ফ্ল্যাট বেঁচে সিঙ্গাড়া-সমুচার ব্যবসা; ৫ বছরে ১০০ কোটি টাকার মালিক এই দম্পতি! – ২০১৬ সালের এপ্রিলের একরাত। নব দম্পতি নিধি ও শিখর সিং প্রথমবারের মত ব্যা”’ঙ্গালুরুতে তাঁদের ফ্ল্যাটে রাত কা’টান। ব্যস,পরদিনই ফ্ল্যাটটা বেঁচে দিয়ে তাঁরা শুরু করলেন নিজেদের স্টার্ট-আপ – ওক্ন স্টোভ ফুডওয়ার্কস প্রাইভেট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির জন্য বড় একটা আধুনিক রান্নাঘর খুব জরুরী ছিল।সেজন্যই দরকার হয় বড় অংকের টাকার। তাই, নিজেদের ফ্ল্যাট বিক্রি করে দেওয়ার ঝুঁকি সেদিন নিতে হয়েছিল তাঁদের। নিধি বলেন, ‘নিজেদের ব্যবহারের জন্য আমর’’া ফ্ল্যাটটাকিনেছিলাম। ওটা বিক্রি করে দিয়ে নিজেদের ব্যবসায় বিনিয়োগ করি। সেটা নিয়ে আমা’দের আ’’ক্ষেপ নেই। তবে, ভাড়া বাসায় বন্ধু-বান্ধবদের ডাকতে পারতাম নাসময়টা সহজ ছিল না।’ স্বপ্নের সূচনাঃ নিধি আর শিখরের পরিচয় হয় কুরুক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে।
দু’জনই ছিলেন বায়োটেকনোলজি’র শিক্ষার্থী। নিধি ওই সময় বুঝতে পারেন, বায়োটেক নয় মা’র্কেটিং ও সেলসেই তার বেশি আগ্রহ। তাই গ্র্যাজুয়েশনের পর তিনি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটা ফার্মা প্রতিষ্ঠানে বিজনেস ডেভেলপমেন্টের চাকরি নেন তিনি। শিখর অবশ্য তখনো বায়োটেক ভালবাসতেন। তিনি হায়দারাবাদ গিয়ে স্কুল অব লাইফ সাইন্স থেকে মাস্টার্স করেন। তখনই শিখর বুঝতে পারেন, ভারতীয় স্ট্রিট ফুডে হাইজিন নিয়ন্ত্রন করার কোনো বালাই নেই, একই কথা পিজ্জা কিংবা বার্গারের মত খাবার গু’’লোর ক্ষেত্রেও সত্যি। তখনই নিধি তাকে সমুচা-সি”’ঙ্গাড়ার দোকান দেওয়ার আইডিয়া দেন। সেই থেকে শুরু।
২০০৯ সালে শিখর বায়োকনে একজন বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দেন। তবে, ‘সমুচা-সি”’ঙ্গাড়ার দোকান’ দেওয়ার স্বপ্নটা তখনও তাদের মনে ছিল। কিন্তু, এত কিছু রেখে সমুচা-সি”’ঙ্গাড়া কেন? শিখর বলেন, ‘আমা’দের দেশের প্রতিটা অঞ্চলের আলাদা আলাদা বিশেষত্ব আছে। তবে, সমুচা-সি”’ঙ্গাড়ারটা ভারতের সব এলাকাতেই চলে। সবাই জানে এটা কি!’ ২০১৫ সালে গিয়ে অবশেষে এই সমুচা-সি”’ঙ্গাড়া নিয়েই ব্যবসা করার সি’’দ্ধান্ত নেন এই জুটি। শুরু হয় ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর। সেদিনই শিখর চাকরি ছেড়ে দেন। শুরু হল লড়াইঃ নিধি অবশ্য চাকরী ছাড়েননি। তিনি বাসা থেকেই অফিসেই কাজ করতেন। দু’জন ছোট্ট একটা রান্নাঘর ভাড়া করেন। কয়েকজন কুক নিয়োগ দেন। চার মাসের মধ্যে সমুচা-সি”’ঙ্গাড়া নিয়ে ভিন্ন কিছু শুরু করেন।
একটা ব্যাপার শুরু থেকেই এই দুই দম্পতি মেনেছেন,সেটা হল ব্যবসার একম শুরুতেই ‘ঝড়’ তুলতে হবে। এমন অ’ভিনব কিছু করতে হবে যাতে করে সবাই হু’মর’’ি খেয়ে পড়ে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁরা ছোট একটা আউটলেট খোলেন। প্রথম দু’মাস যাওয়ার পর থেকেই দৈনিক অন্তত ৫০০ টি করে সমুচার অর্ডার আসা শুরু হয়। দামটা নিয়ন্ত্রনের মধ্যেইরাখার চেষ্টা করতেন তারা। দু’টো আলু সমুচার দাম রাখেন ২০ রুপি। চিকেন মাখানি সমুচা, দুই পিসের দাম আসে ৫৫ টাকা। একবার জার্মান একটা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সাথে শিখরের বৈঠক হয়।তখন দৈনিদ আট’’ হাজারটি করে সমুচার অর্ডার দেওয়া শুরু করে এই প্রতিষ্ঠানটি। তখনই আসলে ফ্ল্যাট বেঁচে বড় একটা রান্নাঘর কেনার প্রয়োজন পরে তাঁদের।
ভাগ্যিস সেদিন সেই ঝুঁকিটা নিতে পেরেছিলেন এই দম্পতি। তাই তো ‘সমুচা সিং’ আজ আকাশ ছুঁয়েছে। শিখর বলেন, ‘আমর’’া আমা’দের সীমাব’’দ্ধতাকেই শক্তিতে রূপান্তরিত করেছি।’ সমুচা সিং-য়ের এখন নিজস্ব একটা স্বনিয়ন্ত্রিত রান্নাঘর আছে। এর ফলে এখন সহজেইদৈনিক ১০ হাজারটি সমুচা সহজেই বানিয়ে ফেলা যায়। আলু কিংবা চিকেন দিয়ে তো বটেই, তাঁদের রান্নাঘরে চকলেট সমুচাও তৈরি হয়। সাফল্যের চূড়ায়ঃ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী শিখরজানালেন, সমুচা সিং এখন প্রতি বছর ২০ কোটি রুপি লাভ করে। আর এই ৫ বছরে তাদের আয় হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি ভারতীয় রুপি।
ব্যা”’ঙ্গালুরুতে ২০১৯ সালে তাঁর দৈনিক ৫০ হাজার করে সমুচা প্রতিদিন তৈরি করে বিক্রি করেছিলেন। পুনে ও হায়দারাবাদে নতুন ব্রাঞ্চ খোলেছেন তারা। স্বপ্ন দেখেন একদিন ভারতের প্রতিটা বড় শহরে এই ‘সমুচা সিং’কে ছড়িয়ে দেওয়ার।২০১৮ সাল থেকে তাঁরা বাজারে এনেছেন ফ্রোজেন সমুচাও। তবে, গু’’ণগত মানে ছাড় দিতে নারাজ উদ্যোক্তারা। নিধি বলেন, ‘আমর’’া গু’’ণগত মানটা যতটা সম্ভব ধরে রাখতে চাই। প্রত্যেকে যেন সব সময় একই স্বাদ পায় সেটাই আমা’দের চেষ্টা।’ ইওরস্টোরি অবলম্বনে।