সবজি হিসেবে লাউ অনেক জনপ্রিয়। তবে এখন এটি সারাবছর চাষ করা হয়। এটির চাষ সাধারণত বসতবাড়ির আশপাশে করা হয়। লাউয়ের পাতা ও ডগা শাক হিসেবে খাওয়া যায়। শুধু লাউ নয় এর শাকও অনেক পুষ্টিকর।
আমাদের দেশে লাউয়ের অনেক জাত রয়েছে। লাউয়ের আকার-আকৃতি এবং গাছের লতানোর পরিমাণ থেকেও জাতগুলোর পাথর্ক্য বোঝা যায়।
আমাদের দেশি উন্নত কিছু লাউয়ের জাত রয়েছে। এসব জাতের গাছ গাঢ় সবুজ থেকে হালকা সবুজ। বারি লাউ-১ এ জাতটি বাছাইয়ের মাধ্যমে উদ্ভাবন করে ১৯৯৬ সালে সর্বত্র চাষাবাদের জন্য অনুমোদন করা হয়। এর পাতা সবুজ ও নরম। পুরুষ এবং স্ত্রী ফুল যথাক্রমে চারা রোপণের ৪০-৪৫ দিন এবং ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে ফুটে। এর ফল হালকা সবুজ, লম্বা ৪০-৫০ সেন্টিমিটার। প্রতি ফলের ওজন ১.৫-২.০ কেজি। প্রতি গাছে ১০-১২টি ফল ধরে। এ জাতটি সারা বছরই চাষ করা যায়।
এছাড়া রয়েছে হাইব্রিড লাউ। এটি গোলাকার বা লম্বা আকৃতির হয়ে থাকে। লাউ প্রায় সব ধরনের মাটিতে জন্মে। তবে প্রধানত দো-আঁশ থেকে এঁটেল দো-আঁশ মাটি লাউ চাষের জন্য উত্তম। লাউ সাধারণত একটি লতানো উদ্ভিদ ফলে বছরের অধিকাংশ সময় চারা লাগিয়ে এ ফসল উৎপাদন করা যায়।
লাউ চাষের জন্য পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করাই ভালো। এতে বীজের খরচ কম পড়ে। পলিথিন ব্যাগে চারা উৎপাদন করে রোপণ করলে হেক্টর প্রতি ৮০০-১০০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। তবে মাটি দিয়ে মাদা তৈরি করেও চারা উৎপাদন করা যায়। প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বপন করতে হবে। ৪-৫ দিনের মধ্যেই বীজ অঙ্কুরিত হবে।
আমাদের দেশে প্রধানত বসত বাড়ির আশপাশে যেমন গোয়াল ঘরের কিনারায় বা পুকুর পাড়ে ২-৩টি লাউ গাছ লাগানো হয়। বেশি পরিমাণ জমিতে লাউয়ের চাষ করতে হলে প্রথমে জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে প্রস্তুত করতে হবে। লাউ চাষের জন্য ২×২ মিটার দূরত্বে প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বোনা উচিত। রবি মৌসুমে লাউ মাচাবিহীন অবস্থায় চাষ করা যায়। তবে মাচায় ফলন বেশি হয়। এছাড়া জলে ভাসমান কচুরিপানার স্তূপে মাটি দিয়ে বীজ বুনেও সেখানে লাউ জন্মানো যেতে পারে।
চারা একটু বড় হলে প্রতি মাদায় ২টি করে চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে। মাটি নিড়ানি দিয়ে আলগা করে ঝুরঝুরা করতে হবে। লাউগাছে প্রয়োজনীয় পরিমাণ জল প্রতিদিন দিতে হবে।
গাছ যখন ১৫-২০ সেন্টিমিটার বড় হয় তখন গাছের গোড়ার পাশে বাঁশের ডগা কঞ্চিসহ মাটিতে পুঁতে দিতে হয়।
এ সবজিতে রেডপামকিন বিটল পোকার আক্রমণ হতে পারে। এ পোকা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধরে ধরে মেরে ফেলতে হবে। এছাড়া কিছু প্রজাতির ঘাসের মাধ্যমে লাউয়ের ‘মোজাইক ভাইরাস’ রোগ হতে পারে।
বারি লাউ-১ এর চারা রোপণের ৬০-৭০ দিনের মধ্যে প্রথম ফল সংগ্রহ করা হয়। ফল তোলা বা সংগ্রহ করার উপযুক্ত পর্যায় হলো- ফলের গায়ে প্রচুর শুং এর উপস্থিতি থাকবে। ফলের গায়ে নখ দিয়ে চাপ দিলে খুব সহজেই নখ ডেবে যাবে পরাগায়নের ১২-১৫ দিন পর ফল সংগ্রহের উপযোগী হয়।