বিশেষ: তাজমহলের রহস্যঘেরা ২২টি কক্ষ কেন বন্ধ, বন্ধ ঘরের রহস্যই বা কি?

অপরুপ সুন্দরতম নিদর্শন, ভালবাসার চির অম্লান প্রতীক তাজমহল। তাজমহল বাহির থেকে দেখতে যতটা সুন্দর ঠিক ততটাই এর ভিতরের অংশ রহস্যজনক। আজ পর্যন্ত তাজমহলের সেটাই আমরা দেখছি, যেটা আমাদের দেখতে দেয়া হচ্ছে। ইতিহাসের পাতায় এমনও কিছু কথা ঘুরপাক খাচ্ছে যে, তাজমহলের ভিতরে অনেক গুপ্ত ঘর ও গুপ্ত দরজা আছে, যার রহস্য সরকার কখনো প্রকাশ করতে দেয় না। কেন সরকার তাজমহলের রহস্য আমাদের থেকে গোপন করতে চায়। সবই জানাব আজকে।

১৯৭৪ সালে এক আমেরিকান পর্যটক মারভিন মিলস ভারতবর্ষে আসেন তাজমহল দেখতে। তিনি তাজমহলের চারপাশে ঘুরে গহুরে অনেক ছবি তোলেন আর ছবি তুলতে গিয়ে তাজমহলের পিছন দিকে একটি কাঠের দরজা দেখতে পান। দরজা টি ছিল তাজমহলের বেজ অর্থাৎ ভিতের সাথে লাগানো। দরজাটি চিল তালাবদ্ধ। যার কারনে মিলস এর ভিতরে কি আছে তা দেখতে পারেন নি। তাই তিনি দরজা থেকে একটি কাঠের টুকরা নিয়ে আমেরিকায় চলে যান।

যখন তিনি কাঠের টুকরা টির কার্বন ডেটিং টেস্ট করেন অর্থাৎ কাঠের টুকরার বয়স জানার পরীক্ষা করেন। তখন তিনি অবাক হয়ে যান। ঐ কাঠের টুকরা টি ছিল ৬৫০ বছর আগের পুরানো। যেখানে তাজমহল মাত্র ৪০০ বছর আগে তৈরি, সেখানে ৬৫০ বছর ধরে দরজাটি এখানে আছে, কিভাবে তা সম্ভব ? এই নিষয় টি সবার সামনে আসতেই পত্রিকায় বিভিন্ন লেখালেখি শুর হয়, কানা ঘুষা শুরু হয় বিভিন্ন মহলে রহস্যময় এই দরজা নিয়ে। এমনকি খোদ ভারতেও বেশ হই চই পরে যায়। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো সরকার এই রহস্য উদঘাটন না করে তার পরিবর্তে কিছু দিনের মধ্যেই দরজাটি সরিয়ে জায়গাটিকে সিল গালা করে দেয়।

আপনি যদি ইতিহাস নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করেন, তাহলেই তাজমহলের এই বন্ধ দরজার রহস্য জানতে পারবেন। শাহজাহানের দরবারে থাকা লেখক আব্দুল হামিদ লাহোরি শাহজাহানের জীবনী লিখেছিলেন বাদশাহনামা নামক বইটিতে। সেখানে তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, তাজমহলের নিচে থাকা বেজ বা ভীত শাহজাহান তৈরি করেন নি। তিনি এই জায়গাটি কিনেছিলেন রাজা জয় সিংয়ের কাছ থেকে।

এখন কথা হলো তাজমহলের পাশে এত জায়গা থাকতে কেন এই জায়গাটিকেই বাছাই করা হলো মমতাজের কবর বানানোর জন্য। অনেক ইতিহাসবিদগন মনে করেন, তাজমহল তৈরি করার জন্য যে খরচ ধরা হয়েছিল সেই সময়ে, তাতেই শাহজাহানের রাজ ভান্ডার প্রায় খালি হয়ে যাবে। সেই মুহুর্তে নতুন করে বেজ বানিয়ে তার উপর তাজমহল নির্মান করা ছিলো বহু কষ্টসাধ্যের ব্যাপার।

এই বিষয়ে আপনি আরো বেশি নিশ্চিত হতে পারবেন, যখন আপনি তাজমহলকে ড্রোন থেকে দেখবেন। একটু লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবেন, তাজমহলের আশেপাশে থাকা সমস্ত স্থপত্যগুলোই লাল পাথরে তৈরি। কিন্তু এর চুড়াগুলি শ্বেত পাথরে তৈরি। যা কারিগরের সু-চতুর চিন্তা ভাবনার প্রমান।

এখন আমরা যেদিক থেকে তাজমহলে প্রবেশ করি, সেটা আসলে তাজমহলের পেছনের দিক। তাজমহল নির্মান হওয়ার পর শাহজাহান এবং তার দরবারীরা যমুনা নদীর রাস্তায় তাজমহলে আসতেন। তাহলে তারা তাজমহলে প্রবেশ করতেন কিভাবে? তারা কি ঐ কাঠের দরজা দিয়েই প্রবেশ করতেন? নাকি এই দরজা দিয়ে নিচে যাওয়া যেত কোন গুপ্ত ঘরে।

তাজমহলের চারিদিকে ঘুরলে দেখা যায় অনেকগুলো ভেন্টিলেটর রয়েছে, যেগুলো হাওয়া চলাচল করার জন্য ব্যবহার করা হয়। তাহলে এটা নিশ্চিত বলা যায় যে, তাজমহলের নিচে নিশ্চয়ই কোন গুপ্ত ঘর আছে, যার জন্যই এই ভেন্টিলেটর গুলো বানানো হয়েছে।

প্রধান সৌধের ডানদিকে একটু পিছনেই রয়েছে একটি বন্ধ দরজা। যা সম্পুর্নভাবে সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, শাহজাহান ও মমতাজের কবর তো তাজমহলের উপরের অংশে অবস্থিত। তাহলে এই দরজাটি এখানে কইভাবে এলো ? কেন বানানো হয়েছে এই দরজাটি ?

এই রহস্য জানার জন্য আমাদের যেতে হবে তাজমহল থেকে দু মাইল দূরে, আগ্রা ফোর্টে। যেখানে শাহজাহানের ঘরের পাশেই একটা বন্ধ সুরঙ্গ আছে এবং সেটা ভেতর থেকে তালা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তাহলে কি শাহজাহান এই সুরঙ্গে দিয়ে তাজমহলে যেতেন মমতাজের সমাধীর পাশে সময় কাটানোর জন্য।

তাজমহলে মমতাজের সমাধীর পাশে একটি গুপ্ত ঘরও আছে। যেটি তালাবন্ধ এবং সরকারি নির্দেষে এর ছবি তোলাও বারন। তাজমহলের এই রহস্য সামনে আসতেই অনেক বিশেষজ্ঞ দাবি করেন, তাজমহলের নিচে যে ২২ টি কক্ষ রয়েছে তাতে নিশ্চয়ই হিন্দুদের কোন দেব দেবীর মন্দির বা মূর্তি রয়েছে। তবে এই বিষয়ে তারা কোন যথাযজ্ঞ যুক্তি দিতে পারেন নি। তবে এটা নিশ্চিত বলা যায় যে, এর নিচে যাই থাকুক না কেন। তা সামনে আসলে খুব সমস্যায় পরবে সরকার। তাই বিষয়টিকে রহস্যে রাখাই ভাল।

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy