বিশেষ: ইংরেজরাই ভেঙেছিল ভারতের উৎপাদন শিল্পের কোমর, কত টাকা লুঠ করেছিল তারা?

বছর দুয়েক আগেই বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলির তালিকায় ব্রিটেনকে পেছনে ফেলে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে ভারত, যেখানে ব্রিটেন এখন ষষ্ঠ স্থানে। তবে, দুই দেশের মধ্যে এই ব্যবধান আরও বেশি হতে পারত, যদি না ব্রিটিশ শাসকেরা প্রায় ২০০ বছর ধরে ভারতকে লুটেপুটে খেত। সম্প্রতি, ‘অক্সফাম ইন্টারন্যাশনাল’ নামক একটি সমানাধিকার গোষ্ঠীর সর্বশেষ আন্তর্জাতিক বৈষম্য প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতি বছর ‘ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম’-এর বার্ষিক সভার প্রথম দিন এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। এবারের রিপোর্টটির শিরোনাম ‘টেকার্স, নট মেকার্স’ (Takers, Not Makers), যার বাংলা অর্থ ‘নির্মাতা নয়, লুন্ঠনকারী’। এই প্রতিবেদন অনুসারে, ১৭৬৫ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে, অর্থাৎ এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ব্রিটেন ভারত থেকে যে সম্পদ লুণ্ঠন করেছে, তার আজকের বাজারমূল্য প্রায় ৬৪.৮২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫৫,৮৯,৩৬,২১০ কোটি টাকারও বেশি)।

অক্সফামের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই লুণ্ঠিত অর্থের প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ ৩৩.৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ২৯,১৩,০৪,৭২৬ কোটি টাকারও বেশি) জমা হয়েছিল ব্রিটেনের সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ মানুষের পকেটে। অক্সফাম জানিয়েছে, এই পরিমাণ অর্থ যদি ৫০ পাউন্ডের ব্রিটিশ নোটে হিসাব করা হয়, তাহলে সেই নোট দিয়ে পুরো লন্ডন শহরকে চারবার ঢেকে দেওয়া যেত।

অক্সফামের এই রিপোর্টে বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্রও উল্লেখ করা হয়েছে। এই গবেষণাপত্রগুলিতে দাবি করা হয়েছে যে, আধুনিক বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলি আসলে উপনিবেশবাদেরই সৃষ্টি। অক্সফাম আরও বলেছে, ‘ঐতিহাসিক সময়ে ঔপনিবেশিক শক্তির প্রতিষ্ঠিত অসাম্য এবং লুণ্ঠন আধুনিক বিশ্বকে নতুন রূপ দিয়েছে। এর ফলস্বরূপ, একটি গভীর অসম বিশ্ব তৈরি হয়েছে, যা বর্ণবাদের ভিত্তিতে বিভক্ত। এমন একটি বিশ্ব, যা মূলত গ্লোবাল নর্থের ধনী ব্যক্তিদের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য গ্লোবাল সাউথ থেকে পরিকল্পিতভাবে সম্পদ আহরণ করে চলেছে।’

অক্সফামের মতে, ধনী ব্যক্তিদের পাশাপাশি এই উপনিবেশবাদের অন্যতম প্রধান সুবিধাভোগী ছিল ব্রিটেনে সদ্য গড়ে ওঠা মধ্যবিত্ত শ্রেণি। ভারত থেকে লুণ্ঠিত সম্পদের ৩২ শতাংশ পেয়েছিল এই নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণি। আধুনিক বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলির জন্ম ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো প্রতিষ্ঠান থেকে, যাদের ঔপনিবেশিক অপরাধের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

পরিসংখ্যানের মাধ্যমে অক্সফাম আরও দেখিয়েছে যে, ব্রিটিশদের লুণ্ঠন কিভাবে ভারতের উৎপাদন শিল্পের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছিল। ১৭৫০ সালে, গোটা বিশ্বের উৎপাদন শিল্পের প্রায় ২৫ শতাংশ ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের দখলে। কিন্তু ১৯০০ সালের মধ্যে তা কমে মাত্র ২ শতাংশে এসে দাঁড়ায়। এই তথ্যই প্রমাণ করে কিভাবে ব্রিটিশ শাসনের ফলে ভারতীয় অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy