পন্য বা সেবা নেয়ার জন্য মানুষের আগ্রহ বেশি থাকবে।
ব্যাপারটা এমন নয় যে আপনাকে একদম নতুন আইডিয়া নিয়েই মাঠে নামতে হবে। প্রচলিত ব্যবসাতেও নতুন নতুন আইডিয়া যোগ করে তাকে মানুষের চোখে ইউনিক বানানো যায়। আমাজন ডট কম এর কথাই ধরুন, এটা আসলে একটা খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। খুচরা দোকানের আইডিয়াকেই অন লাইনে এনে জেফ বেজোস আজ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনী।আপনার যদি একটি দোকান থাকে, আপনি দোকানের ডিজাইনে একটু পরিবর্তন এনেই কিন্তু অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি ক্রেতা আকৃষ্ট করতে পারেন। ওয়ালমার্ট এর প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ওয়ালটন তাঁর পাশের দোকানের সাথে প্রতিযোগীতায় এগিয়ে থাকার জন্য তাঁর নিজের দোকানের সামনে একটি পপকর্ণ ও একটি আইসক্রিমের গাড়ি বসিয়ে দিয়েছিলেন। এই দু’টি গাড়ির বিক্রী থেকে যদিও তাঁর খুব একটা লাভ হত না – কিন্তু এগুলোর কারণে তাঁর দোকানের সামনে বেশি ক্রেতা আসতো। ফলে তাঁর দোকানের বিক্রী বেড়ে যাচ্ছিল।
নিজের ব্যবসার বিক্রী বাড়ানোর জন্য সব সময়েই এমন আইডিয়ার কথা ভাবতে থাকুন, যেগুলো সরাসরি আপনার পন্যের সাথে জড়িত না হলেও ক্রেতা আকৃষ্ট করে। অনেক রেস্টুরেন্টেই দেখবেন বাচ্চাদের খেলার জন্য আলাদা জায়গা করা থাকে। এটা রেস্টুরেন্টের সাথে সরাসরি জড়িত না হলেও – এর ফলে রেস্টুরেন্টে ক্রেতা আসার পরিমান বাড়ে, ফলে আয়ও বৃদ্ধি পায়।
আপনার ব্যবসার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের এমন কোনও সমস্যা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন, যার সঠিক সমাধান এখন পর্যন্ত কেউ করেনি। দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবসার আয়ের হার বাড়ানোর জন্য এটা খুবই ভালো একটি উপায়।সব সময়ে প্রতিযোগীদের দিকে নজর রাখুন। তারা কি করছে – তা দেখার পাশাপাশি, তারা কি করছে না – এটাও বোঝার চেষ্টা করুন। নিজেকে যত অনন্য ভাবে তুলে ধরতে পারবেন – ততই বেশি ক্রেতা আপনার প্রতি আকৃষ্ট হবে।
০২. ঝুঁকি নিতে ভয় পাবেন না
ব্যবসার আয়ের গতি কমে যাওয়ার একটা প্রধান কারণ হল অনেক উদ্যোক্তা ঝুঁকি নিতে অতিরিক্ত ভয় পান। ব্যবসা একটা স্থিতিশীল জায়গায় এসে পড়ার পর তাঁরা আর নতুন করে কিছু চেষ্টা করতে চান না। কারণ তাঁরা ভয় পান ব্যবসার বর্তমান লাভজনক অবস্থা এতে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
কিন্তু ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে হলে আপনাকে নতুন নতুন জিনিস চেষ্টা করতেই হবে। ধরুন আপনার একটি রেস্টুরেন্ট আছে। রেস্টুরেন্টের অবস্থান অনুযায়ী প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২০০ জন ক্রেতা এখানে আসবে। এই রেস্টুরেন্ট থেকে আপনার নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট হারে আয় হয়। এখন এই আয়ের হার বাড়াতে হলে আপনাকে অন্য এলাকাতেও এটার শাখা খুলতে হবে।
