বিশেষ: বিক্রি করতেন খবরের কাগজ, অবশেষে হয়ে উঠলেন IAS অফিসার! কীভাবে মিলল সাফল্য?

মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছিলেন আব্দুল নাসের। মা থাকা সত্ত্বেও অনাথ আশ্রমে কাটে তাঁর শৈশব। ছোটবেলা থেকেই অভাব-অনটনের সঙ্গে লড়াই করে বড় হয়েছেন তিনি। হোটেলে কাজ করা থেকে শুরু করে বাড়ি বাড়ি খবরের কাগজ বিলি—সবই করেছেন পেটের টানে। জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ—জীবনের প্রতিটি অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞান অর্জন করেছেন। অবশেষে সাফল্য ধরা দিয়েছে তাঁর জীবনে। কিন্তু আজও অতীতের কষ্টের দিনগুলির কথা মনে পড়লে অশ্রুসজল হয়ে ওঠে কোল্লামের প্রাক্তন জেলাশাসক ও বর্তমান সরকারের রাজস্ব দফতরের অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি আব্দুল নাসারের চোখ।

দেশের বহু যুবক-যুবতীর মতো আব্দুল নাসারেরও একটি সুন্দর সরকারি চাকরি করার স্বপ্ন ছিল, বিশেষ করে UPSC-র প্রতি তাঁর বিশেষ আকর্ষণ ছিল। কিন্তু অন্যদের মতো এক লাফে জেলাশাসকের পদ পাননি তিনি। এর পিছনে রয়েছে দীর্ঘ সংগ্রাম ও কষ্টের ইতিহাস।

শৈশবের কঠিন দিনগুলি:

কেরলের কন্নুর জেলার থালাসেরি এলাকায় জন্ম আব্দুল নাসারের। খুব অল্প বয়সেই বাবাকে হারান তিনি। সংসারে নেমে আসে চরম অর্থকষ্ট। অসহায় মা পাঁচ ভাইবোনকে নিয়ে অকূল পাথারে পড়েন। চরম অভাবের মুখে সংসারের হাল ধরতে মা বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ শুরু করেন এবং সন্তানদের স্থানীয় একটি অনাথাশ্রমে রেখে আসেন। অন্যান্য অনাথ শিশুদের সঙ্গেই বড় হতে থাকেন আব্দুল নাসের।

পড়াশোনার পাশাপাশি কর্মজীবন:

মাত্র দশ বছর বয়স থেকেই কর্মজীবনে প্রবেশ করেন আব্দুল নাসের। সংসারের অভাব মেটাতে ছোট কাঁধেই তুলে নেন বড় দায়িত্ব। কিন্তু কষ্টের মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে যান তিনি। অল্প বয়সেই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে দারিদ্র্য থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হল শিক্ষা।

একটি সরকারি কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় একটি হোটেলে কাজ করতেন তিনি। প্রতিদিন সকালে বাড়ি বাড়ি খবরের কাগজও বিলি করতেন। একদিকে সংসারের অভাব, অন্যদিকে পড়াশোনার চাপ—সব মিলিয়ে এক কঠিন জীবন ছিল তাঁর।

সাফল্যের পথে:

১৯৯৪ সালে প্রথম সাফল্যের মুখ দেখেন আব্দুল নাসের। কেরলের স্বাস্থ্য দফতরে সরকারি কর্মী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তারপর থেকেই তাঁর জীবনের গতিপথ পরিবর্তিত হতে শুরু করে। একের পর এক পদোন্নতি পেয়ে একসময় তিনি জেলাশাসকের পদে উন্নীত হন। ২০২২ সালে তাঁর জীবনে আরও এক নতুন মোড় আসে। পদোন্নতি পেয়ে তিনি সরকারের রাজস্ব বিভাগের অ্যাডিশনাল সেক্রেটারির দায়িত্ব পান।

কিন্তু সাফল্যের শিখরে পৌঁছেও আব্দুল নাসের তাঁর অতীতের কষ্টের দিনগুলিকে ভোলেননি। তাঁর জীবন কাহিনী আজও বহু মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা। দারিদ্র্য ও প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে কিভাবে সাফল্য অর্জন করা যায়, আব্দুল নাসের তার জ্বলন্ত উদাহরণ।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy