বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বিজয় নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের মতো ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার (২ নভেম্বর) কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। অন্যদিকে একই দিন সারা দেশে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী গণপ্রতিরোধ’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আবার জাতীয় পার্টির ডাকা সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। এমন পরিস্থিতিতে আজ শুক্রবার (১ নভেম্বর) জাপা কার্যালয়ের সামনে তেমন কোনও উত্তেজনা দেখা যায়নি। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও তেমন জোরদার করা হয়নি।
যদিও পুলিশ বলছে, ছুটির দিন হওয়ায় আজ (শুক্রবার) কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই। তাই আজ পোশাক পরা পুলিশের সংখ্যা মোতায়েন কম ছিল। তবে সাদা পোশাকে চারপাশে পুলিশ মোতায়েন ছিল। শৃঙ্খলার স্বার্থে পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত জাতীয় পার্টি কার্যালয়ের সামনে প্রতিদিনই পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া কর্মসূচির অনুমতি পেলে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে নিরাপত্তা দেবে পুলিশ।’
শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাজধানীর বিকালে সরেজমিন রাজধানীর বিজয় নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেখা যায়, অগ্নিসংযোগ করা ওই কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। সামনে কয়েক ডজন মানুষের ভিড়। কার্যালয়ের সামনে পুলিশের একটি পিকআপ দাঁড়ানো। আর এক দল পুলিশ সেখানে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
বিজয় নগরে জাতীয় পার্টির প্রধান কার্যালয়ে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনার বিষয়ে ডিএমপির রমনা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঘটনার পর পর আমাদের বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সেখানে মোতায়েন করা হয়। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও মোতায়েন ছিল। এসময় এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, খুব এলোমেলো ছিল। চারদিক থেকে ইটপাটকেল ছোড়া হয়েছে। পরে আমরা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি। ঘটনার পর থেকে সেখানে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
হামলা ও অগ্নিসংযোগের জন্য কোনও মামলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা হলে রমনা থানায় দায়ের হতো। এ বিষয়ে কোনও মামলা হয়েছে বলে আমার নলেজে নেই।
এদিকে আগামীকাল (২ নভেম্বর) সারা দেশে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ফ্যাসিবাদবিরোধী গণপ্রতিরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কর্মসূচির অনুমতি পেলে এসব বিষয় নিয়ে নতুন করে যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সেজন্য বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে ও নিরাপত্তা বাড়ানো হবে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এদিকে কার্যালয় পরিদর্শনে এসে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ সোলাইমান সামি বলেন, দেশে একটি সুন্দর সরকার গঠন হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকার চলে গেছে। এখন আপনারা যদি পার্টি অফিস দখল করেন, অগ্নিসংযোগ করেন; তাহলে কিন্তু আইনের ব্যত্যয় ঘটে। কারণ রাষ্ট্রের দায়িত্ব রয়েছে এসব রক্ষা করার। জাতীয় পার্টিতে কোনও মাস্তান নেই, সন্ত্রাসী নেই। জাতীয় পার্টি ক্লিন ইমেজের পরিচ্ছন্ন দল।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রতিদিনই রাজধানীতে স্বাভাবিক নিরাপত্তা থাকে। এছাড়া যদি নির্দিষ্ট কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়, সে হিসাব করেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়। যদি রাজনৈতিক কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে সেভাবেই নিরাপত্তাব্যবস্থা সাজানো হবে।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র শ্রমিক জনতার ব্যানারে’। ওই কর্মসূচি ঘিরে দুপক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার কিছুক্ষণ পর জাপা অফিসে আগুন দেওয়া হয়। ঘটনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সন্ধ্যা ৭টায় ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ‘জাতীয় বেইমান এই জাতীয় পার্টি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিজয় নগরে আমাদের ভাইদের পিটিয়েছে, অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। এবার এই জাতীয় বেইমানদের উৎখাত নিশ্চিত।’
এর কিছুক্ষণ পর হাসনাত আবদুল্লাহ আরেকটি পোস্টে লেখেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে রাত সাড়ে ৮টায় মিছিল নিয়ে তারা বিজয় নগরে যাবেন। জাতীয় বেইমানদের নিশ্চিহ্ন করতে হবে।’
এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিলে দলের নেতাকর্মীরা পালিয়ে যান। তখন হামলাকারীরা জাতীয় পার্টির অফিসের দেয়ালে ‘জাতীয় টয়লেট’, ‘এখানে ময়লা ফেলুন’ লিখে দিয়ে আসেন।