দুই সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ নারী। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত সহকর্মীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে পুলিশ যা উদ্ধার করল, তা শুনলে শিউরে উঠবেন যেকোনো মানুষ। ওই নারীর খোঁজে নেমে তার বাড়ি যায় পুলিশ। ঘরে প্রবেশ করতেই আঁতকে ওঠেন পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা দেখতে পান নারীর দেহাংশ। আর সেই দেহাংশ ঘিরে পরম আনন্দে নিজেদের রসনা তৃপ্তি করছে ২০টি বেড়াল। রাশিয়ার রোস্তভ অঞ্চলের বাতায়স্কে এই ঘটনাটি ঘটেছে।
তবে কোথা থেকে ঘরে ঢুকল এই বিড়ালগুলো? তদন্তে চালিয়ে পুলিশ পরক্ষণেই জানতে পারে যে, বাইরের থেকে নয়। এই বিড়ালগুলো ছিল ঘরের ভিতরেও। ওই মাংসাশী বিড়ালগুলো মৃত নারীরই পোষা।
প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশের অনুমান, অসুস্থতার কারণে ঘরেই মৃত্যু হয় এই নারীর। মালিকের অনুপস্থিতিতে খাবার জোটেনি বিড়ালগুলোর। বেশ কিছু সময় ধরে অভুক্ত থাকার পর নিজের মালিকের মৃতদেহকেই খাদ্য হিসেবে বেছে নেয় এই বিড়ালগুলো।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই নারীর অধীনে কাজ করা এক কর্মচারী পুলিশকে জানায় যে মালিককে বেশ কিছু দিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এর পরই তদন্তে নামে পুলিশ। এরই মধ্যে ওই নারীর আধ খাওয়া মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
এই খবরটি প্রকাশ্যে আসার পর এক প্রাণী বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বিড়ালগুলো অনেকদিন ধরে অভুক্ত ছিল। ঘরে কোনো খাবার ছিল না। তাই এই পরিস্থিতিতে তারা আর কী খাবে? যা হাতের সামনে পেয়েছে তাই খেয়েছে।’
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিড়ালগুলোর মধ্যে কিছু বিড়ালকে ইতিমধ্যেই প্রায় তিন হাজার টাকার বিনিময়ে নতুন মালিকদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। তবে এই বিড়ালগুলো যে মালিকেরই রক্ত এবং মাংসের স্বাদ পেয়েছে, তা নিয়ে নতুন মালিকদের জানানো হয়েছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
পুলিশ জানিয়েছে, এই বিড়ালগুলো মেইন কুন প্রজাতির। মেইন কুন প্রজাতির বিড়ালগুলো সাধারণ বিড়ালের থেকে আকারে বেশ কিছুটা বড় এবং শক্তিশালী হয়।
আমেরিকার মেইন রাজ্যে এই বিশেষ ধরনের বিড়াল পাওয়া যায় বলেই এদের নাম মেইন কুন। জনপ্রিয়তার নিরিখে এই বিড়ালগুলোর স্থান তিন নম্বরে। তবে এই বিশেষ প্রজাতির বিড়ালগুলো তাদের শান্ত স্বভাবের জন্যই বেশি পরিচিত।
গবেষণায় আগেই দেখা গিয়েছে, বিড়ালের মালিক যদি কোনো কারণবশত বাড়িতেই মারা যান, তা হলে পোষা বিড়ালগুলোর মালিকের মৃতদেহ খেয়ে নেওয়ার প্রবণতা থাকে।
আমেরিকার কলোরাডোতে পচনশীল মৃতদেহ খাওয়ার জন্য একটি গবেষণা কেন্দ্রে দুটি বিড়াল প্রবেশ করে। তবে এই ঘটনার পর নতুন করে গবেষণা শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। আর গবেষণার ফলাফলও মেলে চমকে দেওয়ার মতো।
গবেষণায় উঠে আসে যে, পচনশীল মৃতদেহের হাত, বুক এবং কাঁধের মাংস খেতে বেশি পছন্দ করে বিড়ালেরা।
আশ্চর্যজনকভাবে, এই গবেষণা চলাকালীন প্রতিটি বিড়াল নিজেদের পছন্দসই মৃতদেহ বেছে নেয়। তার পরই খাওয়া শুরু করে। তবে এক জনের পছন্দ করা মৃতদেহে ভাগ বসাতে আসেনি অন্য কোনো বিড়াল।
এই গবেষকদের মধ্যে অন্যতম প্রধান গবেষক সারা গার্সিয়ার দাবি, বিড়ালেরা সাধারণত খুব বেছে বেছে খাবার খায়। বিড়াল একবার পছন্দের খাবার খুঁজে পেলে, তারা বারবার সেটাই খেতে চায়।
২০১৩ সালে, সাউদাম্পটনের কাছে বাড়িতে অসুস্থতার কারণে মারা যাওয়া এক নারীর শরীরের সমস্ত অংশ একইভাবে তার পোষা তিনটি বেড়াল খেয়ে নেয়।
আমেরিকাতেও বছর তিরিশের এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর পোষ্য ১০টি বেড়াল তার মাথা, ঘাড় এবং হাতের বেশ কিছু অংশ খেয়ে নেয়।
এই ধরনের একাধিক ঘটনার নজির থাকা সত্ত্বেও ২০২০ সালে এই গবেষণার আগে পর্যন্ত বিষয়টির উপর বিশেষ নজর দেওয়া হয়নি।