
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলাফল কী হবে তা নির্ভর করছে সেভারোদোনেৎস্ক শহরের ওপর। তিনি বলেন, কিছু ক্ষেত্রে ডনবাসের ভাগ্যে কী জুটবে তা ওই শহরেই নির্ধারিত হচ্ছে।
এমন এক সময় তিনি একথা বললেন যখন রুশ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর সঙ্গে ওই শিল্পাঞ্চলে যুদ্ধ চলছে। তিনি দাবি করেছেন, তার সৈন্যরা শত্রুবাহিনীর বড় ধরনের ক্ষতি করতে পেরেছে।
তবে ওই এলাকায় থাকা ইউক্রেনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীকে রুশ বাহিনী শহরের ভেতরে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে।
লুহানস্ক অঞ্চলের গভর্নর সের্হি হাইদাই বলেছেন, রাশিয়ার গোলা নিক্ষেপ এবং বিমান হামলা বাড়ানোর পর বিশেষ বাহিনী পিছু হটেছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, আমাদের বাহিনী এখন আবার শুধুমাত্র শহরের বাইরের অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে লড়াই এখনও চলছে, আমাদের বাহিনী সেভারোদোনেৎস্ককে রক্ষা করছে।
তিনি আরও বলেন, এটা বলা অসম্ভব যে রুশ সেনারা শহরটিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছে।গভর্নর বলেন, প্রায় ১৫ হাজার বেসামরিক লোক সেভারোদোনেৎস্ক এবং নিকটবর্তী শহর লিসিচানস্কে রয়েছেন।
বুধবার রাশিয়া দাবি করেছে যে, ডনবাসে জনশক্তি, অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের ক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়েছে ইউক্রেন।
মার্চের শেষের দিকে যখন রুশ সেনারা রাজধানী কিয়েভের আশপাশ থেকে পিছু হটে, তখন যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু পূর্ব ইউক্রেনের দিকে সরে যায়। ২০১৪-১৫ সালের যুদ্ধের পর থেকেই ডনবাসের বড় অংশ রাশিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করেছেন যে, রাশিয়ার আগ্রাসনের পরিণতি বিশ্বের জন্য খারাপ হচ্ছে। প্রায় ১.৬ বিলিয়ন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা, শক্তি এবং অর্থের ওপর যুদ্ধের প্রভাব পদ্ধতিগত, গুরুতর এবং দ্রুততর হয়ে উঠছে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো-আইওয়ালা সতর্ক করে বলেছেন, কোন বিরতি ছাড়াই খাদ্য সংকট বছরের পর বছর স্থায়ী হতে পারে।
তিনি বলেন, আফ্রিকান দেশগুলো বিশেষ করে গম ও সারের ঘাটতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
লাখ লাখ টন শস্য গুদাম এবং ইউক্রেনীয় বন্দরে অপেক্ষায় আছে, যুদ্ধের কারণে সেগুলো রপ্তানি করা যাচ্ছে না।
বৈশ্বিক ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা, কোম্পানিগুলোর ব্যাপক প্রস্থান এবং রপ্তানিতে পতনের কারণে রাশিয়ার অর্থনীতি বছরের শেষ নাগাদ ১৫ শতাংশ কমতে পারে এবং ২০২৩ সাল নাগাদ আরও তিন শতাংশ কমবে।
ইন্সটিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স সতর্ক করে দিয়েছে, যদি ইউরোপ সম্পূর্ণভাবে রুশ জ্বালানি থেকে নিজেদের গুটিয়ে আনে তাহলে পরিসংখ্যান আরও খারাপ হতে পারে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ চালায় এই বলে যে, দেশটিকে নিরস্ত্রীকরণ করতে চায় তারা। তবে তাদের এই দাবি ব্যাপকভাবে প্রত্যাখ্যান হয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে উভয় পক্ষের হাজার হাজার যোদ্ধাসহ কমপক্ষে ৪ হাজার ২৫৩ জন বেসামরিক লোক নিহত এবং ৫ হাজার ১৪১ জন আহত হয়েছে। এছাড়া বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ।