বিশেষ: খবরের কাগজ বিক্রি করতেন একসময়, এখন তিনিই হয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী!

প্রত্যেক মানুষের জীবনে নানা প্রতিকূলতা রয়েছে। সেই প্রতিকূলতা কাটিয়ে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোতেই জীবনের সাফল্য লুকিয়ে থাকে। যেমন সানা মারিন। ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনি সে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী।

খুব ছোট বয়েসে সানার মদ্যপ বাবার সঙ্গে মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। সেই বিচ্ছেদের পর নিদারুণ আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েন তারা। এরপর তার মা এক নারীর সঙ্গে একত্রবাস করতে শুরু করেন। ফলে এক নারী পরিবেষ্টিত পরিবারের মধ্যে বড় হয়ে ওঠেন সানা।

নিদারুণ আর্থিক সংকটের মধ্যে তাকে খুব ছোট বয়স থেকে টাকা রোজগারের জন্য বেরিয়ে পড়তে হয়। এক বেকারিতে কাজ নেন তিনি। এছাড়া আংশিক সময়ের জন্য সংবাদপত্রও বিক্রি করতেন।

পড়াশোনায় খুব আহামরি ছিলেন না সানা। দক্ষিণ ফিনল্যান্ডের উপকণ্ঠে একটি ছোট্ট শহরের স্কুলে পড়তেন। সেই স্কুলের এক শিক্ষিকা পাসি কেরভিনেন জানিয়েছেন, সানা ‘গড়পড়তা’ ছাত্রীদের মতো ছিলেন। উন্নতির জন্য তাকে মাঝে মাঝে বাড়ির কাজ দেওয়া হতো।

২০০৪ সালে ১৯ বছর বয়সে সানা স্নাতক পাস করেন। অতঃপর, ট্যাম্পারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। সেখানে তিনি প্রশাসনিক বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বছরে তার সঙ্গে পরিচয় হয় পেশাদার ফুটবলার মার্কাস রাইকোনেনের। তারপর প্রেম। ১৬ বছর ধরে প্রেমের পর ২০২০ সালে তারা বিয়ে করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময়ই রাজনীতিতে যুক্ত হন সানা। মনে হয়, পরিশ্রম করলে তার নিজের জীবন নয় অন্যের জীবনেও পরিবর্তন আনা সম্ভব। বিশেষ করে নারীদের জীবনে। তিনি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দলে যোগ দেন এবং ২০০৬ সালে সদস্যপদ লাভ করেন।

২০১০ সালে সানা এই দলটির ভাইস-প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি ওই পদে থাকেন। তবে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল পরাজয় দিয়ে। ২২ বছর বয়সে তিনি ট্যাম্পারে সিটি কাউন্সিলের নির্বাচনে লড়েন। সেই নির্বাচনে তিনি হেরে যান।

কিন্তু ২০১২ সালে পরবর্তী নির্বাচনে জয়ী হন সানা এবং কাউন্সিল চেয়ারম্যান পদে উন্নীত হন। ওই পদে তিনি ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি ফিনল্যান্ডের পার্লামেন্টের সাংসদ হন। ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার জিতে তিনি পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রী হন।

এরপর মাত্র ৩৫ বছর বয়সে পাঁচ জোটের নেতা হিসাবে ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হন সানা। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই তিনি নিজের সন্তানকে স্তন্যদানের ছবি পোস্ট করেন ইনস্টাগ্রামে। যা নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। আবার পাস্তার রেসিপিও দেন।

সানার আমলেই বাড়ানো হয়েছে পিতৃ-মাতৃত্বের ছুটি। স্কুল ছেড়ে যাওয়া বয়সও বাড়িয়ে ১৮ করা হয়েছে। কোভিডের সময় যেভাবে তিনি সংকট সামলেছেন, তা প্রশংসিত হয়েছে।

তবে রাশিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্ব নিয়ে টানাপড়েনের জেরে সানা বিশ্ব রাজনীতিতে আলোচিত ব্যক্তি। সম্প্রতি তিনি ন্যাটোয় যুক্ত হওয়ারও উদ্যোগ নিয়েছেন। সে কারণে রাশিয়া যদি হামলা চালায় তবে পাশে থাকবে সুইডেন। তাদের সঙ্গে একটি চুক্তিও হয়েছে সম্প্রতি।

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy