দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়ার পোতোসি শহরের কাছে থাকা সেরো রিকো পর্বতমালা এক সময় ছিল বিভিন্ন আকরিকের ভাণ্ডার। মূলত রুপাই ছিল বেশি। এর ভাণ্ডার প্রায় শেষ হয়ে এলেও এখনও সেই খনিতে টিন, দস্তা এবং সীসা পাওয়া যায়।
সেরো রিকো পর্বতমালা, বলিভিয়াOpens in a new window
সেরো রিকোর উচ্চতা ১৫ হাজার ফুট। মূল পর্বত ছাড়াও আশপাশে বেশ কয়েকটি ছোট-বড় পর্বত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ধীরে ধীরে মাটির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে এই ধনী পর্বতমালা।
সেরো রিকোর পতনের কারণ
**সেরো রিকোর পতনের জন্য মূলত তিনটি কারণ দায়ী:
খনির অত্যাচার: ষোড়শ শতকে স্পেন পোতোসি শহর দখল করার পর সেরো রিকোর খনিতে স্থানীয় মানুষদের শ্রমিক বানানো হয়। স্পেনীয় মালিকদের অত্যাচারের শিকার হয়ে বহু শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
অতিরিক্ত খনন: রুপার অফুরন্ত ভাণ্ডার দেখে স্পেনীয়রা সেরো রিকো থেকে অতিরিক্ত খনন করে। এর ফলে পাহাড়ের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
খনিতে কর্মরত শ্রমিকদের মৃত্যুহার: সেরো রিকোর খনিতে কর্মরত শ্রমিকদের মৃত্যুহার অন্যান্য খনিতে কর্মরত শ্রমিকদের থেকে তুলনামূলক ভাবে বেশি। ধস নেমে মৃত্যুর পাশাপাশি সিলিকোসিস নামে ফুসফুসের এক রোগে আক্রান্ত হয়েও অনেকে মারা যান।
সেরো রিকোর বর্তমান অবস্থা
**বর্তমানে সেরো রিকো থেকে টিন, দস্তা এবং সীসা খনন করা হয়। ২০২১ সালে বলিভিয়ার এই খনি থেকে ১৩০ কোটি ডলারের দস্তা বিক্রি হয়েছে।
খনিতে প্রবেশের আগে মূল সুড়ঙ্গের মুখে রাখা এক মূর্তিতে পুজো করেন শ্রমিকেরা। এই মূর্তিটি ‘এল থিয়ো’ বা ‘আঙ্কল’-এর। খনির মুখে থাকা শিংওয়ালা ওই মূর্তি কোকা পাতা, মদ এবং লামার রক্ত দিয়ে পুজো করেন স্থানীয়রা। মনে করা হয়, খনি শ্রমিকদের ভয় দেখানোর জন্য সেই ‘শয়তানের মূর্তি’ সেখানে বসানো হয়েছিল।
সেরো রিকোর ভবিষ্যৎ
**বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেরো রিকো ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে। ২০১১ সালে সেরো রিকোতে একটি ‘সিঙ্কহোল’ দেখা গিয়েছিল। সমীক্ষা বলছে, সেরো রিকো পর্বত প্রতি বছর কয়েক সেন্টিমিটার করে ডুবে যাচ্ছে।
২০১৪ সালে সেরো রিকো এবং পোতোসি শহরকে বিপন্ন এলাকার তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে বলিভিয়ার খনি সংস্থা ‘কোমিবল’কেই সেরো রিকোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সেরো রিকোর গল্প হল ধনী পর্বতমালার পতনের গল্প। এক সময় বিশ্বের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা এই পর্বতমালা এখন ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।