এখন আপনি যদি নতুন এলাকায় রেস্টুরেন্টের শাখা খুলতে চান, তবে আপনাকে বেশ কিছু টাকা খরচ করতে হবে। সেইসাথে বর্তমান রেস্টুরেন্টে দেয়া সময়ের বেশ কিছুটা সেখানে বরাদ্দ করতে হবে। তাছাড়া নতুন কর্মচারী নিয়োগ, মার্কেটিং – ইত্যাদি বেশ কিছু কাজ করতে হবে। এবং এরপরও ১০০% নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যাবে না যে, নতুন রেস্টুরেন্টটা পুরোনোটার মতই চলবে।
কিন্তু যদি বর্তমান আয়ের হার বাড়াতে চান, তবে অবশ্যই আপনাকে নতুন একটি রেস্টুরেন্ট খুলতে হবে। এই ঝুঁকিটুকু না নিলে যে অবস্থায় আছেন, সেই অবস্থাতেই থাকতে হবে। একজন সত্যিকার সফল উদ্যোক্তা সব সময় নিজের ব্যবসার পসার বাড়াতে চান। আর এজন্য হিসেব করে ঝুঁকি নেন।
পে পাল এর আরেক প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের কথাই ধরুন। পে পাল দিয়ে আর্থিক লেনদেনের চেহারা পাল্টে দেয়ার পর তিনি কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেননি।টেসলা, স্পেস এক্স – একে একে অনেক ব্যবসার দিকে হাত বাড়িয়েছেন তিনি। একারণেই বিশ্বের সেরা উদ্যোক্তাদের একজন হতে পেরেছেন মাস্ক।
আপনি যে ব্যবসাই করেন না কেন, সব সময়ে সুযোগ খুঁজুন ব্যবসার আওতাকে আরও বড় করার। এই কাজে ঝুঁকি থাকবেই। কিন্তু যদি নিয়মিত ব্যবসার আয়ের হার বাড়াতে চান, তবে এই ঝুঁকিটুকু নেয়ার মানসিকতা আপনার থাকতেই হবে।
বিশ্বখ্যাত লেখক জেমস স্টিফেন্স এর এই উক্তিটি সব সময়ে মনে রাখবেন, “নতুন কিছু করার আগ্রহ ভয়কে এমন ভাবে জয় করে, যেমনটা সাহস দিয়েও সম্ভব নয়”
০৩. টাইম ম্যানেজমেন্ট
মানুষের জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু হল সময়। জীবনের যে কোনও ক্ষেত্রেই সময়ের মূল্য যতটা, ততটা মূল্য কোনওকিছুরই নেই। ব্যবসার ক্ষেত্রে এই কথাটা আরও ভালো করে খাটে।
যে কোনও সফল উদ্যোক্তাই দারুন ভাবে টাইম ম্যানেজমেন্ট করেন। তাঁরা জানেন যে তাঁদের ব্যবসা একমাত্র তখনই উন্নতি করবে, যখন তাঁরা সময়ের কাজ সময়ে করবেন। সময়মত ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করবেন।
আপনার সার্ভিস বা পন্য গ্রহণ করার জন্য যদি ক্রেতাদের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়, তবে তাঁরা বিরক্ত হয়ে অন্যের কাছে যাবেন। ২ দিনে ডেলিভারি দেয়ার কথা বলে যদি ৫ দিন লাগান – সেটা কোনও ক্রেতাই ভালো চোখে দেখবেন না। এতে করে বাজারে আপনার সুনাম নষ্ট হবে। গ্রাহক বাড়ার বদলে দিনে দিনে কমতে থাকবে। অন্যদিকে যদি ব্যবসার সব কাজ সময়মত করেন, তবে তা বাজারে আপনার সুনাম সৃষ্টি করবে। নতুন নতুন গ্রাহক আপনার পন্য বা সেবা নিতে আগ্রহী হবে। কারণ, আপনার সুন্দর টাইম ম্যানেজমেন্টের কারণে পুরাতন ক্রেতারাই নতুন ক্রেতার কাছে আপনাকে রিকমেন্ড করবেন। আর ক্রেতা বাড়া মানেই আপনার আয় বাড়া।
০৪. কথা ও কাজে মিল রাখুন
ক্রেতাদের যা বলবেন, তাঁরা যেন সেটাই পায়। বিজ্ঞাপনে যা থাকবে, তারচেয়ে বেশি দিন। কোনওভাবেই কম দেবেন না। কথা ও কাজে এক না থাকলে আপনার ব্যবসার কোনওদিন উন্নতি হবে না। সততার মূল্য সবখানেই আছে। হয়তো সততার ফলাফল পেতে সময় লাগে, কিন্তু একবার পাওয়া শুরু হলে আপনাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না।
আপনার কথার সাথে যদি সার্ভিসের মিল না থাকে, তবে একজন ক্রেতা একবার এসে আর আসবে না। সেইসাথে মুখে মুখে আপনার দুর্নামও ছড়িয়ে পড়বে। এর ফলে ব্যবসার প্রসার তো হবেই না, বরং দিন দিন কমতে থাকবে। অনেক বড় বড় কোম্পানী শুধুমাত্র এই কারণে বাজারে টিঁকে থাকতে পারেনি।
অন্যদিকে কথার সাথে যদি সার্ভিসের মিল থাকে – তবে ক্রেতা তো ফিরে আসবেই, মানুষের মুখে মুখেই আপনার ব্যবসার সুনাম ছড়িয়ে পড়বে – যার ফলে অনেক নতুন নতুন ক্রেতা যোগ হবে। ফলে ব্যবসার আয়ও দিন দিন বাড়তে থাকবে।
আপনার যা নেই – কখনওই তা থাকার কথা বলবেন না। ক্রেতার সাথে সৎ থাকুন। আপনার ব্যবসার আয় কমার বদলে দিন দিন বাড়তেই থাকবে।
০৫. সব সময়ে নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন
আগেই বলেছি, ব্যবসার আয় বাড়াতে আপনাকে নতুন ধরনের আইডিয়া প্রয়োগ করতে হবে। ব্যবসার ক্ষেত্রে এমন কিছু আনতে হবে যা আগে কেউ আনেনি। এই আইডিয়াগুলো কোত্থেকে আসবে? – অবশ্যই নতুন জিনিস শেখার মধ্য দিয়ে। নতুন অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জনের মধ্য দিয়ে। নতুন প্রযুক্তি ও ট্রেন্ড সম্পর্কে জানতে হবে।মানুষ কি চাচ্ছে – সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে। সেই অনুযায়ী নিজের পন্য ও সেবার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
কখনও কি ভেবেছেন গুগল, ফেসবুক, মাইক্রোসফট – এর মত কোম্পানীগুলো কেন কিছুদিন পরপরই আপডেট আনে?
এর কারণ তারা সব সময়ে ক্রেতাদের নতুন নতুন চাহিদা সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখে – এবং সেই অনুযায়ী নিজেদের পন্য ও সার্ভিস আপডেট করে। এই ধরনের আপডেট যে কোনও ব্যবসাতেই আনা যায়। শুধু উদ্যোক্তাকে শেখার মানসিকতা রাখতে হবে।পৃথিবীর প্রায় সব বড় বড় সফল উদ্যোক্তাদের রুটিন এর একটি অংশ বরাদ্দ থাকে নতুন জিনিস শেখার জন্য।
ফেসবুক সারাবিশ্বে জনপ্রিয় হওয়ার প্রধান কারণ, এটি বিশ্বের সব ধরনের মানুষের চাহিদা বোঝে। আর এই চাহিদা বোঝার গুরুত্ব অনুধাবন করার পেছনে রয়েছে মার্ক জুকারবার্গ এর একটি দারুন অভ্যাস। তিনি নিয়মিত পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি ও তাদের সংস্কৃতি নিয়ে পড়াশুনা করেন। এর ফলে তিনি বুঝতে পারেন, কোন দেশের মানুষ কি পছন্দ করে, এবং তাদের আচার ব্যবহার কেমন। এভাবেই তিনি নির্দিষ্ট ধরনের মানুষের জন্য নির্দিষ্ট ধরনের সার্ভিস দিতে পারেন। একারণেই ফেসবুক বাংলাদেশেও যেমন জনপ্রিয়, তেমনি নরওয়েতেও জনপ্রিয়। কিন্তু দু’টি দেশের মানুষের প্রায় কোনও জায়গাতেই মিল নেই।
মানুষের চাহিদা সম্পর্কে জানা, নতুন আইডিয়া চিন্তা করা ও কাজে লাগানো, ব্যবসায় নতুন নতুন কৌশল কাজে লাগানো – এগুলো একটি ব্যবসাকে একটি ধারাবাহিক উন্নয়নের আওতায় নিয়ে আসে। ফলে ব্যবসার প্রসার হওয়ার পাশাপাশি আয়ও বাড়তে থাকে।
০৬. ক্রেতাদের সাথে নিবিড় সম্পর্ক রাখুন
আপনি যে ব্যবসাই করেন না কেন, ক্রেতারাই তার প্রাণ। মানুষ যদি আপনার পন্য বা সেবা গ্রহণ না করে – তবে সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হতে বাধ্য।
সফল উদ্যোক্তারা নিয়মিত ভাবে ক্রেতাদের জন্য সময় দেন। আমাজন সেরা অনলাইন শপ হতে পারার একটি বড় কারণ এর অসাধারণ কাস্টোমার সার্ভিস। শুধুমাত্র কাস্টোমার সার্ভিস ভালো না হওয়ার কারণে অনেক ব্যবসাই ভালো পন্য থাকার পরও সফল হতে পারেনি।
ক্রেতাদের চাহিদা ও অভিযোগকে গুরুত্ব দেয়া, তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা একটি ব্যবসার উন্নতির অন্যতম শর্ত। ৪ নম্বর পয়েন্টে বলেছি যে, কথা ও কাজে মিল রাখলে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়, এবং তাদের মাধ্যমেই নতুন ক্রেতা আসে। এই ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা কাছাকাছি। ক্রেতাদের সাথে যদি ভালো সম্পর্ক থাকে, তারা যদি আপনার সাথে যোগাযোগ করে সময়মত রেসপন্স পায়, আপনার কাস্টোমার সার্ভিস যদি উন্নত মানের হয় – তবে বর্তমান ক্রেতারা তো আপনার সাথে থাকবেই – তারাই আপনার জন্য আরও নতুন ক্রেতা নিয়ে আসবেন। ফলে আপনার আয়ও দিনে দিনে বাড়তে থাকবে।
০৭. সার্ভিসের মান বাড়াতে থাকুন
নতুন কোনও ব্যবসা একটু ভালো করতে শুরু করলে অনেক উদ্যোক্তা একটি চরম ভুল করে বসেন। যার ফলে ব্যবসা শেষ হয়ে যায়, অথবা একটা পর্যায়ে আসার পর আর উন্নতি হয় না।
এমন অনেক ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা প্রথম দিকে খুব ভালো সার্ভিস দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেন। কিন্তু কিছুদিন পরই দেখা যায় তাঁদের সেই সার্ভিস আর নেই। কারণ, ব্যবসা মোটামুটি ভালো একটা জায়গায় আসার পর তাঁরা ভাবেন এখন আর তাঁদের সার্ভিসের মান বাড়ানোর দরকার নেই, এমনিতেই কাস্টোমার আসবে। কিন্তু এটা চরম ভুল। যে সার্ভিসের জন্য প্রথমে কাস্টোমাররা এসেছিলেন – সেই সার্ভিস পরে না পেলে তাঁরা মুখ ফিরিয়ে নেবেন।
অনেক সময়ে দেখা যায় প্রথম দিকে যখন দিনে ১০ জন কাস্টোমার আসতেন তাঁদের জন্য ২ জন লোক যথেষ্ঠ ছিল। কিন্তু কাস্টোমারের সংখ্যা ৫০ জন হয়ে গেলেও সেই ২জন দিয়েই চালানোর চেষ্টা করা হয়। এতে করে ক্রেতারা স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের কাঙ্খিত সার্ভিস পাবেন না। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তাকে অবশ্যই নতুন লোক নিয়োগ দিতে হবে এবং সার্ভিসের মান বাড়াতে হবে। না হলে তাঁর আয়ের অবনতি হবে, এবং বাজারে নাম খারাপ হবে।
এছাড়া সাধারণ ভাবেও একটি ব্যবসার প্রসার ও আয়কে ধারাবাহিক ভাবে বাড়াতে গেলে সার্ভিসের মান ও ব্যপ্তি ধারাবাহিক ভাবে বাড়িয়ে যেতে হবে। না হলে ব্যবসার গতি থমকে যাবে।
পরিশিষ্ট:
একজন উদ্যোক্তাকে তখনই পূর্ণ সফল বলা যায় যখন তাঁর ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য লাভ হচ্ছে এবং তা দিন দিন বেড়ে চলেছে। দিন শেষে আর্থিক লাভ দিয়েই একটি ব্যবসার সাফল্য মাপা হয়। এবং দীর্ঘ মেয়াদে একটি ব্যবসাকে ভালো ভাবে ধরে রাখার জন্য ধারাবাহিক ভাবে আয়ের হার বাড়ানোর কোনও বিকল্প নেই। আমরা আশা করব উদ্যোক্তা হিসেবে সফল উদোক্তাদের অভ্যাস নিয়ে এই লেখার পরামর্শগুলো ব্যবসার আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে আপনাকে একটু হলেও সাহায্য করবে।
লেখাটি সম্পর্কে আপনার যে কোনও মতামত আমাদের কমেন্ট করে জানান। আপনার প্রতিটি মতামতই আমাদের কাছে মহামূল্যবান।
আর যদি মনে হয় লেখাটি অন্যদেরও উপকার করবে – তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।