পিরিয়ড বা মাসিকের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্ক যে রয়েছে তা এরইমধ্যে গবেষণার ফলে জানা গেছে। তবে সাম্প্রতিক এক জেনেটিক গবেষণায় উঠে এসেছে, এ সংশ্লিষ্ট ব্যথার সঙ্গে বিষণ্নতারও সংযোগ রয়েছে।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘ব্রিফিংস ইন বায়োইনফরম্যাটিক্স’-এ। গবেষণা অনুসারে, মাসিকের ব্যথায় মূল অপরাধী বিষণ্নতা, এতে ব্যথা বাড়ে।
গবেষণায় বিভিন্ন বায়োমেডিক্যাল ডেটাবেস থেকে নেওয়া ৫ লাখ ৭২ হাজার ৪৮৪ জন ইউরোপীয় ও ৮ হাজার ৩১৬ জন এশীয় মানুষের জিনোম ও মেডিকেল তথ্য নিয়ে গবেষণা করেছেন গবেষকরা।
“জিনগত বিভিন্ন প্রকরণ বিশ্লেষণ ও নির্দিষ্ট জিন শনাক্ত করতে মেন্ডেলিয়ান র্যান্ডমাইজেশন নামে এক বিশেষ ধরনের কৌশল ব্যবহার করেছি আমরা,” বলেছেন এ গবেষণার প্রধান লেখক ও চীনের ‘লিভারপুল ইউনিভার্সিটি’র পিএইচডি শিক্ষার্থী শুহে লিউ।
এখানে দুটি গবেষণা দলের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া গেছে বিষণ্নতা ও মাসিকের ব্যথা বা ডিসমেনোরিয়া’র মধ্যে শক্তিশালী এক যোগসূত্র।
“আমাদের গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, মাসিকের ব্যথা বা ডিসমেনোরিয়ার একটি কারণ হতে পারে বিষণ্নতা। তবে, আমরা এমন কোনো প্রমাণ পাইনি যে, পিরিয়ডের ব্যথা বিষণ্নতার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে,” বলেছেন লিউ।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের জিনে বিশেষ একটি প্রোটিন খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা, যার সম্পর্ক রয়েছে বিষণ্নতা ও মাসিকের ব্যথা, দুটোর সঙ্গেই। গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, শারীরিক কারণেই বিষণ্নতা ও পিরিয়ডের ব্যথার মধ্যে সম্পর্ক থাকতে পারে।
গবেষণায় আরেকটি কারণ উঠে এসেছে, সেটি হচ্ছে ঘুম। গবেষকরা বলছেন, ঘুম ভাল না হওয়ার সঙ্গেও এই উভয় অবস্থা অর্থাৎ বিষণ্নতা ও মাসিকের ব্যথার মধ্যে সংযোগ রয়েছে।
“পর্যাপ্ত ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে কারো মাসিকের ব্যথা বাড়তে পারে। তাই ঘুমের সমস্যা সমাধান করা গেলে তা বিষণ্নতা ও মাসিক ব্যথা, উভয় অবস্থার ক্ষেত্রেই রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা,” বলেছেন লিউ।
“তবে, এসব কারণের মধ্যে জটিল বিভিন্ন সম্পর্ক বোঝার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন।”
পুরুষদের তুলনায় নারীদের বিষণ্নতায় ভোগার ঝুঁকি বেশি বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট কসমস। গবেষকরা বলছেন, বিশেষ করে প্রজনন বছরগুলোয় বিষণ্নতার ঝুঁকিতে থাকেন নারীরা।
“নারীদের পিরিয়ডের ব্যথায় চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রায়ই মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় আসে না,” বলেন লিউ।
“আমাদের গবেষণার বিভিন্ন ফলাফলে তীব্র মাসিকের ব্যথায় ভোগেন এমন নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব উঠে এসেছে। মাসিকের ব্যথার নানা ধরনের চিকিৎসা ও উন্নত স্বাস্থ্যসেবার দিকে নিয়ে যেতে পারে আমাদের এ গবেষণা।”
গবেষণায় মানবদেহের যেসব জিন খুঁজে পাওয়া গেছে তা খতিয়ে দেখার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন বলে মনে করেন গবেষকরা।
“আমাদের গবেষণার বিভিন্ন ফলাফলে স্নায়বিক সিস্টেম ও দেহের বাকি অংশের মধ্যে একটি যোগসূত্র থাকার প্রমাণ মিলেছে,” বলেছেন লিউ।
“এসব সম্পর্ক আরও ভালভাবে খুঁজে দেখা ও বোঝার মাধ্যমে পিরিয়ডের ব্যথা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন এমন লাখ লাখ মানুষের জন্য আমরা একটা সত্যিকারের পার্থক্য গড়ে তুলতে পারি।”