বিশেষ: কচ্ছপের অভিশাপে জন্ম থেকেই যারা লিলিপুট, জেনেনিন সেই গ্রামের নাম

রূপকথার লিলিপুট আর গালিভারসের গল্পের মতোই চীনের ইয়াংসি গ্রামে জন্ম নেওয়া মানুষগুলো প্রায় ৪০ শতাংশ বামন। এই বামন মানুষদের কিন্তু একত্রে বসবাসের উদ্দেশ্যে গ্রামে আস্তানা গড়ে তুলেনি। তাদের জন্মই হয়েছে এখানে অর্থাৎ জন্মগতভাবেই সবার দৈহিক গঠন এমন।

লোককথা অনুসারে, এই গ্রামের বাসিন্দারা মনে করেন কচ্ছপের অভিশাপে তারা জন্ম থেকে খর্বাকৃতির। অনেক আগে এই গ্রামে নাকি ওয়াং নামে এক ভদ্রলোক বসবাস করতেন। একবার তিনি অদ্ভুত পাবিশিষ্ট একটি কালো রঙের কচ্ছপ দেখতে পান। ওয়াং এর কাছ থেকে অদ্ভুত কচ্ছপের খবর পেয়ে সবাই এটিকে দেখার জন্য ভিড় করে।

গ্রামের কিছু মানুষ তখন কচ্ছপটির প্রাণ রক্ষার জন্য এটিকে ছেড়ে দিতে বলেছিল। আবার কিছু মানুষ বলেছিল ছেড়ে দেওয়ার কোনো মানেই হয় না। তার চেয়ে ভালো একে মেরে সবাই মিলে ভুরিভোজ করা হোক। শেষ পর্যন্ত এই অদ্ভুত পাবিশিষ্ট কচ্ছপটির উপর ভয়ংকর অত্যাচার করে গরম আগুনে ঝলসে খাওয়া হয়। এই ঘটনার পর থেকেই নাকি গ্রামে যেই শিশু জন্মাতে থাকে তারা সবাই খর্বাকৃতির মানুষের জন্ম গ্রহন করে।

ইয়াংসি গ্রামবাসীর অভিমত সেদিন সেই কচ্ছপটির উপর যে নির্মম আচরণ করা হয়েছিল তার অভিশাপেই নাকি এখানকার মানুষজন বামন হয়ে জন্ম নিচ্ছে। বর্তমানে চীনের ইয়াংসি গ্রামটি বিশ্ববাসীর কাছে খাটো মানুষের দেশ হিসেবে পরিচিত হয়েছে। এই গ্রামের বামনদের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতা তিন ফুট ১০ ইঞ্চি। আর সবচেয়ে কম উচ্চতা হলো মাত্র দুই ফোট এক ইঞ্চি, যা অদ্ভুতভাবে বংশ পরম্পরায় চলে আসছে।

এই ঘটনাটি কয়েক যুগ ধরে চলে আসলেও ১৯৫১ সালের দিকে প্রথমে সবার নজরে আসে। তখন নড়েচড়ে বসেন চীন সরকার। এখানকার মানুষজনের উচ্চতা কম হওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে চীন সরকার বিশেষজ্ঞ কমিটি নিয়োগ করেন। তবে সেই কমিটি যুক্তিযুক্ত কারণ জনসম্মুখে উপস্থাপন করতে পারেনি।

পরবর্তীতে বিজ্ঞানী এবং অন্যান্য অনুসন্ধানকারীরা গ্রামটি পরিদর্শনে যান। তারা তদন্ত করে এমন অস্বাভাবিক ঘটনার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। তাদের ধারণা ছিল ঐ এলাকার মাটিতে হয়তো অতিরিক্ত মাত্রায় পারদের উপস্থিতি রয়েছে, যার ক্ষতিকর প্রভাবে ঐ গ্রামের মানুষদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য এমন হয়েছে। কিন্তু মাটি পরীক্ষা করে এমন কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি গ্রামের পানি, ফসলসহ প্রত্যেকটি বামন মানুষকে আলাদাভাবে পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু সেরকম কোনো প্রমাণও মেলেনি। তাই বিজ্ঞানীদের কাছে ধোঁয়াশাই রয়ে গেল পুরো ব্যাপারটি। জানা গেল না প্রকৃত কারণ।

শারীরিক অক্ষমতার জন্য ইয়াংসি গ্রামের খাটো মানুষগুলো দীর্ঘদিন যাবৎ প্রবল কষ্টে দিন কাটিয়েছেন। যদিও বর্তমানে চীন সরকার তাদেরকে সহায়তা করার ব্যবস্থা নিয়েছে। পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার পাশাপাশি এখানে একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। সেই পার্কে মূলত ঐ এলাকার বামন মানুষেরাই কাজ করেন।

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy