সুকণ্ঠী শ্যামাকে বলা হয় জাতীয় পাখি দোয়েলের কাকাতো ভাই। দুজনে একই ‘গণ’ (পরিবার) এর পাখি। বৈশিষ্ট্যেও আছে অনেক মিল। দুজনের বৈজ্ঞানিক নামের সঙ্গেই যুক্ত ‘Copsychus’ শব্দটি।
বন্য পথে হাঁটতে গিয়ে বহুবার শ্যামার ‘ওই-অ-লী-নাউ… ওই-অ-লী-নাউ…’ ডাকের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠার সুযোগ হয়েছে অনেকেরই। এ ডাক এতটা তীব্র নয়, তবে মনোযোগের সঙ্গে লক্ষ্য করলে কান এড়িয়ে যেতে পারে না এ সুমিষ্ট ডাক।
দোয়েলের বৈজ্ঞানিক নাম Copsychus saularis এবং শ্যামার বৈজ্ঞানিক নাম Copsychus malabaricus। নামের প্রথম অংশটা এক।
শ্যামা বৈজ্ঞানিক নামের প্রথম অংশটি ‘কপসাইকাস’ হলো পাখির ‘গণ’ অর্থাৎ পরিবারের নাম এবং দ্বিতীয় অংশটি ‘মালাবারিকাস’ হলো পাখিটির প্রজাতির নাম। এভাবেই ল্যাটিন শব্দের এ বৈজ্ঞানিক নাম দিয়ে পরিবার ও প্রজাতিকে খুব সহজে চেনা যায়।
বাংলাদেশের বন-জঙ্গল, পাহাড়-পর্বত, গ্রাম-শহরসহ দেশের সর্বত্র দোয়েল পাওয়া গেলেও শ্যামা কিন্তু শুধু বনেই পাওয়া যায়। এরা একেবারে বনের পাখি। নিজের এলাকার গাছের ডালে বসে এলাকাটিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারাদিন ধরে গান করতে গাইতে থাকে। তবে তার গানের স্বর মৃদু। স্বর শুনে বনে হাঁটার সময় আমরা বুঝতে পারি এটি শ্যামার ডাক। আবার কিছু দূর অগ্রসর হলে আরেকটি এলাকায় অপর একটি শ্যামা ডাকে।
শ্যামার দৈর্ঘ্য ২৫ সেন্টিমিটার এবং ওজন ৩৩ গ্রাম। এদের পিঠ কালো, পেট লাল ও কোমর সাদা। পুরুষের মাথা, বুক, পিট, ডানা ও লেজ চকচকে কালো এবং পিট ঘন লাল। স্ত্রীর বর্ণ কিছুটা ফিকে।
এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন কীটপতঙ্গ ও পোকা। এগুলো আমাদের বনে এখন কমে গেছে বলে শ্যামাদের অবস্থায় কিছুটা বিপন্ন বলে জানান পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক।
পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রজাতির দোয়েল ও শ্যামা পাওয়া গেলেও আমাদের দেশে মাত্র একটি প্রজাতির দোয়েল এবং একটি প্রজাতির শ্যামা পাওয়া যায়। দেশে যেহেতু একটাই প্রজাতির দোয়েল ও শ্যামা রয়েছে; তাই মুখে বলার সময় তাদের শুধু ‘দোয়েল’ এবং শুধু ‘শ্যামা’ বললেই চলে। কিন্তু লিখতে হলে পুরো নামটা লিখতে হয়।